এম শাহজাহান ॥ মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতিতে আমাদের কি লাভ হলো-সকালের পত্রিকা হাতে নিয়ে স্বামীর কাছে এই প্রশ্ন গৃহকর্ত্রী শারমিন লিপির। জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিম-লে আমাদের সম্মান বাড়ল সোজা জবাব দিলেন মুস্তাফিজ। লিপির মতো সবার আগ্রহ এই স্বীকৃতি কি দিল দেশকে? তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই স্বীকৃতির ফলে দেশের ঋণমান গ্রহণযোগ্যতা আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। এতে বাংলাদেশের প্রতি বিদেশীদের আস্থা বাড়বে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হবেন। তাঁরা বলছেন, জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এটা বিশ্ব ব্যাংকের সেই স্বীকৃতি। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। এটা দেশ ও জাতির জন্য গর্বের বিষয়। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট ঘোষণায় আরও আশাবাদী হয়ে বলেছেন, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বৃহত অর্থনীতির দেশ। বর্তমানে এ অবস্থান ৩৮তম। তিনি বলেন, সিটি গ্রুপের বিবেচনায় ২০১০ হতে ২০৫০ কালপর্বে বিশ্বের যে ১১টি দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে জেপি মরগান এর ফ্রন্টিয়ার ফাইভ তালিকাতেও স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক মানের রেটিং এজেন্সি কর্তৃক সার্বভৌম ঋণমান মূল্যায়নে বাংলাদেশ সন্তোষজনক ঋণমান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশী মুদ্রা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে যা আইএফসির মতো প্রতিষ্ঠানকে টাকায় আন্তর্জাতিক বন্ড ইস্যুর বিষয়ে আগ্রহী করে তুলছে।
রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ২০০৯ সালে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বতর্মান সরকারের যাত্রা শুরু হয়। টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে রূপকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ওই সময়ে বিশ্বে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাবে। শুধু তাই নয় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে বাংলাদেশ।
সূত্র মতে, মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেতে হলে প্রথমেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এক্ষেত্রে জাতিসংঘ তিনটি সূচক বিবেচনা করে থাকে। এগুলো হচ্ছেÑ মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা। ইতোমধ্যে অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা সূচকে বাংলাদেশ নির্ধারিত মাপকাঠি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। অন্য দুটো সূচকে খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। এ কারণে ২০১৮ সালের মধ্যে তিনটি সূচকে নির্ধারিত প্রমাণ অর্জন করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জনকণ্ঠকে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান জনকণ্ঠকে বলেন, এতদিন বিশ্বব্যাংক আমাদের সমালোচনা করেছে। এবার প্রতিষ্ঠানটি স্বীকৃতি দিল। এটা প্রমাণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, এর ফলে ঋণমান সক্ষমতায় আরও এগিয়ে যাওয়া যাবে। বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জন্য এ স্বীকৃতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: