ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৬ জুলাই ২০১৫

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজানের আজ ১৮তম দিবস। একে একে শেষ হয়ে যাচ্ছে মাঝখানের মাগফিরাতের দশকটি। আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা পাওয়ার সবচেয়ে বড় অবলম্বন তার প্রতি প্রেম, ভালবাসা, ইখলাস, তাওয়াক্কুল এবং ভালমন্দ বিপদাপদ সর্বাবস্থায় তাকদীরে বিশ্বাস। গতকাল এ সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেছিলাম। তাকদীরে বিশ্বাস করা প্রথমত ফরজ। দ্বিতীয়ত বড় উপকার হলো এর দ্বারা জীবনের বাঁকে বাঁকে প্রচ- এক মনোবল সৃষ্টি হয়। মানুষ গায়রুল্লাহর দিকে বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দিকে অহেতুক সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করা, শিরক করা থেকে নিষ্কৃতি পায়। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল। তাই তুচ্ছ কোন বিপদের সময়েও কোন প্রকার সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বোধ করলে সেদিকে সে সাহায্য পাওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। অথচ জগতের সকল ভাল-মন্দের মালিক হলেন আল্লাহ তায়ালা। মানুষের এ দুর্বলতাই তাকে ধীরে ধীরে গায়রুল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। তাকদীরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন মানুষকে তার এ দুর্বলতা থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল করে দেয়। হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) বলেন, একদা আমি নবী করীম (স)-এর পিছনে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, সব সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখবে। তা হলে তিনি তোমার তত্ত্বাবধান করবেন। আল্লাহকে স্মরণ রেখ যদি সকল মানুষ মিলেও তোমরা কোন কল্যাণ করতে ইচ্ছা কর, সেক্ষেত্রে তোমরা তা করতে সক্ষম না। আর সকলে মিলে তোমার ক্ষতি করতে চায় সে ক্ষেত্রেও তোমার তাকদীরে নির্ধারিত জিনিসের বাইরে তারা কোনই ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, তাকদীরের সঙ্গে তাদবীরের (প্রচেষ্টার) কোন সংঘাত নেই। কার্যসম্পাদনের জন্য আসবাব তথা উপায়-উপকরণ ইত্যাদির অবলম্বন করাকে পরিভাষায় তাদবীর বলে। এ তাদবীরের সঙ্গে তাকদীরের কোন সংঘাত নেই। কার্যসম্পাদনের আসবাব গ্রহণ করা তাকদীরে বিশ্বাসের পরিপন্থীও নয় আর অনাদিকালে লিপিবদ্ধ তাকদীরে এ আসবাব অবলম্বন করার কথা লিখিত আছে। তাকদীরে আস্থা রেখে আসবাবের অবলম্বন প্রসঙ্গে একবার সাহাবীগণ নবী করীম (স)কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অসুস্থতার সময় ওষুধ ব্যবহার কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ঢালের ব্যবহার তাকদীরের লিখনকে খ-ন করতে পারে কি? উত্তরে নবী (স) ইরশাদ করেন, আসবাবের অবলম্বন করার বিষয়টিও তাকদীরে লিপিবদ্ধের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যেখানে এ কথা লেখা আছে যে, মানুষ ওষুধ ব্যবহার করে উপশম লাভ করবে কিংবা ঢাল ব্যবহার দ্বারা শত্রুর আঘাত থেকে বেঁচে যাবে। কাজেই বুঝা যায়, আসবাব গ্রহণ তথা তাদবীরের ব্যাপারটিও তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য তাকদীর সম্পর্কীয় বিতর্কে লিপ্ত হওয়া সকলের জন্য নিরাপদ নয়। তাকদীর বিষয়ে গভীর তত্ত্বানুসন্ধান কিংবা বিতর্কে লিপ্ত হওয়া সকলের জন্য নিরাপদ নয়। অনেক ক্ষেত্রে এ বিতর্ক মানুষকে গোমরাহী এক কুফর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের নিকট আগমন করেন। এ সময় আমরা তাকদীর সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এতে তিনি এমন রাগান্বিত হলেন যে, তাঁর মুবারক মুখম-ল লাল হয়ে গিয়েছিল যেন ডালিমের রশ মেখে দেয়া হয়েছে। তারপর বললেন, তোমাদের কি এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে অথবা আমাকে এ বিষয় তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে? মনে রেখ, পূর্ববর্তী জাতিগুলো তখনই ধ্বংস হয়েছিল যখন তারা এসব বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল। কাজেই তোমাদেরকে আমি কঠোরভাবে বলছি, এ ব্যাপারে তোমরা আলোচনা-পর্যালোচনা কিংবা বিতর্কে লিপ্ত হইওনা। (তিরমিযী)। আসুন, পবিত্র মাহে রমজানে ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাসটির ব্যাপারে আমাদের ধারণা শাণিত করি।
×