ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখার

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা মন্ত্রীদের উচিত পদত্যাগ করা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১ জুলাই ২০১৫

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা মন্ত্রীদের উচিত পদত্যাগ করা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারিক স্বচ্ছতা ও দেশের স্বার্থে নিজেদের জনপ্রিয়তা রক্ষার্থে যেসব মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। মঙ্গলবার ১২টায় রাজধানীর ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির সম্মেলন কক্ষে জাতীয় যুব-সততা জরিপ ২০১৫ এ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যদিও জনাব মায়ার মন্ত্রী পদের বিষয়টি বিচারাধীন তবুও যে কথাটি বলা যায়, তা হলো দেশের স্বার্থে এবং নিজের জনপ্রিয়তার স্বার্থে দুর্নীতির অভিযোগ উঠা মন্ত্রীদের পদত্যাগ করা উচিত। কেননা এতে করে আইনী লড়াইটা ভাল হয়। যদি তারা জয়ী হন পরবর্তীতে জনগণই তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়ে আসবেন। এর ফলে রাজনীতিবিদ হিসেবে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা ও জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এসব মন্ত্রীদের পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত। সম্প্রতি অভিযোগ ওঠা গম কেলেঙ্কারি নিয়ে তিনি বলেন, ভেজাল গম আমদানির বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মন্ত্রী যে প্রত্যাশিত মানের গম আমদানি করতে পারেনি তা স্পষ্ট ও প্রমাণিত। আর এটাও প্রমাণিত যে সেখানে ভেজাল গম আমদানি করা হয়েছে। সরকারের উচিত নিজেদের স্বার্থে ও দেশের স্বার্থে গুরুত্ব সহকারে অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা এবং অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসা। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘তবে আমার মনে হয় রাজনীতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, সাধারণ মানুষের রাজনীতির প্রতি যাতে অনিহা তৈরি না হয় এই স্বার্থেও তাদের পদত্যাগ করা উচিত। আমাদের দেশে যদিও এ রকম নজির নেই। তাই সম্প্রতি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা অন্তত দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্যও পদত্যাগ করতে পারেন। এতে তাদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়বে। রাজনীতি কলুষমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। অনুষ্ঠানে জরিপ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। জাতীয় যুব জরিপ ২০১৫ টিআইবি চলতি বছরের ২২ এপ্রিল থেকে ৭ মে’র মধ্যে পরিচালনা করা হয়। দেশের ৩ হাজার ৬৫৬ জন ধনী-গরিব সকল শ্রেণীর যুব নর-নারীদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে এ জরিপ করা হয়। ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের যুব ধরে এ জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আগে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক জরিপের অংশ হিসেবে যুব সততা জরিপ পরিচালনা করে টিআইবি। জরিপ সম্পর্কে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জরিপে উঠে এসেছে যে, শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় দেশে দুর্নীতি বাড়ছে। যুব জরিপে যুবকদের কাছে তাই মনে হচ্ছে। শুধু দেশের নিয়ম-কানুনের খারাপ অবস্থার কারণে যুবকরা বাধ্য হয়ে সৎ হওয়ার চেয়ে অসৎ হয়ে ধনী হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মনে করছে যে যুবসমাজের মাঝে এ আগ্রহ ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় সততা নিয়ে বড় বড় কথা বলেন ও ওয়াদা করেন। কিন্তু এসব ওয়াদা সময় মতো পূরণ না করায় যুবসমাজ রাজনীতিবিদদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যুবকদের ধারণা যে রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেবা প্রদান ও দায়িত্ব পালনে সততার ঘাটতি রয়েছে। জরিপে বলা হয়, অধিকাংশ যুবরাই ধনী হওয়ার চেয়ে সৎ হওয়াকে জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। অসৎ ব্যক্তির চেয়ে সৎ ব্যক্তির জীবনে সফল হওয়া সম্ভব বলে মনে করছে যুবরা। বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সেবা খাতে বিদ্যমান সততা সম্পর্কে যুবকদের ধারণা হচ্ছে, রাজনীতিবিদদের প্রতি সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক ধারণা এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভূমি প্রশাসন, বিচারিক সেবাসহ কয়েকটি খাত রয়েছে। যুবকরা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে চাকরির জন্য ঘুষ প্রদান স্বাভাবিক কর্মকা- হিসেবে মনে করছে। যা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ মনে করছে টিআইবি। যুবকরা দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের জন্য সততার অভাবকে চিহ্নিত করেছে। প্রতিবেদনে দেশে দুর্নীতি দমন ও সততা প্রতিষ্ঠায় ৮২ ভাগ যুবক তাদের ভূমিকা রয়েছে বলে মতামত দিয়েছে। ৮০ ভাগ যুবক কোন দুর্নীতির মুখোমুখি হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার চিন্তা করেন। প্রতিবেদনে দুর্নীতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা, শাস্তি থেকে অব্যাহতির সংস্কৃতি বন্ধ, যুবকদের মাঝে সততার প্রসার ও চর্চার বিষয়টিকে জাতীয় যুব নীতিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদানসহ ৬ দফা সুপারিশ করা হয়। এছাড়া জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সততা প্রতিষ্ঠায় যুবদের ভূমিকা অন্তর্ভুক্তির দাবি জানায় টিআইবি। অনুষ্ঠানে সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতি জেনেও বাধ্য হয়ে অন্যায় কাজে জড়াচ্ছে যুবরা। জেনেশুনেই যুবকদের দুর্নীতিকে মেনে নিতে হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধে যুবরা চর্চা করে না। দুর্নীতিমুক্ত সৎ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। শুধু বড় বড় নৈতিকতার আলাপ করা আর নিজের মধ্যে তার ব্যবহার না করাও অসততা। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির উপ-পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ এ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক রিজওয়ান উল আলম উপস্থিত ছিলেন।
×