ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জনগণনা শেষ হলেই ছিটমহলের বাংলাদেশী পুনর্বাসনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৮ জুলাই ২০১৫

জনগণনা শেষ হলেই ছিটমহলের বাংলাদেশী পুনর্বাসনের উদ্যোগ

তৌহিদুর রহমান ॥ ছিটমহলের বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত করেনি সরকার। ছিটমহলে জনগণনা শেষ হলেই বাংলাদেশী নাগরিকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। জনগণনা শেষে বাংলাদেশে আসতে আগ্রহীদের তালিকার তৈরির পরে সে অনুযায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে সরকার। অপরদিকে ছিটমহলের ভারতীয় নাগরিকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দেশটি অস্থায়ী আশ্রয় শিবির তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, গত সোমবার থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহলে জনগণনা জরিপ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের ৭৫টি যৌথ গ্রুপ এ জরিপ সম্পন্ন করার জন্য কাজ করছে। আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত জরিপ চলবে। জনগণনা জরিপ শেষ হলেই বাংলাদেশে কত নাগরিক থাকতে বা ভারতে কত নাগরিক যেতে চান সে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এরপরেই তাদেরকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে সরকার। ছিটমহলের বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত করেনি সরকার। কোন প্রক্রিয়ায় পুনর্বাসন হবে সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। বাংলাদেশে কত জন লোক আসতে চান, সেটা জানার পরেই পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আর সেটি জনগণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জানা সম্ভব নয়। তবে একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী ছিটমহলের বাসিন্দাদের শুরুতে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হতে পারে। এরপর তাদেরকে সরকার ধীরে ধীরে স্থায়ী পুনর্বাসন করবে। সূত্র জানায়, ছিটমহলে বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী নাগরিকদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার থেকে ইতোমধ্যেই দুইশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সে কারণে অর্থের কোন ঘাটতি নেই। আরও অর্থের প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা করবে সরকার। তবে জনগণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে না সরকার। বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী ব্যক্তি ও পরিবারের সংখ্যা নিশ্চিত হয়েই সে অনুযায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। ভারতের ভিতরে বাংলাদেশী ছিটমহলের বাসিন্দাদের সংখ্যা অল্প। সে তুলনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ছিটমহলের বাসিন্দাদের সংখ্যা বেশি। এসব বিবেচনায় নিয়ে ভারত আগেভাগেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। কেননা ছিটমহল বিনিময় হওয়ার ফলে ভারতের বাসিন্দাদের সংখ্যাই বেশি হবে। সেজন্য ভারত সরকার থেকে তাদের পুনর্বাসনের জন্য তিন হাজার ৮ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দও রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অবকাঠামো তৈরিতে খরচ হবে ৭৭৫ কোটি। বাকি দুই হাজার ২৩৪ কোটি টাকা ছিটমহলের অধিবাসীদের যারা ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে ভারতে যেতে চাইবেন, তাদের পুনর্বাসনে খরচ করবে ভারত। বাংলাদেশ ও ভারত-দুই দেশেরই ছিটমহলগুলো মুসলমান অধ্যুষিত। এর আগে ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর প্রটোকল বাস্তবায়নের ফলে ভারতের অংশে পরিণত হলে ওই ছিটমহলের বাসিন্দাদের সবাই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ছিটমহলগুলো যেগুলো চুক্তি ও প্রটোকল বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অংশে পরিণত হবে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে দু’দেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলে এক সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল। এতে ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে ১৪ হাজার ২১১ জন লোক গণনা করা হয়। অপরদিকে বাংলাদেশে ভারতের ১১১টি ছিটমহলে ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন লোক গণনা করা হয়। তবে সমীক্ষার পর কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। অনেকেই এর মধ্যে মারা গেছে। আবার জন্ম হয়েছে অনেক শিশুর। তাই এখন নতুন করে জনগণনা জরিপ শুরু হয়েছে। এ জরিপ সম্পন্ন হলেই কোন দেশে কত লোক নাগরিক হতে আগ্রহী সেটা জানা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দাদের কোচবিহারে অস্থায়ী শিবিরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এসব অস্থায়ী শিবিরে প্রতি পরিবারকে দুইশ’ বর্গফুট আয়তনের ঘর দেয়া হবে। ৩১শে জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় সম্পূর্ণ হওয়ার পরে ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নথিভুক্ত করে অস্থায়ী শিবিরে রাখা হবে। অস্থায়ী শিবিরের জন্য দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ ও মাথাভাঙায় তিনটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে দুইশ’ বর্গফুট জমিতে টিনের চালা দিয়ে বাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। তবে দু’বছরের মধ্যেই এদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন দেয়ার জন্য আবাসন তৈরি করে জায়গা দেয়া হবে। সেখানে তাদের টিকাকরণও করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরও কঠোর ভাবে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে ভারত। উল্লেখ্য, গত ৭ মে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহু প্রতিক্ষীত স্থল সীমান্ত বিল ভারতের লোকসভায় পাস হয়। এর আগে বিলটি ভারতের রাজ্যসভা ও মন্ত্রিসভায় পাস করানো হয়। এ বিল পাসের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সীমান্তের প্রায় ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়। এরপর গত ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় আসার পরে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি বিল বিনিময় হয়। এখন সীমান্ত বিল চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলছে।
×