ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেখতে যেন সাপের ফণা, কষ দুধের মতো সাদা

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৭ জুলাই ২০১৫

দেখতে যেন সাপের ফণা, কষ দুধের মতো সাদা

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ ফণিমনসা বা তেশিরা সিজ গাছ বা দুধমনসা একজাতীয় বিরল প্রজাতির ক্যাকটাস। স্থূল আকৃতির কা-বিশিষ্ট, পাতা ও শাখাহীন কাঁটাযুক্ত যে উদ্ভিদ জন্মায় তাকে ক্যাকটাস বলা হয়। এই উদ্ভিদ প্রধানত মরুভূমি এবং শুষ্ক অঞ্চলের গাছ। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকা, ম্যাডাগাস্কার এবং শ্রীলঙ্কাতে এই গাছ দেখা যায়। এদের পাতা যথেষ্ট পুরু। এই জাতের মধ্যে আরও একপ্রকার গাছ আছে যাকে ফণিমনসা বা নারা সন্তান বলা হয়। এর কোন পাতা হয় না। কা- ও শাখাগুলো শাসালো, কা-গুলো চ্যাপ্টা কণ্টকে পরিপূর্ণ, দেখতে সাপের ফণার মতো। শুষ্ক অঞ্চলে যে সব গাছ বেঁচে থাকতে পারে না, ক্যাকটাস সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে উঠতে পারে। এসব গাছ তাদের স্থূল কা-ের মধ্যে জল সঞ্চিত রাখতে পারে। আর জলের অপচয় রোধে এদের পাতা সূচালো কাঁটায় পরিণত হয়। বনের তৃষ্ণার্ত প্রাণীরা কাঁটার ভয়ে ক্যাকটাসের কা-ের জলভাঙারে মুখ দেয় না। স্থূল সবুজ কা-ের সাহায্যে এরা পাতার স্বাভাবিক কাজ বজায় রাখতে পারে। দুধমনসা বা সিজ গাছ পত্রযুক্ত। প্রচুর পাতা আছে, পাতাগুলো সাপের ফণার মতো। এর শাখাগুলো চ্যাপ্টা নয়। শাখাগুলো কণ্টকবিশিষ্ট চৌশিরা গাছ। কামরাঙ্গার মতো পলতোলা। পাতাগুলো নরম। পাথরকুচি বা পাথরশিলার পাতার মতো একটু বাঁকালে সহজেই ভেঙ্গে যায়। এ গাছের যেকোন অঙ্গে একটু কাটলে বা পাতা ছিঁড়লে দুধের মতো সাদা রস বের হয়। রসের স্বাদ তিক্ত। ছবির এ গাছটির বয়স আনুমানিক বিশ বছর। কা-ের বেড় সাড়ে ৩ ফুট। গাছটির উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। পাতার দৈর্ঘ্য ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ আড়াই ইঞ্চি, কা-টি ১২ফুট এবং কা-ের ওপর বাঁকানো মানুষের হাতের মতো কাঁটাযুক্ত অসংখ্য শাখা আছে। শাখার ওপর পাতা দেখতে বিরাট এক ঝুপরি ছাতার মতো, খুব আকর্ষণীয় গাছ। এই গাছের ফুল হয় না, ফল হয় না, বংশবিস্তার করে গাছের গোড়া থেকে। এ গাছের ডাল কেটে রোপণ করলেও গাছ বেঁচে থাকে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে এ গাছের পাতা ঝরে যায়। এ বিরল প্রজাতির সিজ বা দুধমনসা গাছটি গফরগাঁওয়ে অত্যন্ত যতœসহকারে রেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রীচিত্তরঞ্জন ঘোষ বলেন, বাড়িতে মহাদেবের মন্দির আছে সে এখানে শীতলা, মহাদেব ও অন্যান্য দেবদেবীর পুজো করে। শীতলা পুজোতেও এই গাছটি প্রয়োজন পড়ে, বসন্ত রোগেও এ গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গফরগাঁও উপজেলার ৫নং ওয়ার্ডে ষোলহাসিয়া গ্রামের প-িতপাড়া এলাকায় শ্রী চিত্তরঞ্জন ঘোষ বিক্রমপুর থেকে এই গাছটি এনে ২০ বছর পূর্বে এখানে রোপণ করেছিল। এ গাছটির রস ও বাঁকল থেকে কবিরাজরা নানা প্রকার ওষুধ তৈরি করে। শরীরে কোন ফোঁড়া হলে এ গাছের কা- বা পাতা কেটে যে সাদা রস বের হয় তা ঐ ফোঁড়ার ওপর প্রলেপ দিলে অতি সহজে এই ফোঁড়া বসে যায়, ফোঁড়া পাকে না বা কোন যন্ত্রণাও হয় না। প্রবীণ শিক্ষক সত্যরঞ্জন লৌহ (৮৫) বলেন, কোন কোন সময় দেখা যায় একজাতীয় চিকন প্রায় ২ ফুট লম্বা সাপ গাছে বিচরণ করছে। সাপটির নাম গ্রাম্য ভাষায় জিংলা পোড়া বা লাউডুগা। তবে এই সাপগুলো কখনও কাউকে দংশন করেনি। মহাভারত থেকে জানা যায়, শ্রী শৌনক জিজ্ঞাসা করলেন- সূত নন্দন উগ্রশ্রবা! আপনি আমাকে আস্তিক ঋষির কথা বলুন, যিনি জনসেজয়ের সর্পযজ্ঞে নাগরাজ তক্ষককে রক্ষা করেছিলেন। আপনার মুখনিঃসৃত ভাষা অত্যন্ত মধুর এবং শ্রুতিনন্দন। আপনি আপনার পিতার উপযুক্ত পুত্র। তার মতো করে আমাদের সব বলুন। উগ্রশ্রবা বললেন, আয়স্মান! আমি আমার পিতার কাছে আস্তিকের কথা শুনেছি, আপনাদের সেই কথা বলছি। সত্যযুগে প্রজাপতি দক্ষের দুই কন্যা ছিল তাদের নাম কদ্রু এবং বিনতা। কশ্যপ ঋষির সঙ্গে তাদের বিবাহ হয়। কশ্যপ পতœীদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বললেন- ‘তোমরা যা চাও বল’ কদ্রু বললেন, আমার যেন এক হাজার তেজস্রী নাগপুত্র হয়। যাদের আকৃতি থাকবে এ সিজ গাছের পত্র ও শাখার আকৃতি। বিনতা বললেন- তেজস্বিতা বল ও বিক্রমে কদ্রুর পুত্রদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আমার যেন দুটি পুত্র হয়। কশ্যপ বললেন, তাই হবে। দুজনেই খুব খুশি হলেন। গর্ভাবস্থায় সাবধানে থাকতে বলে কশ্যপ ঋষি বনে গমন করলেন। যথাসময়ে কদ্রু এক হাজার এবং বিনতা দুটি ডিম্বকোষ প্রসব করলেন। ধাত্রীরা সেগুলো উষ্ণ পাত্রে যতœ করে রাখল। ৫০০ বছর পূর্ণ হলে কদ্রুর হাজার পুত্র জন্ম নিল কিন্তু বিনতার পুত্র ডিম্বকোষ থেকে বের হলো না। বিনতা অসহিষ্ণু হয়ে একটি ডিম হাত দিয়ে ভেঙ্গে ফেললেন। সেই ডিমটিতে শিশুর অর্ধ শরীর পরিপুষ্ট হলেও নিচের অধাংশ পুষ্ট হয়নি। নবজাত শিশু ক্রোধ পরবশ হয়ে মাকে অভিশাপ দিল- ‘মা! তুমি লোভ বশতঃ আমার অর্ধপুষ্ট শরীরকে ডিম থেকে বের করেছ। তাই তুমি ৫০০ বছর ধরে তোমার সতীনের, যাকে তুমি হিংসা কর তার দাসী হয়ে থাকবে। যদি তুমি আমার মতো অন্য ডিমটি ভেঙ্গে ওই শিশুটির অঙ্গহানি বা বিকলাঙ্গ না করা হয় তাহলে সেই তোমাকে এ অভিশাপ থেকে মুক্ত করবে। সত্যযুগের পরে কশ্যপ মনির স্ত্রী কদ্রু মনসা নাম ধরে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন।
×