ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীন ও জাপানের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৫ জুলাই ২০১৫

চীন ও জাপানের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ চীন-জাপানের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে দেশ দুটির জন্য সংরক্ষিত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন-জাপান সফরের সময় যেসব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হয়েছে সেগুলোও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে বাংলাদেশ-চীন, ভারত ও মিয়ানমার নিয়ে গঠিত ফোরাম বিসিআইএম কার্যকরের মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এছাড়া বঙ্গোপসাগর বা ‘বিগ বি’ ঘিরে জাপান এদেশে যে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র সন্ধান করছে সেটিও বাস্তবায়ন হবে এই সময়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে করুণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশে যে অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে, সেগুলোর সঙ্গে চীন ও জাপানের সংশ্লিষ্টতা আরও বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছে সরকার। এ কারণে এ দুটি দেশের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত যেসব চুক্তি করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। একই সঙ্গে দেশ দুটির বিনিয়োগ প্রস্তাবকেও গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, চীন ও জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দুটি দেশ সফর করেন তখনই এ বিষয়ে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সময় বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে নিয়মিত বৈঠক করা, মনিটরিং ও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, চীন ও জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হচ্ছে চীন ও জাপান। দেশের বড় বড় প্রকল্পে দেশ দুটি বিনিয়োগ করছে। ভবিষ্যতে যাতে তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়ে সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার। এদিকে বাংলাদেশে রেকর্ড হারে বাড়ছে চীনের বিনিয়োগ প্রস্তাব। পেছিয়ে নেই সূর্য উদয়ের দেশ জাপানও। গত কয়েক বছরে কৃষিতে সন্তোষজনক উৎপাদন, সচল গ্রামীণ অর্থনীতি, উৎসাহব্যঞ্জক প্রবাস আয়, সরকারী ব্যয় ও মজুরি বৃদ্ধির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদার গতি সচল হয়েছে। এদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার পর বাংলাদেশকে এখন একটি বড় বাজার হিসেবে দেখছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চীনের একক ও যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ১৬ কোটি ডলারের। আর গত অর্থবছরের ৭ মাসে তাদের নিবন্ধন আগের পুরো অর্থবছরের তুলনায় ১০ গুণ বেড়ে যায়। বিনিয়োগ প্রস্তাবে ইতোমধ্যে শীর্ষে থাকা ভারতকে টপকে শীর্ষে চলে গেছে চীন। যদিও চলতি বাজেটে বাংলাদেশে বিশেষ বিনিয়োগ অঞ্চল স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ কারণে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন এই অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক জোন (কোরিয়ান ইপিজেড) করা হয়েছে। কিন্তু চীনা ও জাপানি ব্যবসায়ীদের জন্য পৃথকভাবে বিনিয়োগের কোন বিশেষায়িত অঞ্চল নেই। তবে এবার সরকারের পক্ষ থেকে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০০ একরের বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলেও দেশটির ব্যবসায়ীদের জন্য ৪০টি প্লট এবং দুটি শিল্প ইমারত সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ অঞ্চল প্রতিষ্ঠারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া চীন-জাপান বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইতোমধ্যে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব জাপানকে দেয়া হয়েছে। নতুন করে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে আরেকটি রেল সেতু নির্মাণ, যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেল, ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস এবং ঢাকার চারপাশে চারটি নদীর পুনরুদ্ধার প্রকল্প জাপানি সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারেও চীনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনের কাজ করছে চীনা কোম্পানি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট টানেল নির্মাণের ব্যাপারে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বেসরকারী পর্যায়ে পোশাক শিল্পের জন্য মুন্সীগঞ্জে গার্মেন্ট পল্লী স্থাপনে চীনা কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। জাপানি ব্যবসায়ীরা বিজনেস ফোরামে যে কথা বলেছেন তাতে মনে হয়, বাংলাদেশের বর্ধমান অভ্যন্তরীণ বাজারকেও তারা মাথায় রেখেছেন। এ কারণেই দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পকেন্দ্র গড়ে তোলায় জাপান ও বাংলাদেশের স্বার্থ মিলে যায়। সুতরাং, জাপানের বিনিয়োগ প্রস্তাবের লক্ষ্যের মধ্যে থাকছে জাপানি বাজার, ভারতের বাজার এবং বাংলাদেশের বাজার। আবার চীন ও ভারতেরও আগ্রহ আছে বিসিআইএমে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের অনন্যতার সুবাদে আমরা ভারত, চীন ও জাপানের ত্রিভুজকে কাজে লাগাতে পারি।
×