ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী বছর শ্রীলঙ্কায় সমঝোতা ‍স্মারক সই

সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে এবার মাঠে বিমসটেক

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ জুলাই ২০১৫

সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে এবার মাঠে বিমসটেক

তৌহিদুর রহমান ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে এবার নেমেছে বিমসটেক। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উত্থানের প্রেক্ষিতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বাড়াবে এই আঞ্চলিক সংস্থাটি। বিমসটেকের সদস্য দেশগুলো এখন থেকে জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে একযোগে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। জঙ্গীবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলো একে অপরের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন করবে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমসটেক। আগামী বছর শ্রীলঙ্কায় এই স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিমসটেকের একটি সাব কমিটি রয়েছে। এই সাব কমিটি এখন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধের লক্ষ্যে কাজ করছে। বিমসটেক সদস্য দেশগুলো ইতোমধ্যেই জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে একমত হয়েছে। সে লক্ষ্যে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলো এখন স্ব স্ব দেশের মধ্যে এ বিষয়ে যেসব আইন রয়েছে সেটা পর্যালোচনা করছে। প্রতিটি দেশের জঙ্গীবাদ অর্থায়ন মোকাবেলার আইন পর্যালোচনার মাধ্যমে এই সমঝোতা স্মারক সই হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অভিজ্ঞতা বিনিময় কার্যক্রমেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা স্ব স্ব দেশে কিভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ করছে, সে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে। এছাড়া জঙ্গীবাদে অর্থায়নের মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করবে বিমসটেক। আগামী বছরের মার্চ মাসে কলম্বোয় সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক বিমসটেকের সাব কমিটি বৈঠকে বসবে। সেই বৈঠকে এই সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হবে। সে সময় সদস্য দেশগুলোর সম্মতিতে এই সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়িয়ে ২০১৩ সালে সন্ত্রাসবিরোধী সংশোধনী বিল পাস করেছে। জাতিসংঘের সমকালীন বিভিন্ন প্রস্তাব ও কনভেনশন এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় আলোচনার আলোকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন অধিকতর সংশোধন করে ওই বিল পাস করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধের লক্ষ্যে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ইউনিটও কাজ করছে। এসব আইন ও বিধিবিধান বিমসটেককে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি বিমসটেকের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোও এ বিষয়ে তাদের আইন-কানুন বিমসটেক সচিবালয়ে পাঠাবে। সদস্য দেশগুলোর সকল আইন-কানুন ও বিধি পর্যালোচনার মাধ্যমে এই সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র জানায়, সন্ত্রাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে উঠেছে। এছাড়া আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদও ক্রমশ বাড়ছে। তাই আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ছাড়া কার্যকরভাবে সন্ত্রাস দূর করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশের মধ্যে গড়ে ওঠা আঞ্চলিক ফোরামগুলো এখন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধেও কাজ করছে। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ফোরাম সার্ক কাজ করছে। তবে সার্কের পাশাপাশি বিমসটেকও এখন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। সে কারণে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় এখন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বাড়াতে চায় বিমসটেক। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রসারের ঝুঁকি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এখন দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা করছে। আর বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জঙ্গীদের কাছে অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলো এখন জঙ্গীবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে নেমেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা বাড়াতে ১৯৯৭ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিসটেক) নামে নতুন উপ-আঞ্চলিক জোট গঠন হয়। পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান এতে যোগ দিলে ২০০৪ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে নাম পরিবর্তন করে ‘বিমসটেক’ করা হয়। ১৯৯৭ সালে সহযোগিতার ছয়টি ক্ষেত্র নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে আরও আটটি নতুন ক্ষেত্র যোগ হওয়ায় বিমসটেক এখন উন্নয়ন এবং অভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট চৌদ্দটি খাতের ওপর জোর দিচ্ছে। এই খাতগুলো হলো- বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য, কৃষি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সন্ত্রাসবাদ ও আঞ্চলিক অপরাধ দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
×