ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের নেতৃত্বে এআইআইবি ব্যাংকের যাত্রা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৩০ জুন ২০১৫

চীনের নেতৃত্বে এআইআইবি ব্যাংকের যাত্রা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনের নেতৃত্বে নতুন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এশিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) যাত্রা শুরু হয়েছে। সোমবার এ ব্যাংকে যোগ দিতে চীনের বেজিংয়ের গ্রেট হলে বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধি এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। চীনের নেতৃত্বাধীন এই ব্যাংকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া যোগ দিলেও যোগ দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। বরং ব্যাংকটির প্রশাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাতে যোগ না দেয়ার জন্য মিত্র দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের শেষ দিকে আরর সাতটি দেশ যোগদানের কথা রয়েছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চীনের বেজিংয়ে এশিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি)’র উপসচিব একেএম মতিউর রহমান ও চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। জানা গেছে, এআইআইবি ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৬৬ কোটি ৫ লাখ ডলার পরিশোধ করবে, যা মোট মূলধনের শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ। ১৩ কোটি ২১ লাখ ডলার সমান পাঁচ কিস্তিতে এটি পরিশোধ করা হবে। আর এই পরিমাণ মূলধনের জন্য বাংলাদেশ মোট ভোটারের শূন্য দশমিক ৮৩ ভাগ অংশ পাবে। জানা গেছে, ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকটিতে ৫৭টি দেশ সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মোট ১০০ কোটি ডলারের মূলধনের মধ্যে চীন একাই অর্ধেক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ার থাকবে ভারতের। এশিয়া অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন সামিটে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ ব্যাংক গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর আলোচনার একপর্যায়ে গত বছরের অক্টোবরের শেষে এআইআইবি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশসহ ২১টি এশীয় দেশ একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করে। জানা যায়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপের সঙ্গে স্থলপথের সংযোগ স্থাপন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থায়ন করাই হবে প্রস্তাবিত এই ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। ব্যাংকটিতে সিংহভাগ তহবিলের জোগান দেবে এর মূল উদ্যোক্তা চীন। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে প্রাচীনকালে ইউরোপ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপনকারী সিল্ক রোডের মতো নতুন আরেকটি মহাসড়ক নির্মাণের ওপর জোর দেবে। পাশাপাশি চীনের রাজধানী বেজিং থেকে উপসাগরীয় দেশ ইরাকের রাজধানী বাগদাদ পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনসহ এই অঞ্চলে নানা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের জোগান দেবে ব্যাংকটি। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছতে হলে এখন থেকে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুত, সড়ক, বন্দর, টেলিযোগাযোগ, পয়ঃনিষ্কাশন ও সেচ এই ছয় খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ জন্য দশ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ হওয়া দরকার। সে হিসেবে প্রতিবছর বিনিয়োগ হওয়া উচিত এক হাজার কোটি ডলার। কিন্তু এখন প্রতিবছর অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে ৪০০ কোটি ডলার। সে হিসেবে ঘাটতি রয়েছে ৬০০ কোটি ডলার।
×