ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শওকত আরা বেগম

জরুরী নাগরিক সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২ জুলাই ২০১৫

জরুরী নাগরিক সচেতনতা

একবিংশ শতাব্দী। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর নতুন নতুন আবিষ্কারে পৃথিবী ছুটছে সুদীপ্যমান। আর সেই একবিংশ শতাব্দীর মহামূল্যবান সময় আমরা উৎসর্গ করছি স্থবিরতার গর্ভে। স্থবিরতার কারণ আমাদের জানা। বিপুল মানুষের চাপে ভারাক্রান্ত ঢাকা শহর। অপ্রতুল রাস্তা, অপর্যাপ্ত গণপরিবহন, সর্বস্তরের মানুষ গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারে এমন পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থতা, ব্যাপক হারে প্রাইভেটকারের সংখ্যা বৃদ্ধি, মোটরচালিত যানবাহন (গড়ঃড়ৎরুবফ ঞৎধহংঢ়ড়ৎঃ) যেমন- বাস, কার ইত্যাদি ও মোটরবিহীন যানবাহন (ঘড়হ-গড়ঃড়ৎরুবফ ঞৎধহংঢ়ড়ৎঃ-ঘগঞ) যেমন- রিক্সা, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি একই রাস্তায় চলাচল- এই দৃশ্যমান কারণগুলো নতুন নয়। তবু প্রশ্ন জাগে এসব সীমাবদ্ধতার মাঝেও কী আমরা একটু পরিকল্পনা, একটু নাগরিক বোধ, নাগরিক দায়িত্ব দিয়ে স্থবিরতার বুকে সামান্য গতি সৃষ্টি করতে পারি না? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিত্যনতুন বিকাশে বদলেছে আমাদের জীবনের গল্প, চাহিদা, ভাবনা। হাতের মুঠোয় এসেছে আয়েশী আর বিলাসী সব উপকরণ। জীবন এখন সহজ, বৈচিত্র্যময়। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে এখন আর বাইরে যেতে হয় না, আছে অনলাইন চ্যাট করার সুবিধা। অনলাইন শপিং, অনলাইন ব্যাংকিং- নতুন নয় কোনটাই। তবু রাস্তায় কমে না মানুষের সংখ্যা, গাড়ির সংখ্যা। সবাই কি ছুটছে জরুরী প্রয়োজনে? সম্ভবত অনেকটাই বিলাসী প্রয়োজনে ছুটছে মানুষ। কারণ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের বাড়ছে ক্রয়ক্ষমতাও। তাই স্থবিরতায় জ্বালানি আর সময়ের অপচয় হলেও আবেগপ্রবণ বাঙালীর তাতে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। বাঙালী আবেগপ্রবণ জাতি হলেও সচেতন, দায়িত্বশীল জাতি নয়। আবেগপ্রবণ হয়ে সে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হবে, কিন্তু বেঁচে থাকলে সামান্য পরিশ্রম, সহনশীলতার, সচেতনতার পরিচয় দেবে না। আমরা নিজস্বতায় এত বেশি মগ্ন আজ যে শুধু নিজের চাহিদা মেটাতেই আমাদের অভিযাত্রা। স্থবিরতা আজ শুধু রাজপথে নয়; আমাদের বোধে, মনোজগতে। তাই রাষ্ট্র আমাদের কিছু দিতে পারছে নাÑ এ অভিযোগ সবার থাকলেও নাগরিক হিসেবে আমাদের যে কিছু করণীয় আছে সে বোধ আমাদের নেই। রাজপথের বর্তমান স্থবিরতা নিরসনে যেমন দরকার অধিক সংখ্যায় মানসম্মত গণপরিবহন, প্রশস্ত রাস্তা, ব্যবহার উপযোগী ফুটপাথসহ যুগোপযোগী সমন্বিত নগর পরিকল্পনা, তেমনই দরকার নাগরিকবোধ। বিলাসী প্রয়োজন মেটাতে যখন খুশি না বের হয়ে সবসময় পরিকল্পিতভাবে বের হওয়া, সম্ভবপর ক্ষেত্রে প্রাইভেটকার নিয়ে না বের হওয়া, পার্কিং লট থাকলে তা ব্যবহার করাÑ এগুলো আমাদেরই কর্তব্য। বিজ্ঞানের বেগ আমাদের আবেগ কেড়ে নিলে তা সমস্যা বৈকি। নিজের পাশাপাশি তাই ভাবতে হবে নগরজীবনের সহযাত্রীদের কথাও। যানজট নিরসনে প্রচলিত সব উদ্যোগের সঙ্গে আজ খুব বেশি প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×