ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ওই ‘কাটা মু-ু’র ভিডিও প্রকাশ করে জানান দিতে চেয়েছিল একিউআইএস

কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির শিরশ্চেদের ছক কষেছিল জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৭ জুলাই ২০১৫

কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির শিরশ্চেদের ছক কষেছিল জঙ্গীরা

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনসহ সব জঙ্গীদের একটি প্লাটফরমে একত্রিত করার তৎপরতা শুরু করে ভারতীয় উপমহাদেশের আল কায়েদা (একিউআইএস)। সিরিয়া-ইরাকভিত্তিক আইএস সদর দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ, বিশ্বব্যাপী তোলপাড় ও আলোড়ন সৃষ্টি করতে সংগঠনটির ভয়ঙ্কর আত্মপ্রকাশের জানান দিতে বাংলাদেশেও তারা শিরñেদ প্রথা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে। ঈদের পর বড় ধরনের নাশকতার অংশ হিসেবে কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পরিবারকে অপহরণ করে গোপন জায়গায় নিয়ে গিয়ে শিরñেদ করে তার ভিডিওতে প্রদর্শনের নীল নক্সার ছক কষে একিউআইএস। একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক হুজি নেতা মুফতি মাইনুল ইসলাম এবং একিউআইএসের উপদেষ্টা মাওলানা জাফর আমিনসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার ও হোয়াটসএ্যাপের মাধ্যমে ‘দাওয়াতি কার্যক্রম’ শুরু করে একিউআইএস। কয়েক মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকের শিরñেদ করে ইন্টারনেটে তার ভিডিও প্রকাশ করে দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির পরিচয়ে অভিহিত হয়ে দেশ-বিদেশের জঙ্গী গোষ্ঠীতে টানতে এবং ভীতি প্রদর্শনে সক্ষম হয় আইএস। ইরাক সিরিয়ায় আইএস যেভাবে পাশ্চাত্য ও আমেরিকানদের শিরñেদ করে ভিডিওতে তার দৃশ্য প্রকাশ করেছে সেভাবে বাংলাদেশেও মুন্ডুকাটার দৃশ্য প্রকাশ করার পরিকল্পনা করে তারা। চলতি মাসে প্রকাশ করা ভিডিওতে ২৫ সিরীয় সেনার মুন্ডুকাটা দৃশ্য প্রকাশ করেছে আইএস। এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শতাধিক নাগরিক ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে খবর পেয়েছে গোয়েন্দারা। পাকিস্তানের জঙ্গী শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়ে আইএস জঙ্গীরা বাংলাদেশে ঢুকেছে এমন খবরও পেয়েছে তারা। আইএস জঙ্গীরা বাংলাদেশে ঢুকে তৈরি করছে নাশকতার ভয়াবহ ছক। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা যাতে সিরিয়াভিত্তিক আইএস জঙ্গী গোষ্ঠীর দলে যেতে না পারে সেজন্য নজরদারিসহ অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, একিউআইএসের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও সাবেক হুজি নেতা মুফতি মাইনুল ইসলাম এবং একিউআইএসের উপদেষ্টা মাওলানা জাফর আমিনসহ ধৃত ১২ জঙ্গী গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, এখান থেকে সদস্য সংগ্রহ করে পাকিস্তান হয়ে সিরিয়া ও ইরাকে ঢুকে লড়াই করাও ছিল তাদের লক্ষ্য। এজন্য আইএসের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় দেশীয় জঙ্গী সংগঠন হুজি, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম ও হিযবুত তাহরীরসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠনের জঙ্গীদের মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগানো হচ্ছে। গ্রেফতারকৃত একিউআইএসের ১২ জঙ্গীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে দেশব্যাপী বোমা হামলাসহ নাশকতার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, খোদ রাজধানী ঢাকা থেকেই গত এক বছরে ইসলামিক স্টেটের অনুগামী কয়েক জঙ্গী সদস্য গ্রেফতার হয়েছে, যারা বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার হবে। এর মধ্যে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশনে সামিউন রহমান ইবনে হামদান নামে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন হামদান। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করাও উদ্দেশ্য ছিল তার। এছাড়া ইসলামিক স্টেটের জন্য অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকা থেকে হিফজুর রহমান নামের ২২ বছর বয়সী আরেক জঙ্গী সদস্যকে আটক করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সিলেটের শাহজালাল উপশহর এলাকার সরকারী তিব্বিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিফজুর, ওই সময়ই রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও রমনা এলাকা থেকে আসিফ আদনান ও ফজলে এলাহী তানজিল আটক হন। আদনান ও তানজিল উগ্রপন্থী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য হলেও আইএসের হয়ে তারা সে সময় কাজ করছিলেন। গ্রেফতারকৃতরা সবাই আইএস জঙ্গী বলে তাদের দাবি। গ্রেফতারকৃত আইএস জঙ্গীরা বলেছেন, আইএস জঙ্গীরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেভাবে নাশকতা চালিয়ে অবস্থান নিয়েছে, বাংলাদেশেও তার অনুকরণে নাশকতা চালাতে তৎপর এবং আইএস জঙ্গী সদস্য সংখ্যা বাড়াতে তারা মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে জিহাদে অংশ নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অন্যান্য জঙ্গী সংগঠন যেভাবে জামায়াত-শিবিরের সহযোগিতা পেয়েছে, আইএস সংগঠনটিকেও সেভাবেই সংগঠিত করতে সহায়তা করা হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের আল কায়েদা ও আইএস শাখা একিউআইএসের প্রধান সমন্বয়ক ও উপদেষ্টা ধরা পড়ার পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের আইএস জঙ্গীরা পাকিস্তান ও তুরষ্ক হয়ে সিরিয়াতে যুদ্ধে যাচ্ছে এমন খবরও রয়েছে তাদের কাছে। ইরাক সিরিয়াভিত্তিক আইএস জঙ্গী দলে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী, উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ও জঙ্গীরা যাতে যেতে না পারে সেজন্য আইএসবিরোধী অভিযান পরিচালনা, নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
×