ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনী জটিলতায় ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স আইপিও প্রক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৯ জুন ২০১৫

আইনী জটিলতায় ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স  আইপিও প্রক্রিয়া

অর্র্র্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আইনী জটিলতায় পড়েছে কোম্পানি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনপত্র ও চাঁদা জমা নেয়ার প্রক্রিয়া। আগামী ৩০ জুন মঙ্গলবার থেকে কোম্পানিটির আইপিওর আবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, কাল-পরশু নাগাদ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন স্থগিত করার আবেদন জানাতে পারে। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অনুমোদন ছাড়াই পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠায় আইপিও নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণেই আইপিওর আবেদন গ্রহণ স্থগিত, এমনকি আইপিওটি প্রত্যাহার করার আবেদন করতে হতে পারে। দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের প্রধান উদ্যোক্তা। কোম্পানিটিকে আইপিওতে নিয়ে আসার জন্য ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে প্রাইম ফিন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। এর আগে গত ১২ মে বিএসইসির ৫৪৩তম সভায় ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের আইপিওর অনুমোদন দেয়। এর ভিত্তিতে কোম্পানিটি গত ৪ জুন আবেদনপত্র ও চাঁদার টাকা জমা নেয়ার সময়সূচী ঘোষণা করে। ঘোষণা অনুসারে ৩০ জুন চাঁদা জমা নেয়া শুরু হয়ে ৯ জুলাই পর্যন্ত চলার কথা। আইপিওর মাধ্যমে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১ কোটি ৭৭ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করার কথা। জানা গেছে, আইন অনুসারে কোন বীমা কোম্পানি অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন পরিবর্তন করতে চাইলে তার জন্য আইডিআরএ’র অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স তা করেনি। এই কারণেই সংস্থাটি তীব্র আপত্তি জানিয়েছে কমিশনের কাছে। যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মস পরিদফতর (আরজেএসি) জানা গেছে, তাদের কাছে রক্ষিত নথি অনুসারে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি টাকা। কোম্পানিটির লাইসেন্স নেয়ার সময়ে বিদ্যমান আইন অনুসারে পরিশোধিত মূলধন হওয়ার কথা ১৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স আইপিও অনুমোদনের জন্য জমা দেয়া নথিপত্রে অনুমোদিত মূলধন দেখিয়েছে ১০০ কোটি টাকা। কোম্পানির সংঘস্মারক এবং সংঘবিধিতে পরিশোধিত মূলধনও ১০০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। এতে উদ্যোক্তাদের অংশ ৬০ কোটি টাকা আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে আইপিওর প্রসপেক্টাসে পরিশোধিত মূলধন দেখানো হয়েছে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আইপিওর মাধ্যমে ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হলে পরিশোধিত মূলধন ৪৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংঘস্মারক ও প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা পরিশোধিত মূলধনের তথ্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাছাড়া মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আইডিআরএ থেকে নেয়া হয়নি আগাম অনুমোদন। আইনের এমন লংঘনে প্রচ- ক্ষুব্ধ আইডিআরএ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসি এবং আরজেএসসিকে চিঠি দিয়েছে। বিএসইসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা ওই অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের আইপিও অনুমোদন কেন দিয়েছে। উত্তরে বিএসইসি বলেছে, কোম্পানিটি আরজেএসসির সত্যায়িত করা সংঘস্মারক ও সংঘবিধির কপি দেখেই আইপিওর অনুমোদন দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানি বীমা আইনের কোন ধারা লংঘন করে থাকলে তারা (আইডিআরএ)-এর বিরুদ্ধে যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ বিষয়ে বিএসইসির কোন করণীয় নেই। বিএসইসির চিঠির উত্তরে আইডিআরএ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সকে আইপিওর চাঁদা গ্রহণ স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেয়। নইলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয় কোম্পানিটিকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি বিএসইসির কাছে আইপিওর চাঁদা গ্রহণ স্থগিত করার অনুরোধ জানাতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান উদ্যোক্তা মেঘনা গ্রুপের কর্ণধার মোস্তফা কামাল ও ও তার পরিবারের সদস্যরা। প্রসপেক্টাসে দেয়া তথ্য অনুসারে, মোস্তফা কামাল কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আছেন তার স্ত্রী বিউটি আক্তার, মেয়ে তাহমিনা বিনতে মোস্তফা, তানজিমা বিনতে মোস্তফা, ছেলে তানভির আহমেদ মোস্তফা এবং জামাতা তায়িফ বিন ইউসুফ। মোস্তফা কামাল ও তার পরিবার যৌথভাবে কোম্পানিটির ৩৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
×