ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

খালেদার গণঅভ্যুত্থান কি সশস্ত্র জঙ্গী-উত্থান

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৬ জুলাই ২০১৫

খালেদার গণঅভ্যুত্থান  কি সশস্ত্র জঙ্গী-উত্থান

দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো খবর পরিবেশনের মাঝখানে বিজ্ঞাপন বিরতি নেয়। তবে তা নেয়ার আগে বিরতির পর কী থাকছে তার জানানও দেয়। গত ৭ এপ্রিল ৯২ দিন শেষে ঘরে ফেরার পর দীর্ঘ বিজ্ঞাপন বিরতি নিয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিরতি শেষে তিনি হাজির হয়েছেন ইফতার পার্টিতে। এই ইফতার পার্টি চালু করেছিলেন বেগম জিয়ার স্বামী সামরিক জান্তা শাসক জিয়াউর রহমান। প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পর তিনি অকস্মাৎ ঘরোয়া রাজনীতি চালু করেন। ঘরের মধ্যে রাজনীতিচর্চা মানেই জনগণ থেকে দূরত্বে অবস্থান। সে সময় এই ইফতার পার্টির জজমা শুরু। অপর সামরিক শাসক এরশাদও ঘরোয়া রাজনীতিকে গুরুত্ব দিলে ইফতার পার্টির আয়োজন ক্রমশ বাড়তে থাকে। আর বর্তমানে সব ছাপিয়ে এই ইফতার পার্টি রাজনীতির অংশবিশেষে পরিণত হয়েছে। বেগম জিয়া নিয়মিত নিজস্ব ও দলীয় উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন। অবশ্য ধর্মীয় কোন আলোচনা হয় না এই পার্টিতে। সরকারী দল, পুলিশ, সংসদ সদস্যসহ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিষোদগারই করা হচ্ছে। নামে ইফতার পার্টি, আসলে তা রাজনৈতিক সমাবেশ। বিদেশী কূটনীতিকরাও এই ইফতার আমন্ত্রণ থেকে বঞ্চিত হননি। তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বেগম জিয়া রমজান ও ইফতারের ফজিলত নিয়ে কোন আলোচনা করেননি। বরং বিষোদগারই করেছেন। এমনকি স্বভাবসুলভ মিথ্যাচার থেকেও সরে আসেননি। তাই অবলীলায় বলছেন, ‘পুলিশ স্বীকার করেছে আন্দোলনের হাত থেকে সরকারের পড়ে যাওয়া রক্ষা করতে তারা নিজেরাই পেট্রোল বোমাবাজির সব কর্মকা- ঘটিয়েছে।’ তবে বেগম জিয়া সরকারের করুণ ও ভয়াবহ পরিণতি যাতে হয় সেজন্য রমজানে আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন ইফতার পার্টির ভাষণে। এর আগে গত মার্চ মাসে তিনি বলেছিলেন, সরকারের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে। হরতাল-অবরোধ নামক পাশবিক কর্মসূচী চালিয়ে শতাধিক মানুষ হত্যা করিয়েছেন। তার ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী বিএনপি-জামায়াত এবং জঙ্গীরা দেশজুড়ে নাশকতা চালিয়েছে। এসব হত্যাকা-ের বিচারের গতি শ্লথ বলেই বেগম জিয়া তারস্বরে চিৎকার করে বলতে পারেন, আমি বোমা মারিনি। বোমা মেরেছে সরকার। এমনকি তিনি সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশের উদাহরণ টেনে এনেছেন। বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের পরিণতি হবে হীরক রাজার মতো। সিনেমাটির সংলাপও উচ্চারণ করেছেন, ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।’ জনগণ দড়ি ধরে টান দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। বেগম জিয়ার এই জনগণ কারা? জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত ৯২ দিনে সেই জনগণকে দেশবাসী দেখেছে পেট্রোলবোমা দিয়ে বাসে অগ্নিসংযোগ করতে, রাস্তাঘাট এবং গাছপালা কেটে ফেলতে। এমনকি সরকারী স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগ করতে। চোরাগোপ্তা হামলা চালানো সেই জনগণ যে প্রস্তুত হচ্ছে, তা তো স্পষ্ট হচ্ছে, যখন আল কায়েদা আইএসের প্রধানসহ ১২ জঙ্গীকে আটকের মাধ্যমে। হরতাল-অবরোধ নামক নাশকতা কর্মসূচী দিয়েও যখন বেগম জিয়ার লক্ষ্য হাসিল হয়নি, তখন তিনি নয়া নাশকতার পথ ধরবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর এই জঙ্গীদের একক নেত্রী যে তিনি, এটা নতুন করে আর বলার প্রয়োজন হয় না। জঙ্গীরা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যেসব সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়েছে, তা বিএনপি-জামায়াত নামক জোটের স্বার্থরক্ষার জন্যই। ২০ দলীয় জোটে এমন সংগঠনও রয়েছে যাদের সঙ্গে জঙ্গীদের সংযোগ রয়েছে। যে জন্য বেগম জিয়া তাদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এখনও হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। তার এই হুমকি থেকে পুলিশ বাহিনীও রক্ষা পায়নি। তিনি তাদের সরকারের আনুগত্য পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তা না হলে ভবিষ্যতে বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। বেগম জিয়ার জঙ্গীদের হামলার টার্গেটও পুলিশ বাহিনী, জঙ্গীদের হামলায় পুলিশের অনেক সদস্য হতাহত হয়েছেন। তাদের ওপর নারকীয় হামলা চালানো হবে আবার এমন ইঙ্গিতই মেলে বেগম জিয়ার ভাষণে। বেগম জিয়া একদিকে জঙ্গীবাদের বিকাশ ঘটাচ্ছেন, অন্যদিকে সরকারী দলকে অভিশাপও দিচ্ছেন এই বলে যে, আল্লাহ জালেম, অত্যাচারী ও অবৈধ সরকারকে পরীক্ষা করছে। তারা কত খারাপ কাজ করতে পারে, কত দুর্নীতি করতে পারে। আবার হুমকিও দিচ্ছেন, যেদিন দড়ি ধরে টান দেবে, সেদিন এরা খানখান হয়ে যাবে। অর্থাৎ, তিনি বোমা মেরে সবকিছু গুঁড়িয়ে দেবেন। আইএস সদস্যরা ইরাক, সিরিয়াতে যেমন প্রাচীন ঐতিহ্য ও নিদর্শন ধ্বংস করছে বোমায়, তেমনি বাংলাদেশেও সেই একই পন্থাকে প্রাধান্য দেবেন। বলেছেনও, এই সরকারের সবার পরিণতি একই হবে। জনগণ (আসলে হবে জঙ্গীরা) তাদের সব জায়গা থেকে খুঁজে বের করবে। যেমনটা ১৯৭১ সালে আলবদর বাহিনী করেছিল। দেশজুড়ে রাজাকার-আলবদররা মুক্তিকামী জনগণকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছিল, তেমন পন্থা তিনি অবলম্বন করবেন- এমন ইঙ্গিতই মেলে, তবে তিনি এটুকু আশ্বাস দিয়েছেন, যেন জঙ্গীদের হামলা থেকে রেহাই পাবার একটাই পথ, তা হচ্ছে ‘পালাবার পথ দেখে রাখুন।’ জঙ্গী হামলা থেকে রক্ষা পাবার জন্য সরকারী দলকে এভাবে হুঁশিয়ার করার ক্ষমতা একমাত্র বেগম জিয়াই রাখেন। আমরা তাই স্মরণ করতে পারি, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতকে সামনে রেখে জঙ্গী ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশ ধ্বংস তথা সরকার উৎখাত করে আল কায়েদা ও আইএসের সহায়তায় তিনি সরকার গঠন করবেন। পলাতক পুত্রকে দেশে ফিরিয়ে এনে ক্ষমতার সিংহাসনে বসাবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি হয়ে গেছে। তিনি দলীয়কর্মীদের সে রাতে হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যে উস্কানি দিয়েছিলেন, তাতে দলীয় কর্মীরা সাড়া দেয়নি। আর তা দেয়নি বলেই হেফাজতরা ঢাকায় ধ্বংসলীলা চালিয়ে অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের জন্য খালেদা জিয়ার ঘোষণাকে সামনে রেখে জেএমবি সারাদেশে একযোগে গ্রেনেড বিস্ফোরণের কর্মসূচী নিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল। যেমনটা খালেদা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার পুত্রের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। তাতে দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট মারা যান। জেএমবি নির্বাচন বানচালে ভারতের বর্ধমানে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু ধরা পড়ার পর জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির ঘাঁটি রয়েছে। তারা ধরা পড়ার পর জানা গেল, বিএনপি-জামায়াতের মদদে জঙ্গীরা বাংলাদেশে নাশকতা চালাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎদানের সময় প্রসঙ্গটি তুলে বলেছিলেনও এই জঙ্গীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য। অর্থাৎ উপমহাদেশ জানে বেগম জিয়া এখন আর কেবল বিএনপি নেত্রী নন, তিনি জঙ্গীদের নেত্রী। এবং জঙ্গীরা আপাতত তাকে ক্ষমতায় বসাতে চায়। এই জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেগম খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানে রয়েছে জামায়াত। কারণ তার আচরণই প্রমাণ করে তিনি জঙ্গীবাদের মদদদাতা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পৃষ্ঠপোষকতায়ও জড়িত। বিএনপি মূলত জামায়াতের সঙ্গে থেকে জঙ্গীদের মাধ্যমে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়। সবাই যখন বলছে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে, তখন বেগম জিয়া আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, তার পরিবারের সদস্য জামায়াতকে ছাড়া কখনই ঈপ্সিত লক্ষ্য হাসিল হবে না। নিজেকে মামলামুক্ত করা, পলাতক দুর্নীতিবাজ পুত্রকে দেশে ফিরিয়ে এনে দল ও ক্ষমতায় বসানো এবং যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করাই বেগম জিয়ার ঈপ্সিত লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণে মানুষ হত্যা তার কাছে জায়েজ। এমনকি দেশের সম্পদহানিও তার কাছে কোন বিষয়ই নয়। জামায়াত ও জঙ্গীদের নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতি লাভ করার পর বেগম জিয়ার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র বলতে এখন আইএসআই, আল কায়েদা, জেএমবি, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এসব নারকীয়তায় বিশ্বাসী সংগঠনগুলোই এখন তার ভরসা। বেগম জিয়া ইফতার পার্টিতে বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি বর্তমান সরকারকে উৎখাত করবেন। বেগম জিয়া যা বলেন তার ভাষ্যের অন্তর্নিহিত সার পর্যালোচনা করলেই তবে আসল সত্য উদঘাটন করা যায়। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন দলটি অবরোধ নামক যে নারকীয় কর্মসূচী পালন করেছে তা মূলত জনগণের বিরুদ্ধে, সাধারণ নিরীহ জনগণকে হত্যা করে বেগম জিয়া দেশজুড়ে আতঙ্কবাদ ছড়িয়েছিলেন। জনগণ তার প্রতি এমনই বিরূপ হয়েছিল যে, পেট্রোল বোমাবাজদের আটক করে গণপিটুনিও দিয়েছিল। গণরোষে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, খালেদা জিয়া কর্মসূচী রাস্তায় ফেলে রেখে তিন মাসের নাশকতা পরিচালনার কেন্দ্র গুলশান অফিস ছেড়ে বাড়িতে সটান চলে গিয়েছিলেন। জনগণকে তিনি তার কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত করা দূরে থাক, দলীয় নেতা-কর্মীরাও তার এই কর্মসূচীতে সাড়া দেয়নি। অংশ নেয়নি। জামায়াত ও জঙ্গীদের ভরসা করে তিনি গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। অরাজকতা তৈরি করে দেশজুড়ে নাশকতা চালিয়ে তিনি ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করেছিলেন। জনগণের ক্ষোভের যাঁতাকলে পড়ে তিনি সরে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু নাশকতামূলক কর্মকা- থেকে একবিন্দুও সরে আসেননি। এক্ষেত্রে তার সহযোগী জামায়াতও নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। খালেদার গণঅভ্যুত্থানের মূল যে জঙ্গী উত্থান, তা অচিরেই পরিষ্কার হবে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়াত বর্তমানে নীরব অবস্থানে আছে। তাদের এই নীরবতা নতুন শঙ্কার জন্ম দেয়। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মাধ্যমে জামায়াতকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠনের তকমা দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক লবি বাড়াতে জামায়াতের প্রবাসী নেতারা তৎপর থাকলেও পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে আর আনতে পারছে না। আন্তর্জাতিক মহলে জামায়াতকে নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। গত বছর জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য বলা হয়। এ সংক্রান্ত এক প্রস্তাবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বলেছে, বিএনপির উচিত জামায়াত ও হেফাজত থেকে নিজেকে দূরে রাখা। নরেন্দ্র মোদিও বলে গিয়েছেন খালেদাকে যে, ভারত গণতন্ত্রের পক্ষে, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে। এমনকি বিএনপির বর্তমান ও সাবেক নেতাদের অনেকেও বলছেন বিএনপির রাজনীতি এখন সম্পূর্ণ জামায়াতনির্ভর। বিএনপির বাঁচতে হলে জামায়াতনির্ভরতা ছাড়তে হবে। বিশ্বের কাছে খালেদা আজ সন্ত্রাসের নেত্রী চিহ্নিত হয়ে আছেন। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খালেদা ও তারেককে বাদ দিয়ে বিএনপিকে পুনর্গঠন। কিন্তু এসব কোন কিছুই খালেদা আমলে নেন না। তিনি তার লক্ষ্য পূরণে জামায়াত, জঙ্গীকে সঙ্গে রাখতে পিছপা নন। যে কারণে ভারতকে তোষামোদ করতে একটুও বেগ পেতে হয়নি। ভারত বিরোধিতাই যার রাজনীতির প্রধান ইস্যু, সেই তিনি যেচে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধরনা দিয়েছিলেন। যদি নমনীয় হন তাহলে ভারত হয়ত তাকে ক্ষমতায় বসাবে, কিন্তু সবই নিষ্ফল হয়েছে। ব্যর্থতার পাল্লা ভারি হতে হতে এমন হয়েছে যে, বেগম জিয়া এখন খড়কুটো ধরে হলেও লটকে থাকতে চান। যেখানে নিজ দলে তার বিরুদ্ধে একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছে, সেখানে জামায়াত ও জঙ্গীদের ওপর তার নির্ভরশীলতা আরও বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীদের গোপন আস্তানা রয়েছে। এসব আস্তানা এক একটি ছোটখাটো সেনাশিবির যেন। সাতক্ষীরায় সম্প্রতি বোমা ও অন্যান্য সরঞ্জামসহ যে ১৬ জন জামায়াত নেতা-কর্মীকে আটক করা হয় তারা বলেছে, নতুন করে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্য তারা তৎপর হয়েছে। সে নিয়ে গোপন বৈঠক করছিল। আর বৈঠককালে তারা ধরা পড়ে। প্রকাশ্যে জামায়াতের কোন নেতা-কর্মী এখন মাঠে নেই। এরা গোপনে নানারকম প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সেইসঙ্গে ছদ্মবেশ ধারণ করে কেউ ব্যবসায়ী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী, কেউ শিক্ষকতা, কেউবা সমাজসেবকের বেশ ধারণ করেছেন। তারা ইন্টারনেটে সংযোগ রক্ষা করেন দলের উর্ধতনদের সঙ্গে। খালেদার গণঅভ্যুত্থান কর্মসূচী সফল করার জন্য জামায়াত ও জঙ্গীরা এখন সশস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বোমা তৈরি যেমন করছে, তেমনি আল কায়েদা ও আইএসের সঙ্গে সংযোগ সাধনও করছে। যারা দেশজুড়ে নতুন করে নাশকতা চালাবে। পেট্রোলবোমা হামলার বিচারের গতি শ্লথ হওয়ার কারণে যেমন খালেদা-জামায়াত, তেমনি জঙ্গীরা সাহসী হয়ে উঠছে। ফৌজদারি আদালত আর বিচার যে তাদের কিছুই করতে পারবে না সেটা তারা বোঝে। আর সরকারের মধ্যেও যে জামায়াতের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে, এমন প্রভাবশালীর সংখ্যাও কম নয়। তাই সারাদেশে জামায়াত জঙ্গীরা অবস্থান করলেও তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা সরব নয়। কেবল শেখ হাসিনাই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে একা লড়ছেন। আর এই লড়াই তিনি করছেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। এক্ষেত্রে দল অনেক পেছনে পড়ে আছে। বাংলাদেশের জনগণ অবরোধ নামক মানুষ হত্যা কর্মসূচীর পর এবার গণঅভ্যুত্থান নামক আরও পাশবিক কর্মসূচীর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যা জঙ্গীবাদের উত্থানকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষকে সঙ্গে না পেলেও তাদের কিছু আসে যায় না। তবে বাঙালী চরিত্র আর যাই হোক জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এককাট্টা সবসময়ই।
×