ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিনন্দন

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩ জুলাই ২০১৫

মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিনন্দন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সকল রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্র ও রাজনীতি চর্চার সমান সুযোগ দেয়ার তাগিদ দিয়েছে দেশটি। আর এবারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি রয়েছে বলেও মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব তথ্য জানান ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। বৈঠকে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সফল আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার যে ন্যাশনাল এ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করেছে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মানবপাচার বন্ধে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে। আমরা চাই যেভাবেই হোক মানবপাচার বন্ধ করতে হবে। এছাড়া আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশন নিয়েও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি প্রশ্নে আমাদের অবস্থান আগের মতোই রয়েছে। আমরা সব সময় বলে আসছি বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থেই সব দলকে রাজনীতি ও গণতন্ত্র চর্চার জন্য সমান সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক মতপার্থক্য কমানোর জন্য বিতর্কের আয়োজন করা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রগতি রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্য লাভ করেছে। এমন অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অগ্রগতি রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক উন্নয়ন কর্মসূচী রয়েছে। বিশেষ করে ইউএসএআইডি এসব কর্মসূচী পরিচালনা করছে। এছাড়া অনেক কর্মসূচীর লক্ষ্যই হলো গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। কম্যুনিটি পুলিশকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেও বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। আমরা কম্যুনিটির উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা শুধু শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য কথা বলছি না। শ্রমিক অধিকারের কথাও বলছি। নিরাপত্তার পাশাপাশি শ্রমিক অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা শুধু পোশাক খাতের জন্য নয়, অন্য খাতের জন্যও প্রযোজ্য। তবে জিএসপি বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস পর্যালোচনা করছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আঞ্চলিক যোগাযোগের প্রসার ঘটলে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। সে কারণে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান যৌথভাবে যে আঞ্চলিক যোগাযোগের উদ্যোগ নিয়েছে এটা খুবই ইতিবাচক বলে তিনি মন্তব্য করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মার্শা বার্নিকাট বলেন, গত ২৫ জুন প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি দেশের মানবাধিকার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য রয়েছে। তবে এখনও যেসব মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি, তা অতিক্রম করতে হবে। বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরির সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, জন কেরির ঢাকা সফর এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। উল্লেখ্য, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ঢাকায় একবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে।
×