ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন পরীক্ষায় লঙ্কান ক্রিকেট

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২ জুলাই ২০১৫

নতুন পরীক্ষায় লঙ্কান ক্রিকেট

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত বছরের আগস্টে মাহেলা জয়াবর্ধনে যখন সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন আলোচনাটা তখন থেকেই। সাঙ্গাকারাও চলে গেলে কী হবে? বিশ্বকাপে দুই বন্ধু যখন শেষবারের মতো রঙ্গিন পোশাকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, কথা হয়েছে তখনও। দেখতে দেখতে লঙ্কান ক্রিকেট আজ কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে। বিদায়ের পথে আরেক দিকপাল কুমার সাঙ্গাকারা। একদিন পর পাকিস্তান সিরিজের শেষ টেস্টেই একসঙ্গে দুই মহীরূহকে ছাড়া খেলতে হবে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসদের। এটি যে কতবড় কঠিন কাজ সেটি স্বীকার করে লঙ্কাপতি বলেন, ‘একসঙ্গে মাহেলা ও সাঙ্গাকারাকে ছাড়া টেস্ট খেলতে নামা যে কতবড় কঠিন, আজ আমরা সেই বাস্তবতার সামনে। এতদিন আলাদা করে হলেও কাউকে না কাউকে পেয়েছি, কিন্তু এখন সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। জানি ওদের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে।’ টেস্ট দিয়ে ১৯৯৭-এ মাহেলা ও ২০০০ সালে সাঙ্গাকারার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমন। অর্জুনা রানাতুঙ্গা-সনাথ জয়সুরিয়া-উত্তর যুগে লঙ্কান ক্রিকেটকে টেনে এনেছেন দুই বন্ধু। বাংলাদেশে গত বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে টি২০ থেকে অবসর নেন। গত ওযায়নডে বিশ্বকাপে একসঙ্গেই তুলে রেখেছেন ওয়ানডের জার্সিটাও। বিশ্বকাপেই সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাঙ্গাকারা। কিন্তু লঙ্কান বোর্ড ও ভক্তসাধারণের অনুরোধে টেস্ট নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন। মনে হচ্ছিল আরও কিছুদিন চালিয়ে যাবেন। ফর্ম-ফিটনেসও তাঁর হয়ে কথা বলছিল। কিন্তু কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালেই সব পরিষ্কার করেন। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে বোর্ডকে (এসএলসি) জানিয়ে দেন টেস্ট থেকে অবসরের কথা। যদিও আনুষ্ঠানিকতাটুকু বাকি আছে। আসন্ন ভারত সিরিজের একটি টেস্ট খেলে মাঠ থেকে বিদায় নেবেন আধুনিক ক্রিকেটে ভদ্র মানুষের প্রতিমূর্তি সাঙ্গাকারা। কার্যত, পাকিস্তানের সঙ্গে পাল্লেকেলে টেস্ট দিয়েই দুই কিংবদন্তিকে ছাড়া নতুন জগতে প্রবেশ করবে লঙ্কান ক্রিকেট। যদিও শেষ হওয়া দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ঠিক নিজের রূপে দেখা যায়নি সাঙ্গাকারাকে। গলে হেরে যাওয়া প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫০-এর পর বাকি তিন ইনিংসে করেছেন মোটে ১৮, ৩৪ ও ০। হয়ত বিদায়ের কষ্টটা ভেতরে টের পাচ্ছেন ৩৭ বছরের মাতালে হিরো। তবে দুটি ম্যাচ দিয়ে কি কোন কিংবদন্তিকে বিচার করা যায়? দুই ভার্সন মিলিয়ে যার রান ২৬,৫৩৯, সেঞ্চুরি ৬৩টি! ২০১৪ সালেও টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ১৪৯৩ রান তারই, গত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়েছেন টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড, বয়স ৩৭ বছর, যেখানে চল্লিশ পেরিয়ে খেলে যাচ্ছেন পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক; কুমার সাঙ্গাকারার অবসরটা তাই অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। গোটা শ্রীলঙ্কাজুড়ে তৈরি হয়েছে কেমন এক শূন্যতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামতে হয়, মেনে নিতে হয় বাস্তবতা। কাউন্টি দল সারের সঙ্গে কমিটমেন্ট থাকায় আগেই বলেছিলেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে খেলবেন না। তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১-এ সমতা বিরাজ করছে। সাঙ্গাকারার পরিবর্তে শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া পাল্লেকেলের শেষ টেস্টে উপুল থারাঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন লঙ্কান নির্বাচকরা। প্রতিভাবান থারাঙ্গা দলের হয়ে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন গত বছরের আগস্টে এই পাকিস্তানেরই বিপক্ষে। কলম্বোতে ৯২ ও ৪৫ রানের চমৎকার দুটি ইনিংস খেলার পরও নিউজিল্যান্ড সফরে জায়গা হারিয়েছিলেন দিমুথ করুনারতেœর কাছে। সাঙ্গার বিদায়ে এবার হয়ত নিয়মিত হওয়ার সুযোগ থাকছে। অধিনায়ক ম্যাথুস আরও যোগ করেন, ‘এটাই বাস্তবতা, এক সময় যা মেনে তিতে হয়। সাঙ্গা-মাহেলাকে অনুপ্রেরণা মেনে নতুনদের ভাল করতে হবে, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
×