ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিংসলে-বাঙ্গুরা-সামাদের চোখে সুনীল স্বপ্ন...

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২ জুলাই ২০১৫

কিংসলে-বাঙ্গুরা-সামাদের চোখে সুনীল স্বপ্ন...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বুধবার বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, ন্যাশনাল টিম এক্সিকিউটিভ হাসান মাহমুদ এবং বাফুফের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান আহমেদ অমিতের সঙ্গে তিন বিদেশী ফুটবলার সামাদ ইউসুফ (ঘানা), ইসমাইল বাঙ্গুরা (গিনি) এবং এনকোচা কিংসলে চিগুজি (নাইজিরিয়া) বাংলাদেশে তাদের নাগরিকত্বের আবেদনের বিষয় এবং বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলার আগ্রহ পোষণ করায় এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেন। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী কোন বিদেশী ফুটবলারকে নিজ দেশের জাতীয় দলে খেলাতে হলে সে দেশের ঘরোয়া লীগে কমপক্ষে পাঁচ বছর খেলতে হবে। ডিফেন্ডার সামাদের ইতোমধ্যেই সে শর্ত পূরণ হয়ে গেছে। তিনি ঢাকা আবাহনীর হয়ে খেলছেন সাত বছর ধরে। শেখ রাসেলের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড কিংসলে এবং মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের গিনির স্ট্রাইকার ইসমাইল বাঙ্গুরার পাঁচ বছরের সময়সীমা পূরণ হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে খেলা কোন বিদেশিকে নাগরিকত্ব দিয়ে তাকে জাতীয় দলের খেলানোর পরিকল্পনা করছেন। জাতীয় দলের ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের পরামর্শ অনুযায়ী এই তিন বিদেশীকে নিয়ে জাতীয় ফুটবল দলের শক্তি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বাফুফে। এখন দেখার বিষয়, নাগরিকত্ব পেতে তাদের কত সময় লাগে। এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপনে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেন, ‘আমরা বিদেশী ফুটবলারদের বুঝিয়েছি তোমরা যদি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেল, তাহলে তোমাদের মানমর্যাদা বাড়বে। সেই সঙ্গে জাতীয় দলে খেলা দেশী ফুটবলারদের মতোই তোমরা সমান-সুযোগ সুবিধা পাবে। ওরা তাতে রাজি হয়েছে এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ফরম ফিলআপ করে তা আমাদের কাছে জমা দিয়ে গেছে। দু’-একদিনের মধ্যেই তারা নিজেদের পাসপোর্ট, ছবিসহ অন্যান্য সবকিছু জমা দেবে। তাদের এই আবেদনপত্র আমরা অচিরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’ সোহাগ আরও জানান, ‘আবেদন করলেই যে তিন বিদেশী ফুটবলার বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পাবে এবং দ্রুত পাবে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই বিষয়টিও আমরা তাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি এবং তারাও সেটা অনুধাবন করেছে। এখন দেখা যাক, কতদিনে তাদের নাগরিকত্ব পাবার বিষয়টি কার্যকর হয়। ছয় মাসও লাগতে পারে।’ যদি ছয় মাস লাগে, তাহলে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ যে এ্যাওয়ে ম্যাচটি খেলবে, তাতে তো কিংসলে-সামাদ-বাঙ্গুরাদের খেলার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়! বিষয়টি স্বীকার করলেন সোহাগ, ‘সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। কেননা নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি তো আমাদের হাতে নেই। তার পরও আমরা বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চেষ্টা করব।’ ধরা যাক এই তিন বিদেশী বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেলেন। কিছু দিন জাতীয় দলের হয়েও খেললেন। তারপর যদি আবার অন্য কোন দেশের হয়ে খেলতে চান? ‘ফিফার নিয়ম হচ্ছে একজন ফুটবলার নাগরিকত্ব বদল করে সর্বোচ্চ দুটি দেশের হয়ে খেলতে পারবে। কিন্তু কোনভাবেই একসঙ্গে তিনটি দেশের হয়ে খেলতে পারবে না। এক্ষেত্রে তাকে ফিফার কাছে অঙ্গীকারনামায় সই করে যে কোন একটি দেশ বেছে নিতে হবে।’ সোহাগের জবাব। মামুনুলদের মতো কি ধরনের সুবিধা পাবেন কিংসলে-বাঙ্গুরা-সামাদ? সোহাগ জানান, ‘জাতীয় দলে খেলাকালীন যাতায়াত ভাড়া, থাকা-খাওয়া, জিতলে বোনাস, অংশগ্রহণ অর্থ, চিকিৎসা সেবাÑ এসবই পাবেন। এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে বলতে চাই। সেটা হলো বিদেশী বলেই তারা আমাদের দেশীয় খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি কোন সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। সমান সুবিধা পাবেন।’ তবে এর বাইরে কিংসলে বাফুফের কাছে একটা আবদার করেছেন। বছরে যেন তাকে অন্তত একবার নিজ দেশ নাইজিরিয়া যাবার জন্য একটি বিমান টিকেট ফ্রি দেয়া হয়। বাফুফে তাকে আশ্বস্ত করে বলেছে, ‘আগে তুমি জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করে দেখাও। প্রয়োজনে একটা না, দুটি ফ্রি টিকেট দেয়া হবে!’ এভাবে ঢালাওভাবে বিদেশীদের নাগরিকত্ব দিয়ে বাংলাদেশ দলে খেলানো হলো বাংলাদেশের তরুণ ফুটবলাররা কি জাতীয় দলে আসার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে না বা হতাশ হয়ে পড়বে না? দ্বিমত পোষণ করলেন সোহাগ, ‘মোটেও না। স্থানীয় ফুটবলারদের এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তারা বরং আরও সিরিয়াস হবে। প্রতিযোগিতা করে এবং যোগ্যতা প্রমাণ করেই জাতীয় দলে ঠাঁই করে নিতে সচেষ্ট থাকবে তারা। তাছাড়া বিশ্বের অনেক দেশেই এভাবে বিদেশীদের নাগরিকত্ব দিয়ে খেলানো হচ্ছে। এটা নতুন কিছু না।’ বৈঠক শেষে তিন বিদেশী ফুটবলার যা বললেন, তার সারমর্ম ছিল অভিন্নÑ অনেক বছর ধরে এদেশের ঘরোয়া লীগে খেলছেন। বাংলাদেশকে তারা নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি বলেই মনে করেন। এদেশকে তারা খুব ভালবাসেন। যদি বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান, তাহলে নিজেদের ধন্য মনে করবেন এবং দলের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে খেলবেন। বাংলাদেশ দলকে সাফল্য এনেই দেয়াই হবে তাদের লক্ষ্য। এখন দেখার বিষয়, তাদের এ সুনীল স্বপ্ন কতটা সত্যি হয়।
×