ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের পর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৪ জুলাই ২০১৫

ঈদের পর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঈদের পরেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আন্দোলনে দলীয় নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিয়ে রীতিমত সন্দিহান দলের শীর্ষ নেতারা। ঢাকায় ব্যাপক শোডাউন করতে রাজধানীর বস্তি ও বিহারীক্যাম্পগুলোতে তৎপরতা চলছে। লোক যোগাড় করতে বস্তি ও বিহারীক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে বিএনপি ও বিহারী নেতারা। মিছিলে যাওয়ার লোকের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। আন্দোলন সফল করতে ইতোমধ্যেই মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের বিহারী ক্যাম্পগুলোতে টাকা ঢালছেন বিএনপি ও বিহারী নেতারা। মিছিলে লোক যোগাড়সহ নাশকতা চালাতে কাজ করছে মোহাম্মদপুরের বিহারীক্যাম্পের শান্তি কমিটি। এদিকে ঈদের পরেই গত ৫ জানুয়ারির ডাকা দেশব্যাপী চলমান অবরোধে সারাদেশে নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হচ্ছে। এছাড়া যেসব মামলার অধিকাংশ আসামি গ্রেফতার হয়েছে, সেসব মামলার চার্জশীট দিতে যাচ্ছে পুলিশ। অনেক মামলার বিচার কাজ চলছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের নাশকতায় জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি-জামায়াত-শিবির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো পুরোদমে সচল হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর পরই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির বিচার কাজ শুরু হচ্ছে পুরোদমে। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সম্প্রতি ঈদের পরে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের হুঙ্কার দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের এমন হুঙ্কারকে পুঁজি করার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। তারা নিজেরা সরাসরি মাঠে না নেমে শিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গী গোষ্ঠীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে। জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার চাপ থাকায় ঈদ পরবর্তী আন্দোলনে জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে নামছে না। তবে আন্দোলন চাঙ্গা করতে তারা মরিয়া হয়ে কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ে প্রচুর টাকা খরচ করছে। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করা এবং জামায়াত নিষিদ্ধ ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখতে বিশ দলীয় জোটের আন্দোলন চাঙ্গা করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে জামায়াত। গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, দশ রোজার পর থেকেই বিএনপির প্রভাব থাকা বস্তিগুলোতে তৎপরতা চালাচ্ছেন ওই এলাকার স্থানীয় বিএনপি নেতারা। তারা বস্তিতে প্রভাব থাকা বস্তিবাসীদের নেতা ও বিএনপি নেতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত গোপন বৈঠক করে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য ঈদপরবর্তী বিএনপির আন্দোলনে লোকের যোগান দেয়া। কারা কত টাকায় কত লোকের যোগান দিতে পারবেন সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। মাথাপিছু প্রতিজনকে কত টাকা দিতে হবে সেসব বিষয় নিয়ে চলছে দেনদরবার। যারা যারা মিছিলে যাবেন স্থানীয় নেতাদের সেসব বস্তিবাসীর তালিকা তৈরি করছেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিহারীক্যাম্পগুলোতেও একই প্রক্রিয়া চলছে। ক্যাম্প থেকে মিছিলে পাঠানোর দায়িত্ব পেয়েছে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের সংগঠন এসপিজিআরসির সভাপতি জব্বার খানের দুই ছেলে মুর্তুজা আহমদ খান (৩৫) ও শাহনেওয়াজ আহমদ খান ওরফে শান্নু (৩০) এবং মোহাম্মদ আনোয়ার ওরফে মোল্লা আনোয়ারকে নিয়ে গঠিত শান্তি কমিটি। দশ বছর ধরে জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা শান্তি কমিটির কাছে অনেকটাই জিম্মি। বিশেষ করে শান্নু দুর্ধর্ষ প্রকৃতির সন্ত্রাসী। মাদক, জালটাকা, দেশী-বিদেশী জঙ্গীদের আশ্রয়প্রশয় থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত শান্তি কমিটি। শান্নু বিহারী হয়েও বিএনপির স্থানীয় নেতা। আওয়ামী লীগ বিরোধী সকল কর্মকা-ে বিএনপি বা জামায়াত-শিবিরের পক্ষে লোকের যোগান দেয়া তার অন্যতম কাজ। পাশাশাশি আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী কর্মকা-ে নাশকতা চালাতে জেনেভা ক্যাম্প থেকে বহুদিন ধরেই বোমা সরবরাহ হয়ে আসছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা যায়, কারখানায় তৈরিকৃত বোমা সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতা চালাতে ব্যবহৃত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় কতিপয় নেতার আর্থিক সহায়তায় বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। কারখানায় তৈরিকৃত বোমা বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতাদের কাছে সরবরাহ করা হতো। শান্তি কমিটির প্রধান শাহনেওয়াজ আহমদ খান ওরফে শান্নু জেনেভা ক্যাম্পে বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন এবং কারখানায় তৈরি বোমা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কাছে সরবরাহ করার সঙ্গে জড়িত। গত বছরের ২ জুলাই মোহাম্মদপুর থানাধীন আসাদ এ্যাভিনিউয়ের ৩৬/সি নম্বর তিনতলা বাড়ির নিচতলা থেকে শান্নুকে গ্রেফতার করে পুলিশের একটি বিশেষ দল। গ্রেফতারের স্বল্প সময়ের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পায় শান্নু। এরপর থেকে আরও বেপরোয়াভাবে জেনেভা ক্যাম্পে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে শান্তি কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা ধরনের নাশকতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের ওপর হামলা চালানোর সময় শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা আনোয়ার ওরফে মোল্লা আনোয়ারের বাম চোখে পুলিশের গুলি লাগে। তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ বিরোধী মিছিলে লোকের যোগান ছাড়াও ওয়াসার পানির সংযোগ ও বিদ্যুত সংযোগ বিক্রির সঙ্গে জড়িত। প্রসঙ্গত, জেনেভা ক্যাম্পে পানি ও বিদ্যুত সরকারীভাবে বিনামূল্যে দেয়া হয়। এবারও শান্তি কমিটি ঈদ পরবর্তী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা সরকারবিরোধী আন্দোলনে লোকের যোগান ও নাশকতা চালানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে শান্নুর পিতা এসপিআরজির মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের সভাপতি জব্বার খান জনকণ্ঠকে বলেন, শান্নু কোন প্রকার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এমনকি তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলত তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। তবে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোপূর্বে গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্ত শান্নুর বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকা, বিদ্যুত ও পানির অবৈধ সংযোগ দেয়া ও মাদক ব্যবসায় জড়িতসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। শান্নুর হদিস জানার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্যাম্পের ওপর নজরদারি অব্যাহত আছে।
×