অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রমজান উপলক্ষে কয়েক ধাপ বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে যেসব পণ্য রমজানে বেশি প্রয়োজন, সেসব পণ্যের দাম অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের দিন যত গড়াচ্ছে, পণ্যের দাম যেন ততই বাড়ছে। এর লাগাম টেনে ধরার যেন কেউ নেই। ফলে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ পর রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজান শুরুর আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা যেমন প্রতি পণ্যে ১০ থেকে ২৫ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে তার থেকে আরও দুই ধাপে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীরা এই দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিনিয়ত একে অপরকে দুষছেন।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে মূল্য বেশি হওয়ায় বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরকারের বেধে দেয়া দরের চেয়ে বেশি নিচ্ছেন না বলে জানাচ্ছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বেশি আদায় করেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়, মুসুর ডাল ১২০ টাকা, খেসারি ডাল ৬০ টাকা, তেল ৯৭ থেকে ১০২ টাকা, চিনি ৪৫ টাকা, খেজুর খোলা ১৫০ টাকা, আর মানভেদে প্যাকেট ২৫০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া খুচরা বাজারে ধনিয়া পাতা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে এবং টমেটো-বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সবজি এবং মাছ-মাংস। খিলগাঁও বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আনিস বলেন, ‘আমরা পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনি। তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে।’
তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাধারণ মানুষকে বার বার আশ্বস্ত করে আসছেন পণ্য মূল্য নিয়ে। তিনি বলেন, ‘মানুষের চাহিদার তুলনায় পণ্য যথেষ্ট পরিমাণ আছে।
বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই। ফলে পণ্য মূল্য মানুষের হাতের নাগালেই আছে।’ তবে মন্ত্রীর এই দাবির পরও বাজারের চিত্র দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ সম্পর্কে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব কাজল বলেন, ‘পাইকারি বাজার যে দর ধরে দেয়, তার থেকে সর্বোচ্চ ৪ টাকা বেশি দরে আমরা বিক্রি করি। তবে পাইকারদের একটা সিন্ডিকেট আছে, যার কারণে দাম বাড়ে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যে দাম বেঁধে দেয়, সে দামে আমরা কিনে আনতেই পারি না। তাহলে আমরা কীভাবে কম দামে বিক্রি করব?’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মিয়া চাঁন বলেন, ‘আমাদের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটা দাম ঠিক করে দেয়া হয়। এ জন্য পাইকাররা কত দামে পণ্য বিক্রি করবেন, সে অনুযায়ী বিক্রি হয়। বেশি দামে নয়।’ স্বস্তি নেই মাছ-মাংস এবং সবজির বাজারেও। রমজান শুরুর আগেই সবকিছুতেই ১০ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছিল খুচরা ব্যবসায়ীরা। এখন তার থেকে আরও একধাপ বাড়িয়েছে সবজির দাম।
বেগুন-টমেটো রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগেও ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া বেড়েছে পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, ধনিয়া পাতা, মরিচ, পেপে, শসাসহ সব ধরনের সবজির দাম। ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি, যা রমজান শুরুর আগে ৮০ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেনা পড়ে বেশি, তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: