ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারী নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যে তোপের মুখে এরশাদ, পরে প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩০ জুন ২০১৫

নারী নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যে তোপের মুখে এরশাদ, পরে প্রত্যাহার

সংসদ রিপোর্টার ॥ নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পীকার ও উপনেতাকে ‘শোপিস’ বলায় জাতীয় সংসদে তীব্র ক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে। এ সময় কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন। বিষয়টি নিয়ে এরশাদ দুঃখ প্রকাশ করলেও বক্তব্য শেষে তার এই অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করে দেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে এরশাদের এমন বক্তব্যের জন্য সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ বলেন, হয়ত তার (এরশাদ) ওই শব্দচয়নটি সঠিক ছিল না। এ জন্য সবার কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনার সমাপনী দিনে ঘটনাটি ঘটে। আলোচনায় অংশ নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, দেশের অনেকেই নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। কিন্তু বাস্তবে তা কী ঠিক? শহীদ মিনারে, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারীরা যেতে পারেন না, নিগৃহীত হন। আমরা কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পীকার ও সংসদের উপনেতা নারীর কথা উদাহরণ দেই। কিন্তু আসলে তারা তো ‘শোপিস’। দেশের বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। একথা বলার পরপরই সরকারী দলের নারী সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসন থেকে দাঁড়িয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। হৈ-চৈ, উচ্চৈস্বরে চিৎকার করে ‘শোপিস’ শব্দটি ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাতে থাকেন। স্পীকার বার বার সবাইকে চুপ করার অনুরোধ করলেও প্রতিবাদের পাল্লা বাড়তে থাকলে অধিবেশন কক্ষ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তীব্র প্রতিবাদের মুখে এরশাদ বলেন, আমার কথায় কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। আমি ওই শব্দটি প্রত্যাহার করে নিলাম। সাবেক এই পতিত রাষ্ট্রপতির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এইচ এম এরশাদের বক্তব্যের মধ্যে থাকা সকল অসংসদীয় শব্দ এক্সপাঞ্জ করে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরশাদ যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন তাঁর পাশেই ছিলেন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, বাজেট হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের দর্শন। বর্তমান সরকারের দর্শন দুটো- এক হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখেছেন, বাস্তবায়িত করবেন কীভাবে, সেই চ্যালেঞ্জ আপনাকে নিতে হবে। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আপনাকে পারতেই হবে। পুঁজিবাজারে কেলেঙ্কারি ঘটেছে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছে। দুর্নীতির প্রসার ঘটেছে। এসব নিয়ে বিশ্বের নানাস্থানে আমাদের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচার হচ্ছে। ৫ ভাগ ঘাটতির গর্ত থেকে উঠতে না পারলে সুফল পাওয়া যাবে না। বাজেটে ঘাটতি বেড়েই চলেছে, কমছে না। ঘাটতি শুধু বাজেটেই নয়, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও। তিনি বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করে বন্ধুত্বের রাজনীতি করলেই দেশ কাক্সিক্ষত অগ্রগতির দিকে ধাবিত হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেল, কারোর বিচার হচ্ছে না। বিদেশে অর্থ পাচারের কথা শুনছি। সদিচ্ছা থাকলে যারা পাচার করেছে তাদের খুঁজে বের করে টাকা ফেরত আনা সম্ভব। এটা করতেই হবে এবং পাচারকারী শয়তানদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এখন দেশ থেকে মানুষ পাচার হচ্ছে, সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে, গণকবরে স্থান হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয়ে গেছে, বিশ্বের এক শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশের একটিরও নাম নেই। তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। শিক্ষিত জাতি গঠন না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া হবে কীভাবে? এরশাদ বলেন, মাদকের ছোবলে বাংলাদেশ আজ জর্জরিত, রক্তাক্ত। যারা মাদকমুক্ত করবে তারাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি মা, মা হয়ে দেশের সন্তানদের মাদকের হাত থেকে রক্ষা করুন। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ফুটপাথ দখলসহ নানা অপকর্ম চলছে। এসব শক্ত হাতে দমন করতে হবে। প্রাদেশিক সরকারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় অকার্যকর শহর। যানজটে লাখ লাখ লিটার তেল পুড়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ঢাকাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ থেকে ঢাকাকে বাইরে নিতে হলে প্রাদেশিক সরকার গঠন করতে হবে। সাত বিভাগে সাতটি হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করুন, দেশের মানুষ বিচার পাবে। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এরশাদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলতে গিয়ে অনেকে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পীকারসহ অন্যান্য নারী মন্ত্রীর উদাহরণ তুলে ধরেন। কিন্তু তারাতো ‘শো পিস’, বাইরের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ কথা বলার পরই সকল নারী সংসদ সদস্য ক্ষোভ-প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। তারা ‘শোপিস’ শব্দটি প্রত্যাহারের দাবি জানাতে থাকেন। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি তার ওই শব্দটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। বক্তব্য শেষে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এইচ এম এরশাদের অসংসদীয় শব্দ এক্সপাঞ্জ করলে নারী সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অভিনন্দন জানান।
×