ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান ও পাইলটের এখনও সন্ধান মেলেনি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১ জুলাই ২০১৫

বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান ও পাইলটের এখনও সন্ধান মেলেনি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ উত্তাল বঙ্গোপসাগরে পাইলটসহ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জঙ্গী বিমান এফ-৭ এর মঙ্গলবার পর্যন্ত কোন খোঁজ মেলেনি। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরের ব্যাভো পয়েন্টে সোমবার বেলা এগারোটার পর এ যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়া থেকে বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জাহাজের তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। এ যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কোন কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লে. চৌধুরী তাহমিদ কাদের রুম্মানেরও কোন খোঁজ মেলেনি। তার বাবা-মাসহ স্বজনরা অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। নৌবাহিনী সূত্র জানায়, তাদের জাহাজ বিএনএস সুরভী, বিএনএস মধুমতি, বিএনএস অদম্য এবং কোস্টগার্ড ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আরও চারটি জাহাজ বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান ও এর পাইলটের খোঁজে টানা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। আকাশ পথে বিমানবাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে কোথাও এর কোন আলামত পাওয়া যায় কিনা। বন্দর সূত্রে জানানো হয়, ব্যাভো পয়েন্টে পানির গভীরতা খুবই বেশি। ঢেউয়ের আঘাতও সেখানে উত্তাল অবস্থায় থাকে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় উত্তালতা আরও একটু বেশি। এ অবস্থায় উদ্ধার অভিযান পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে। সোনার সংবলিত নৌবাহিনীর জাহাজগুলোতে ধরা পড়ছে না বিধ্বস্ত বিমানটির অবস্থান। তবে তারা নিশ্চিত হয়েছেন, পাইলট ফ্লাইট লে. তাহমিদ বিমানটি দুর্ঘটনার আগে হয়ত বের হতে পারেননি। কারণ, গত দুদিন ধরে সাগরের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চলেছে। কোথাও তার সন্ধান মেলেনি। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বিধ্বস্ত বিমানটির সঙ্গে তিনিও রয়েছেন। সে কারণে তাঁর বেঁচে থাকার আর কোন সম্ভাবনা থাকতে পারে না। তাহমিদের মা গৃহিণী ও বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা বর্তমানে বিমানবাহিনীর চট্টগ্রামস্থ জহুরুল হক ঘাঁটিতে পুত্রের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা তাঁদের সান্ত¡না দিয়ে চলেছেন। কিন্তু পুত্রহারা মা-বাবার অশ্রু বাঁধ মানছে না। মা প্রায় উন্মাদের মতো প্রলাপ বকছেন। সঙ্গে স্বজন যারা রয়েছেন তাদের কান্নাও থামাবার নয়। মা-বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান ফ্লাইট লে. তাহমিদ বিমানবাহিনীর একজন মেধাবী অফিসার হিসেবে স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর বন্ধুরা বলেছেন, স্কুল ও কলেজ জীবন থেকে তিনি মেধাবী ছিলেন। আকাশে উড়ে বেড়ানোর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন বিমানবাহিনীতে। কিন্তু যুদ্ধজাহাজ এফ-৭ বিধ্বস্ত হলো তাঁকে নিয়ে। বঙ্গোপসাগরে আছড়ে পড়েছে এ বিমানটি। এরপর থেকে তাহমিদ ও তাঁর চালিত এ বিমানটি নিখোঁজ রয়েছে। তল্লাশি অভিযান মঙ্গলবার সীতাকু- উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে কোথাও কোন আলামত পাওয়া যায় কিনা এ উদ্দেশ্যে। সোমবার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এর ডানাসহ তিনটি খ-িত অংশ ভেসে ওঠে। যা ইতোমধ্যে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে। বিমানবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে, এ ধরনের ৬টি বিমানের মধ্যে এটি ছিল একটি। কেন, কি কারণে এ বিমানটি বিধ্বস্ত হলো তা এখনও অজানা। তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু সে কমিটি এর কারণ উদঘাটন করতে পারবে কিনা তা এখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ডের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, সাগর উত্তাল থাকায় নিখোঁজ পাইলট তাহমিদ রুম্মানের খোঁজ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। কোস্টগার্ডের পূর্বজোনের অতিরিক্ত কমান্ডার এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সাগর প্রচ- উত্তাল। তাই সীমিতভাবে তল্লাশি অভিযান চলছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আলেকজান্ডারের ওয়াচম্যান মো. বাবুল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সোমবার প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে বিমানটি সাগরে পড়তে তিনি দেখেছেন। এর পর পরই তিনি জাহাজে কর্মরত তার ভাই হায়দার আলীকে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানান। হায়দার আলী বিষয়টি কোস্টগার্ডকে অবহিত করলে তা সর্বত্র প্রচার হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় তল্লাশি। কিন্তু সোমবার সাগর উত্তাল ছিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তা স্থগিত রাখা হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও শুরু হয়েছে অনুরূপ অভিযান এবং এর বিস্তৃতি ঘটানো হয়েছে দুর্ঘটনাস্থলের চতুর্দিকে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যুদ্ধবিমান ও এর পাইলটের কোন সন্ধান মেলেনি। এ সংক্রান্তে অভিজ্ঞ একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, বিমানটি আড়াআড়ি বা সোজা হয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আকাশ থেকে সোজাসুজি সাগরে পড়লে জোরালো গতির কারণে এটি সাগরের তলদেশে গেঁথেও থাকতে পারে। আর ভিন্নভাবে পড়লে তা সাগর তলদেশে স্রোতের কারণে দূরে সরে যেতে পারে। আর সেই দূরে সরে যাওয়ার স্থানটিসহ সবকিছু নিয়ে তল্লাশি অভিযান চলছে নৌ, বিমান ও কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধারকারী দলের। উল্লেখ্য, সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় পতেঙ্গা বিমানবন্দর এলাকা সন্নিহিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে এফ-৭ যুদ্ধবিমানটি নিয়ে উড়াল দিয়েছিলেন ফ্লাইট লে. চৌধুরী তাহমিদ কাদের রুম্মান। উড্ডয়নের ৪০ মিনিটের মধ্যে বিমানটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পর মুহূর্তে খবর পাওয়া যায় এটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। তখন থেকেই বিধ্বস্ত বিমান ও এর পাইলটের খোঁজ মিলছে না।
×