ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেমিটেন্স দেড় হাজার কোটি ডলার ছাড়াল

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ৩ জুলাই ২০১৫

রেমিটেন্স দেড় হাজার কোটি ডলার ছাড়াল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো আয় (রেমিটেন্স) প্রথমবারের মতো দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৪Ñ১৫ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে এক হাজার ৫৩০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। স্বাধীনতার ৪২ বছরে এটাই বছরে প্রবাসীদের পাঠানো সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কোন অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি। গেল তিন অর্থবছরেই ১৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অবস্থান করে প্রবাসীদের আয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনশক্তি রফতানি এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ায় এর প্রবাহ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। যা ২০১৩Ñ১৪ অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। এছাড়া এটি এক অর্থবছরের হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আসে ২০১২Ñ১৩ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার। এদিকে, একক মাস হিসেবে গেল অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসীরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা ২০১৩Ñ১৪ অর্থবছরের জুন মাসের চেয়ে সাড়ে ১৪ কোটি ডলার বেশি। ঈদকে সামনে রেখেই রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান। তিনি বলেন, সামনে ঈদ বলেই রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবে প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণেই সার্বিকভাবে বাড়ছে রেমিটেন্স। যার কারণেই ১৫ বিলিয়ন ডলারের এ রেকর্ড তৈরি হয়েছে। ছাইদুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ায় এর প্রবাহ বেড়েছে। এছাড়া বিদেশী মুদ্রার বিনিময় হার ‘স্থিতিশীল’ থাকার বিষয়টিও এতে ভূমিকা রেখেছে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, এবার প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হতে চলেছে এমন পূর্বাভাস আগেই পাওয়া যাচ্ছিল। প্রতি মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গতিধারা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছিল। গেল অর্থবছরে গড়ে প্রতিমাসে প্রবাসীরা ১৩২ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানো উৎসাহিত করায় রেমিট্যান্স প্রবাহে এ নতুন রেকর্ড গড়তে সহায়তা করেছে। এদিকে, প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও বড় উস্ফলন ঘটছে। গত ২৫ জুন প্রথমবার রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের নতুন মাইলফলকে পৌঁছায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রবাসী আয়ে উর্ধমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। একক মাস হিসেবে জুলাইতে রেকর্ড ১৪৯ কোটি ২৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এছাড়া আগস্টে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১০১ কোটি ৮০ লাখ ডলার, নবেম্বরে ১১৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ১২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে ১২৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১১৮ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, মার্চে ১৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, এপ্রিলে ১২৯ কোটি ৭৯ লাখ ডলার ও মেতে ১৩২ কোটি ১৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০০৯Ñ১০ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এক হাজার ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। ২০১০Ñ১১ অর্থবছরে ১ হাজার ১শ’ কোটি ডলার, ২০১১Ñ১২ অর্থবছরের ১ হাজার ২শ’ কোটি ডলার ও ২০১Ñ১৩ অর্থবছরে একলাফে ১ হাজার ৪শ’ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করে। তবে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর গত অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে ছন্দপতন ঘটে। ২০১৩Ñ১৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় আসে ১ হাজার ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। যা ২০১২Ñ১৩ অর্থবছরের চেয়ে ২৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার বা ১ দশমিক ৬০ শতাংশ কম। এদিকে, জুন মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে। যার পরিমাণ ৯৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ৪ ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৬২ লাখ ডলার ও বিদেশী নয় ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া জুন মাসে সবচেয়ে বেশি ৩৫ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। আকুর মে-জুন মেয়াদের বিল শোধ করতে হবে আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই থাকবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে।
×