ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারীদের নিয়ে হিযবুত তাহ্্রীর জঙ্গী দাওয়াতি টিম

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩০ জুন ২০১৫

নারীদের নিয়ে হিযবুত তাহ্্রীর জঙ্গী দাওয়াতি টিম

শংকর কুমার দে ॥ ‘দাওয়াতি টিম’। জঙ্গী তৎপরতায় নারী জঙ্গীদের ইউনিট। নারী জঙ্গীদের ইউনিটটি গঠন করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর। পবিত্র রমজান মাসে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের দাওয়াত দেবে। ধর্মের নামে উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য দাওয়াত দেয়ার নামে মাঠে নামানো হয়েছে নারী জঙ্গী ইউনিটকে। এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে পবিত্র রমজান মাসকে। নারী জঙ্গীদের দাওয়াতি টিম ইউনিট গঠনের মাধ্যমে নারী জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানান, বোরকা পরিহিত অবস্থায় নারী জঙ্গীদের দাওয়াতি টিমের মহিলা সদস্যরা দাওয়াত দিতে বের হয়। মুখে থাকে হিজাব পরিহিত। তাদের বোরকার ভেতরে থাকে প্রচারপত্র, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি। এতে ইসলাম বা ধর্মের দাওয়াত দেয়ার নামে সরকারবিরোধী প্রচার করে নারী জঙ্গীদের ইউনিট। খিলাফত প্রতিষ্ঠায় নারীদের ভূমিকা, সরকারকে ইসলামবিরোধী ইত্যাদি অপপ্রচার করে বাড়ির গৃহিণীদের বিভ্রান্ত করছে নারী জঙ্গীদের দাওয়াতি টিম। গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা থেকে মহিলাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে নারী জঙ্গীদের ইউনিট। জঙ্গী তৎপরতায় নারীদের সম্পৃক্ত করতে ভূমিকা রাখছে তারা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের মেধাবী ছাত্রীদের কিভাবে দলে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেই লক্ষ্যে একটি ‘দাওয়াতি টিম’ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ থেকে পাস করা এক নারীর নেতৃত্বে এ দাওয়াতি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে খবর পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, হিযবুত তাহরীর নারী জঙ্গীদের দাওয়াতি টিমের অনেক সদস্যই রাজধানী ঢাকার চেয়ে জেলা ও উপজেলা শহর ও গ্রাম-গঞ্জকে বেছে নিয়েছে। বিশেষ করে শহরের চেয়ে গ্রামের মেয়েদের মগজ ধোলাই করা সহজ এবং নিরাপদ ও সুবিধাজনক। তবে রাজধানী ঢাকায় হিযবুতের পুরুষ ইউনিটগুলো বেশ তৎপরত। এর মধ্যে ছাত্রদের নিয়ে গঠিত ইউনিটটি শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদের সামনে ক্ষিপ্রগতিতে হ্যান্ডবিল, প্রচারপত্র, পুস্তিকা বিতরণ করে দ্রুতগতিতে সটকে পড়ার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। জঙ্গী তৎপরতার অভিযোগে ২০০৯ সালের অক্টোবরে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপরও তাদের তৎপরতা থেমে নেই। প্রতি সপ্তাহেই রাজধানীসহ দেশের কোথাও না কোথাও সংগঠনটির কর্মীরা জড়ো হচ্ছে। শুধু জড়ো হচ্ছে এমন নয়, তারা মিছিল ও সমাবেশ করার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। সংখ্যায় কম হলেও তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও প্রচারপত্র বিলি করে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই দ্রুত সটকে পড়ছে। প্রায়শ সংগঠনটির পোস্টারও চোখে পড়ে বিভিন্ন স্থানের দেয়ালে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের উদ্যোগে প্রকাশিত প্রচারপত্র, পোস্টার ও বিভিন্ন প্রকাশনায় সরকারের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি বিষোদ্গার করছে হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা। বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যায়িত করে উৎখাতের আহ্বান জানানো হয় এ সব প্রচারপত্রে। প্রচারপত্রে বলা হয়, সেইসব প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগ দিন, যারা ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। একটি কাফেলা প্রায় যাত্রা শুরুর পথে, সুতরাং সেই সফরে যোগ দিন। গণমাধ্যমে পাঠানো প্রচারপত্রের সঙ্গে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আমির শেখ আতা ইবনে খলিল আবু আর রাশতার বক্তব্যের একটি অডিও সিডিও সরবরাহ করা হয়। হিযবুত তাহরীরের বেপরোয়া আচরণের কারণে পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরসহ জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। তারা আগের মতো আর সংগঠিত হতে পারবে না। তারা কখনও হিযবুত তাহরীর, আবার কখনও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আবার কখনও বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ ইত্যাদি নামের ব্যানারে তৎপরতা চালালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ইউনিট সজাগ ও সতর্ক। জঙ্গী তৎপরতায় সম্পৃক্ত করার জন্য নারী জঙ্গীদের নিয়ে দাওয়াতি টিম গঠন করার খবর পাওয়া গেছে। বোরকা, হিজাব পরা মহিলাদের শনাক্ত করাটা কঠিন এবং নারী জঙ্গীদের দিয়ে জঙ্গী তৎপরতায় নিরাপদ ও নিষ্কণ্টক মনে করেই তাদের দিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে এই ধরনের তৎপরতার সুযোগী বেশি হওয়ায় তার সুবিধাটা নিচ্ছে বলে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
×