ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিকম্প মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক এক হাজার ৩৩২ কোটি টাকা দেবে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১ জুলাই ২০১৫

ভূমিকম্প মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক এক হাজার ৩৩২ কোটি টাকা দেবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভূমিকম্প মোকাবেলা করতে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এজন্য ১৭ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের (প্রায় ১ হাজার ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা) একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। অন্যদিকে আর্থিক খাত উন্নয়ন সংক্রান্ত অপর একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণচুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন এবং বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডাইরেক্টর ক্রিস্টিন ই কাইমস। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চারটি মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এ ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংককে ছাড়কৃত অর্থের উপর বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে। এ ঋণের অর্থ ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধ করতে হবে। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালে জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। চুক্তি স্বাক্ষর শেষে মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট (ডিএমডিপি) এরিয়া ও সিলেট মহানগরী এলাকায় ভূমিকম্পের মতো বৃহদাকার দুর্যোগ বা জরুরী অবস্থা মোকাবেলা ও আপৎকালীন উদ্ধার কার্যক্রম সফল ও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাসমূহের দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। চারটি কম্পোনেন্টে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। কম্পোনেন্ট ওয়ান বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১ কোটি মার্কিন ডলার, কম্পোনেন্ট-২ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার, কম্পোনেন্ট-৩ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার এবং কম্পোনেন্ট-৪ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ কোটি মার্কিন ডলার। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর অন্যতম বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও দেশের অধিকাংশ এলাকা অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে শহর এলাকায় সম্ভাব্য ভূমিকম্পণের মতো ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সরকারী সংস্থাসমূহের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরী। এ প্রেক্ষিতে ইতঃপূর্বে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে ২টি পর্যায়ে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম পর্যায়ে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। ভূমিকম্প দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে এই প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইমার্জেন্সি রেসপন্স ও কমিউনিকেশন সেন্টার স্থাপন, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জরুরীভিত্তিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিবিড় প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা উপকরণ ক্রয়সহ পরামর্শ সেবা গ্রহণ, ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও ওয়্যারহাউজ নির্মাণ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আর্থিক খাত উন্নয়নে প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা ঋণ : বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের আর্থিক খাত উন্নয়নে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা) ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ জন্য মঙ্গলবার একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টিন ই-কাইমস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহসান উল্লাহ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের রফতানি ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে দীর্ঘ- মেয়াদী ঋণের সুবিধা সম্প্রসারণ, আর্থিক খাতের সুপারভিশন ও রেগুলেশন ক্ষমতা আরও শক্তিশালীকরণ, আর্থিক মধ্যস্থতা কার্যক্রমের পদ্ধতিগত মানোন্নয়ন এবং মূলধন সঞ্চয়ন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে, যা আর্থিক খাত শক্তিশালী করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত উৎপাদনশীল ফার্ম বিশেষ করে মাজারি আকারের রফতানিমুখী ফার্মসমূহ ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্পটির রফতানি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ নি¤œ বিনিয়োগজনিত ক্ষতি হ্রাস করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সার্বিকভাবে আর্থিক খাত আর শক্তিশালী হবে, যা আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাসহ আর্থিক মধ্যস্থতা কার্যক্রমের উন্নয়নের মাধ্যমে অন্তর্ভক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।
×