ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লেইয়ের টার্গেট সাকিব

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ জুলাই ২০১৫

লেইয়ের টার্গেট সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আজ বাদে কালই শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। প্রথম টি২০ দিয়েই সিরিজ শুরু হবে। দুই দলে টি২০তে যারা আছেন, তাদের মধ্যে নতুনদের মধ্যে লেগ স্পিনার বাংলাদেশের জুবায়ের হোসেন লিখন ও দক্ষিণ আফ্রিকার এডি লেই এবং পেসার বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদার মধ্যেই লড়াই হবে। যদি চারজনই খেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকানরা স্পিনে দুর্বল। বিশেষ করে উপমহাদেশের পরিবেশের উইকেটে তো আরও দুর্বল। এখন প্রোটিয়াদের এ দুর্বলতাতেই আঘাত করতে চাচ্ছে টাইগাররা। ভারতকে যেমন পেস আক্রমণ দিয়েই বধ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সেভাবে আঘাত হানতে চাচ্ছে। তবে স্পিন ঘূর্ণি দিয়ে। এ জন্য দলে স্পিনারের ছড়াছড়ি রাখা হয়েছে। আরাফাত সানি, জুবায়ের হোসেন লিখন, সোহাগ গাজী, নাসির হোসেনের সঙ্গে আছেন সাকিব আল হাসানও। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোন টি২০ না খেলা, প্রথমবারের মতো টি২০ দলে সুযোগ পাওয়া জাতীয় দলের বর্তমানে একমাত্র লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনই ‘ট্রাম্পকার্ড’ হয়ে যেতে পারেন। জুবায়েরের ঘূর্ণিতেই কাবু হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বিবেচনায় নিয়েই যে স্বীকৃত কোন ধরনের ক্রিকেটেই কখনও টি২০ খেলার অভিজ্ঞতা না থাকা জুবায়েরকে নেয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদই যেমন বলেছেন, ‘কখনও টি২০ খেলেনি জুবায়ের। কিন্তু একটা সময়তো শুরু করতে হবে। আরা আমরা দল নির্বাচনের সময় কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ এসব বিবেচনায় নেই। এই কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনে এতটা অভ্যস্ত নয়। এসব ভেবেই জুবায়েরকে নেয়া।’ তাছাড়া জুবায়ের একমাত্র লেগ স্পিনারও। দলে স্পিন আক্রমণে তাতে বৈচিত্র্যও আসে। জুবায়ের নিজেও প্রস্তুত। জানিয়েছেন, ‘সব ধরনের ক্রিকেটে লেগ স্পিনাররা নিয়মিত খেলছে। টেস্ট ও ওয়ানডের মতো টি২০তেও খেলার স্বপ্ন আছে।’ যতদূর জানা গেছে, জুবায়েরের সেই স্বপ্ন প্রথম টি২০’তেই পূরন হয়ে যাবে। পূরন হলেই জুবায়ের আক্রমণ শাণাতে চান, ‘স্পিন বোলিং কোচের (রুয়ান কালপাগে) সঙ্গে কথা হয়েছে, উনি শুরু থেকে আক্রমণ করার কথা বলেছেন। আমিও প্রথম থেকে আক্রমণাত্মক বোলিং করতে চাই। ভাল জায়গায় বোলিং করতে চাই আর প্রয়োজনের সময় ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দিতে চাই।’ জুবায়েরের মতো এডি লেই’ও কিন্তু এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে কোন টি২০ ম্যাচ খেলেননি। শুধু কী টি২০ ম্যাচ, টেস্ট, ওয়ানডে কোন ফরমেটেই খেলেননি। তাই এ লেগ স্পিনারকে নিয়ে বাংলাদেশও খুব যে পর্যালোচনা করতে পারবে, তাও নয়। বাংলাদেশ যেমন ভারতের বিপক্ষে পেসার মুস্তাফিজকে নামিয়ে দিয়ে চমক জাগিয়েছিল, এবার দক্ষিণ আফ্রিকাও লেইকে নামিয়ে দিয়ে সেইরকম কিছু ঘটিয়ে দিতে পারে। শুক্রবার যে টি২০ প্রস্তুতি ম্যাচ হলো, সেখানেও লেই ২ ওভারে ১১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে ঝলকই দেখিয়েছেন। যেখানে ইমরান তাহিরের মত তুখোড় স্পিনারকে টি২০ দলে নেয়া হয়নি, সেখানে লেইকে রাখা হয়েছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, লেইকে দিয়েই বাজিমাত করার একটা ভাবনা দক্ষিণ আফ্রিকার আছে। তাকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ দলের অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসই যেমন বলে দিয়েছেন, ‘ইমরান তাহির দলে থাকলে সে কী করতে পারে তা আমরা জানি। এবারের দলে ইমরান নেই। তবে আছে এডি (লেই)। সামনেই টি২০ বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপের জন্য তরুণদের সময় ও সুযোগ করে দিতে হবে এখনই।’ এডি লেই’ও নিজেকে নিয়ে এমন কথাই বলেছেন, বোঝাই যাচ্ছে মনে বিশ্বাস অনেক। বলেছেন, ‘আমি খুবই সিরিয়াস। আমি গুগলি শিখেছি দানিশ কানেরিয়ার ভিডিও ক্লিপ দেখে। আমার ফ্লিপারে অনেকটা শেন ওয়ার্ন, অনীল কুম্বলে ও কানেরিয়ার কম্বিনেশন আছে। আমি সবার ভিডিও দেখে নেটে অনুশীলন করেছি। দলে ডাক পেয়েছি, এটিই আমার জন্য অনেক। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে স্পিন বল করা কঠিন কাজ। এখন উপমহাদেশে যদি ভাল কিছু করা যায়। আমি অপেক্ষায় আছি খেলার। যদি খেলতে পারি তাহলে আমার টার্গেট সাকিব আল হাসান।’ লেই বাংলাদেশে আসার আগেই সাকিবকে টার্গেট করেই এগিয়ে চলেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটারকে কাবু করেই আলোচনায় আসতে চান লেই। দুই লেগ স্পিনার জুবায়ের-লেই লড়াই হবেই। এরসঙ্গে পেস আক্রমণেও লড়াই দেখা যাবে। মুস্তাফিজ-রাবাদা লড়াই হতে পারে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে মুস্তাফিজ নিজেকে প্রমাণ করেছেন। অভিষেক ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট নিয়েছেন। পরের ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে সবচেয়ে উজ্জ্বল নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে আরও ২টি উইকেট নিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সবচেয়ে উইকেট নেয়ার যোগ্যতা দেখিয়েছেন। ভারতও ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হেরেছে। ভারত ক্রিকেটার ধোনি, কোহলি, রায়না, রোহিত শর্মারা যেমন মুস্তাফিজের ‘কাটার’ বুঝতেই হিমশিম খেয়েছেন, এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও সেই ‘কাটার’ দিয়ে ভিলিয়ার্স, ডুমিনি, মিলারদের কাবু করার পালা এ বামহাতি পেসারের। পারবেন তা করতে? মুস্তাফিজ জানিয়েছেন, ‘আমি সবসময়ই চেষ্টা করব দলের জন্য কিছু করতে। যেভাবে বল করেছি, সেভাবেই করার চেষ্টা করব। দলের জন্য কিছু করতে পারলেই ভাল লাগবে।’ মুস্তাফিজ এখন বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচিত নাম হয়ে গেছেন। তিনি যেমন তিন ওয়ানডে খেলেছেন। কাগিসো রাবাদা তেমনি এখন পর্যন্ত ৩টি মাত্র টি২০ ম্যাচ খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছেন। উইকেট নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১টি। তবে এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে চান। বলেছেন, ‘সত্যি বলতে উপমহাদেশের উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা নেই আমার। সুতরাং খেলা আসলেই চ্যালেঞ্জিং। আমার লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট খেলা। তবে স্টেইন, ফিল্যান্ডার, পারনেলদের ভিড়ে তা সহজ নয়। এ জন্য যে ফরমেটেই সুযোগ পাব, সেখানেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। কোচ, অধিনায়ক ও সিনিয়রদের কাছ থেকে জেনেছি, আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের কান্ডিশনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। আমিরাতে এর আগে দারুণ সময় কাটিয়েছি। আমরা শিরোপা জয়ের আনন্দ করেছিলাম, যা আমাকে বাংলাদেশ সিরিজে ভাল করতে অনুপ্রাণিত করবে। তবে এটা ঠিক, অনুর্ধ ১৯ আর জাতীয় পর্যায়ে খেলাটা এক নয়। আমাকে তাই সেরাটাই দিতে হবে।’ সেই সেরাটাই দক্ষিণ আফ্রিকা রাবাদার কাছ থেকে চায়। স্পিন নির্ভর উইকেট হলে নতুনদের মধ্যে জুবায়ের-লেই, পেস নির্ভর উইকেট হলে মুস্তাফিজ-রাবাদা লড়াই দেখা যাবে।
×