ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছয় বছরে আসবাবে রফতানি বেড়েছে সাতগুণ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৩০ জুন ২০১৫

ছয় বছরে আসবাবে রফতানি বেড়েছে সাতগুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বদলে গেছে দেশের আসবাবশিল্প। বিশ্বের বুকে জায়গা করে নেয়া এ শিল্পে প্রতিবছরই বাড়ছে রফতানির পরিমাণ। গত ছয় বছরের ব্যবধানে রফতানি বেড়েছে প্রায় সাতগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রফতানির ক্ষেত্রে দু-একটি পণ্যের ওপর নির্ভর না হয়ে একাধিক পণ্যের দিকে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আসবাবশিল্পের এগিয়ে যাওয়া খুবই ইতিবাচক। দেশের আসবাবশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের দাবি, গুণগত মান, যুগোপযোগী নক্সায় আসবাব তৈরির ফলে বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের আসবাব প্রিয় হয়ে উঠছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৬১ কোটি ১৬ লাখ ৩২ হাজার টাকার আসবাব রফতানি হয়। আর ২০১৪-১৫ (মে পর্যন্ত) অর্থবছরে ৩শ’ ৪৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার আসবাব রফতানি হয়েছে। এ হিসেবে গত ছয় বছরের ব্যবধানে ছয় দশমিক ৩৫ ভাগ আসবাব রফতানি বেড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবোধ দেবনাথ বলেন, বাংলাদেশে আসবাবশিল্পে একটি বিপ্লব হয়েছে, এটি বলা যেতেই পারে। এভাবে রফতানি বাড়তে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে শুধু দু-একটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে। তিনি জানান, তবে এ ধারবাহিকতা ধরে রাখতে হলে আসবাবশিল্পের প্রদর্শনী বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারকেও সহযোগিতা করতে হবে। এর পাশাপাশি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগর ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ আসবাবপত্র রফতানিকারক সমিতির চেয়ারম্যান কেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, বিশ্বের বাজারে টিকে থাকতে হলে কয়েকটি গুণ থাকা দরকার। সেই সব গুণাবলী আমাদের দেশের আসবাবশিল্পে বিনিয়োগকারীদের মাঝে রয়েছে। যার ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এ খাত। তিনি জানান, এখন কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি সব জায়গাতেই আসবাবের চাহিদা বেড়েছে। এর ফলে লাখো মানুষের কর্মসংস্থানও বাড়ছে। বর্তমানে এ শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ জড়িত রয়েছেন। দেশের বাজারেও কিন্তু আসবাবের কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম এইচ রহমান বলেন, সময়ের চাহিদায় এ শিল্পে যেমন পরিবর্তন এসেছে, ঠিক তেমনি রয়েছে প্রশিক্ষিত জনবল। তাই দেশের বাজার জয় করে বিদেশীদের মনেও জায়গা করে নিয়েছে এ শিল্প। তবে বিদেশে আসবাব রফতানিতে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে বলে জানান এ শিল্প উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, কাঠের শুল্ক ও কর মোটামুটি হলেও, বোর্ড ও ফেব্রিকসের কর অনেক বেশি। বর্তমানে এটি বড় বাধা। কেননা, অনেক আসবাব তৈরিতে কাঠের চেয়ে বোর্ডের ব্যবহার বেশি করতে হয়। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ জন্য সরকারের উচিত নগদ সহায়তার পাশাপাশি কাঠ, বোর্ড ও ফেব্রিকসের আমদানি শুল্ক কমানো। তাহলে এ শিল্প আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। ইপিবি সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৬১ কোটি ১৬ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১শ’ ৩৩ কোটি ২৪ লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১শ’ ৫২ কোটি ১৬ লাখ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২শ’ ১৪ কোটি ৬৭ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩শ’ ৩৩ কোটি ছয় লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩শ’ ৩০ কোটি ৯৩ লাখ ও ২০১৪-১৫ (মে পর্যন্ত) ৩শ’ ৮৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার আসবাব বিদেশে রফতানি হয়েছে। আসবাব ব্যবসায়ীরা জানান, নিত্যনতুন নকশা, মানসম্মত কাঠ আর কারিগরদের দক্ষতায় তৈরি করা এসব আসবাবপত্রের মান খুব ভাল। এসব আসবাবপত্রের পরিচিতি যত বাড়বে তত রফতানির পরিধিও বাড়বে। ১০ থেকে ১৫ বছর আগে আসবাবপত্রশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের কারিগররা। কিন্তু এখন সম্পূর্ণই ভিন্ন চিত্র। যন্ত্রাংশ, বিনিয়োগ, দক্ষ কারিগর, কারখানাসহ সবকিছুই বদলে গেছে। দেশে আসবাব নির্মাতা ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- হাতিল, আকতার, ব্রাদার্স, পারটেক্স, নাভানা, অটবি। ১৯৯৭ সাল থেকে আসবাবপত্র বিদেশে রফতানি শুরু হয়। বর্তমানে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, জার্মানিসহ প্রায় ১৬টি দেশে আসবাবপত্র রফতানি হচ্ছে।
×