ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নজরুল ইসলাম লিখন

অভিমত ॥ আনসারুল্লাহ বাংলাটিম ওরা মানবতার শত্রু

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৫ জুলাই ২০১৫

অভিমত ॥ আনসারুল্লাহ বাংলাটিম ওরা মানবতার শত্রু

একের পর এক মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার হত্যার পর আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে উগ্রপন্থী জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে, যেমনÑ আনসার আল ইসলাম, আনসার বাংলা-৭, আনসার বাংলা-৮, আল কায়েদা আনসারুল্লাহ বাংলা-১৩ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে হত্যাসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায় স্বীকার করেছে। সম্প্রতি ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ শিক্ষক ও রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের হত্যার হুমকি দিয়ে উড়োচিঠি দিয়েছে আল কায়েদা আনসারুল্লাহ বাংলা-১৩ নামক একটি জঙ্গী সংগঠন। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। গোটা জাতি পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছিল যে, বাংলাদেশের জঙ্গীরা ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। খবরটি নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর। তার মানে কি? বাংলাদেশে জঙ্গীরা একা নয়। আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের সঙ্গে রয়েছে তাদের যোগাযোগ। আর তাদের মদদেই এরা জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের জঙ্গীরা ড্রোন বানানোর কাজে হাত দিয়েছে। আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গী সংগঠনগুলো। এবার টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ কতিপয় ভিআইপি রাজনীতিবিদ। ইতিপূর্বে কিছু জঙ্গীকে গ্রেফতার করে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এবারও উড়োচিঠি দিয়েছে জঙ্গীরা। গোটা জাতি আশা করছে এবারও অতীতের মতো আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শক্ত হাতেই জঙ্গীদের মোকাবেলা করবেন। দেশে হঠাৎ করে আবার জঙ্গী সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে তাদের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার এক জঙ্গী পরিকল্পনা করেছিল বলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছিল। জঙ্গীবাদের শীর্ষ সংগঠন আল কায়েদা বাংলাদেশে শেকড় গাড়ার হুমকি দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করার জন্য আল কায়েদার বর্তমান শীর্ষ নেতা এ্যাইমান আল জাওয়াহিরি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, উপমহাদেশে আল কায়েদার শাখা খুলে সীমানা বদলে নতুন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, যা প্রায় গোটা দেশবাসীই অবলোকন করেছেন। জঙ্গীদের ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি থাকা সত্ত্বেও জঙ্গীরা যে বসে নেই তা উপরোক্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাজে এখন তারা ব্যবহার করছে উন্নত প্রযুক্তি। এক সময় জঙ্গীদের ছকে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল। খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের মানুষ ৩০ লাখ শহীদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন। ধৃত জঙ্গীরা যেসব তথ্য দিয়েছে এবং যতটুকু সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে এক কথায় তা ভয়াবহ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও এ ব্যাপারে ঐকমত্য এবং এর প্রেক্ষাপটে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। অর্থের উৎস সন্ধান করে মদদদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি জঙ্গী নির্মূলে অভিযান আরও জোরদার করা অত্যন্ত জরুরী। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসলে বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির বাস্তবতায় এখানে জঙ্গী তৎপরতা সহজে নির্মূল হওয়ার নয়। প্রধানত দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাই এ দেশকে জঙ্গী তৎপরতার জন্য উর্বর ভূমিতে পরিণত করেছে। গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষকে সামান্য অর্থের বিনিময়ে জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা গ্রামীণ সাধারণ মানুষকে ইসলামী শাসনের মন্ত্রে দীক্ষিত করাও সহজ হচ্ছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, কিছু জঙ্গী আটক করে দেশে এর তৎপরতা বন্ধ করা যাবে না। এজন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণেও নজর দেয়া দরকার। সর্বোপরি কথা হলো, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোকে দমনে রাষ্ট্র ও সরকারকে কঠোরতম অবস্থানে যেতে হবে। জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। শুধু নিষিদ্ধ করলেই চলবে না, তাদের সকল প্রকার অপকর্ম বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক জঙ্গী সংগঠনকেই ইতিপূর্বে নিষিদ্ধ করেছিল সরকার; কিন্তু তারপরও তারা থেমে নেই। নাম পরিবর্তন করে রাতারাতি নতুন সংগঠন গড়ে পুনরায় জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুরোদমে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় থাকতে হবে। কারণ আনসারুল্লাহ বাংলাটিম জেএমবি বা হরকাতুল জিহাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
×