ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসহনীয় যানজট

রাজধানীর শপিংমল মার্কেট ফুটপাথজুড়ে ঈদের কেনাকাটা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৪ জুলাই ২০১৫

রাজধানীর শপিংমল মার্কেট  ফুটপাথজুড়ে ঈদের  কেনাকাটা

রহিম শেখ ॥ প্রকৃতির রং স্বাভাবিক থাকায় সর্বত্রই বইছে ঈদের হাওয়া। উৎসব সন্নিকটে এমন বার্তা কড়া নাড়ছে দুয়ারে। রোজার মাঝামাঝি সময়ে এসে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। রাজধানীর বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউস ও শপিংমল, মার্কেট ও ফুটপাথজুড়ে ক্রেতার ভিড়। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর প্রায় সব মার্কেটগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। মার্কেটের ভিড় এসে ঠেকেছে রাজপথে। রাস্তা ফুটপাথজুড়ে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠায় নগরীতে ছুটির দিনও যানজট ছিল মাত্রাতিরিক্ত। দোকানিরা বলছেন, ঈদ বোনাস-বেতন এখনও হাতে না পৌঁছালেও কেনাকাটা শুরু করেছে অনেকে। এদিকে গতবারের তুলনায় পোশাকের দাম বেশি বলে জানালেন ক্রেতারা। শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ধানম-ি হকার্স, মৌচাক, পিঙ্কসিটি সবগুলো মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করা মানুষের ঢল নামে। ছুটির দিনে সব বয়সী ও পেশার মানুষকে দেখা গেছে পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটাতে। ফলে মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমল সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সড়কে ছিল ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড়। নিউমার্কেট এলাকায় জ্যাম ছিল সকাল থেকেই। অনেকেই গাড়ি নিয়ে কেনাকাটা করতে এসে গাড়ি পার্ক করার জায়গা পাননি। জুমার নামাজের পর ক্রেতারা ভিড় বাড়তে থাকে মালিবাগ, মৌচাক এলাকার মার্কেটগুলোতে। ওই এলাকায় অসহনীয় যানজটের মধ্যেই কেনাকাটা করেছেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। রাজধানীর সবচেয়ে বড় শপিংমলখ্যাত যমুনা ফিউচার পার্ককে কেন্দ্র করে আশপাশের সড়কেও ছিল তীব্র জ্যাম। শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর বুকে বৃহত্তম শপিংমল বসুন্ধরা সিটিকে কেন্দ্র করে পান্থপথ, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ মোড়েও থেমে থেমে জ্যাম অনুভব করেছেন ক্রেতারা। এদিকে ইফতারের পর ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশী পোশাকের পাশাপাশি এবার দেশী কাপড় ও ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকের বুটিক হাউসগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ধানম-ি হকার্স ও নিউমার্কেটে ঈদ উপলক্ষে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় হিন্দি ছবি, সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে ট্যাগ করা পোশাক। এবারের ঈদে বিপণিবিতানগুলোতে তরুণীদের মন কেড়েছে ভারতীয় হিন্দি সিরিয়াল রূপকথার রাজকন্যা ‘কিরণমালা’। একই সঙ্গে ছোটদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে একটু হালকা কাপড়ে করা হয়েছে ‘সারারা’ নামের আরও একটি ঈদ পোশাক। এই নামও নেয়া হয়েছে একটি হিন্দ সিনেমার গান থেকে। জলপরি, রাই কিশোরী, কারিনা ড্রেস ছাড়াও তরুণীরা এবার ঝুঁকছেন বলিউড ফ্লোর টাচ গাউনের দিকে। গাউছিয়া মার্কেটে বিক্রেতারা ‘কিরণমালা’ নামে একটি পোশাকের মূল্য হাঁকছেন ৫ হাজার টাকা। তবে মার্কেটভেদে এই পোশাকের দাম লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকাচ্ছে বিক্রেতারা। রাজধানীর আজিমপুর থেকে গাউছিয়া মার্কেটে আসা সোনিয়া আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, গতবারের তুলনায় পোশাকের দাম অনেক বেশি। পোশাকের এত দাম হলে কেনা সম্ভব নয়। তারপরও যেহেতু বড় উৎসব কিনতে তো হবেই। গাউছিয়া মার্কেটের সীমা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী আলী হোসেন জানান, এবার বিক্রিবাট্টা ভাল। তবে গেল শুক্রবার বৃষ্টির কারণে খুব ভাল বেচাকেনা করতে পারিনি। সামনের দিনগুলোতে ভাল বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই বিক্রেতা। ঈদের বাজারে এবার ভারতীয় লং টপ, পারচি ৬ থেকে ৮ সিরিজের পোশাক ও ‘ভিনয় কোশিশ’ নামের নতুন ধরনের ড্রেসও এসেছে। এসব পোশাক ৪ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটির ওরনিমা ফ্যাশনের ম্যানেজার সোহেল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এবার ঈদে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘সারা-রা’ ও ‘কিরণমালা’। গতবারের ‘পাখি’ ড্রেস এবার চলছে না। তিনি জানান, সারা-রা কামিজের ওপর যে কোটি থাকছে তা মূলত ভেলভেট বা মখমলের তৈরি। এ কারণেই এ পোশাকের দামটা একটু বেশি। ঈদকে সামনে রেখে এসব পোশাক সরাসরি ভারতের বোম্বে থেকে আমদানি করা হয়েছে এ ব্যবসায়ীর দাবি। ভারতীয় এসব পোশাকের বাইরে এবারের ঈদে ওয়েস্টার্ন পোশাকও কিনছেন তরুণীরা। ওয়েস্টার্ন পোশাকের মধ্যে বেশি চলছে হালকা সিøভলেস টপস ও স্কিন টাইট প্যান্ট। অনেকে লং-স্কাটও কিনছেন। এছাড়া চলছে ম্যাক্সি গাউন নামের এক ধরনের ওয়েস্টার্ন পোশাক। এবারের ঈদে ফ্যাশন হাউস স্ট্যাসিতেও বিভিন্ন ধরনের ওয়েস্টার্ন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের পোশাকের সবচেয়ে বেশি কালেকশন দেখা গেছে স্ট্যাসির যমুনা ফিউচার পার্কের শোরুমগুলোতে। এছাড়া আধুনিক ও নতুন নতুন ডিজাইনের ভারতীয়, পাকিস্তানী ও দেশী সেলাই করা এবং সেলাইবিহীন থ্রিপিস উঠেছে বিপণিবিতানগুলোতে। শুক্রবার ছুটির দিনে নিউমার্কেটের ইমিটেশন গহনার দোকানগুলোতে তরুণীদের ভিড় দেখা গেল। পোশাক ও শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনতে ব্যস্ত তরুণীরা। এখানে আধুনিক ডিজাইনের দেশী-বিদেশী চুড়ি, কানের দুল, নাকের ফুল, ভারি ও হালকা কাজের গলার চেইনসহ নানা রকমের গহনা পাওয়া যায় ৫০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। মিরপুর থেকে নিউমার্কেটে আসা গৃহবধূ সিনথিয়া ইসলাম জানান, পুরান ঢাকায় অনেক বড় বড় দোকান আছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমরা নিউমার্কেটে কেনাকাটা করেছি। এখানে দাম খুব একটা যে কম তা নয়, তবে অনেক চেনা দোকান আছে। শুক্রবার ছুটির দিন বলেই মার্কেটে এসেছি। এদিকে নগরীর পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ ও মৌচাক এলাকার পলওয়েল, গাজী ভবন, সিটি হার্ট, পল্টন সুপার মার্কেট, বিশাল সেন্টার, আনারকলি মার্কেট, কনকর্ড, টুইন টাওয়ার, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিসহ বিভিন্ন মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার ছুটির দিনে বেচাকেনা বেড়েছে এসব মার্কেটে। ক্রেতার উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। পলওয়েল মাকের্টের ফেয়ার ট্রেডের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আগের তুলনায় ক্রেতার ভিড় ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। তবে গেল সপ্তাহে বৃষ্টিতে একেবারেই বেচাকেনা করতে পারিনি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভাল তাই সবমিলিয়ে ভাল ব্যবসা হবে এমনটা জানালেন এ ব্যবসায়ী। আধুনিক ও ফ্যাশনপ্রিয় মানুষের জন্য বেইলি রোডে শুক্রবার নারী ক্রেতার সংখ্যা দেখা গেল চোখে পড়ার মতো। দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা উপাদান ব্যবহার করে পোশাকে শতভাগ বাঙালীয়ানা ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব রয়েছে রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে। মার্কেটের প্রথম তিনতলায় প্রায় দুই শতাশিক বুটিক হাউসে স্থান পেয়েছে দেশী কাপড়ে তৈরি ঐতিহ্যনির্ভর পোশাক। এদিন আজিজ সুপার মার্কেটে তরুণ-তরুণীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি ছিল। বিক্রেতারা জানালেন, আজিজে সিল্কের পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে সুতি, খাদি, সিল্ক এবং তাঁতের কাপড়ের পাঞ্জাবি। হাতের কাজ, কারচুপি, স্প্রে, এমব্রয়ডারি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে এসব পাঞ্জাবিতে। তবে এবার যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটিসহ নামকরা শপিংমলগুলোতে বেশি বিক্রি হচ্ছে ‘মোদি কোট’। এছাড়া দেশীয় সুতি, তাঁত, খাদি, এ্যান্ডি ও মুগা কাপড়ের তৈরি সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, নানা রকম শাড়ি, থ্রিপিস, টি-শার্টসহ রকমারি পোশাকেরও এবার কদর বেড়েছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে। ধানম-ি, গুলশান এলাকার অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে ছেলেদের পোশাকের দেশী ব্র্যান্ড ক্যাটস আই, মনসুন রেইন, আর্টিস্টি কালেকশন, টেক্সমার্ট প্রভৃতি শোরুমগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠেছে। উত্তরাবাসীদেরও এখন কেনাকাটার জন্য নিউমার্কেট বা গাউছিয়ায় আসতে হচ্ছে না। সেখানেই নতুন নতুন মার্কেট গড়ে উঠেছে। উত্তরায় রাজলক্ষ্মী মার্কেট, উত্তরা শপিংমলসহ ২০টি মার্কেট রয়েছে। উত্তরায় এক ছাদের নিচে স্বদেশী নামে দেশী পোশাকের ১০টি দোকান ওই এলাকার মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন’ খ্যাত রাজধানীর গুলিস্তানে শুক্রবার ভাল বেচাকেনা হয়েছে। এছাড়া মতিঝিলের শাপলা চত্বর, মৌচাক, ফার্মগেট ও মিরপুর-১০ গোল চত্বরের ফুটপাথ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের ভিড় ও বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৫০ থেকে ৬শ’ টাকার মধ্যে পছন্দের অনেক পোশাক মিলছে ফুটপাথে।
×