ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমাদের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৯ জুন ২০১৫

আমাদের দুর্ভোগ

আমাদের দুর্ভোগ যে আর কাটে না। এই তো কয়েক সপ্তাহ আগে গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা হয়েছিল। এখন টানা বর্ষণে তাদের বসতবাড়িই পানিতে ছয়লাব। আমাদের দেশে শীতে এখনও বহু মানুষ বস্ত্র সঙ্কটে ভোগে, শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য বহুজনের নেই। তাই শীতের প্রকোপে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। বর্ষা না হলে খরায় প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত। আবার ভারি বর্ষণে নানা দুর্ভোগে জীবন অচল হয়ে পড়ার দশা হয়। প্রকৃতির স্বাভাবিক আচরণই আমাদের জীবনের ওপর দিয়ে অস্বাভাবিকতার ঝা-া উড়িয়ে যায়। গত কয়দিনের ভারি বর্ষণে রাজধানী শহরটির যে বিপর্যস্ত বিপদগ্রস্ত অবস্থা তা স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদেরই অপরিণামদর্শিতাকে। ঢাকার খাল ও জলাশয়গুলো ভরাট করে ভবন তৈরি করছি! এখন টানা বৃষ্টিতে পানি সরবে কোথায়? তাই চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। নিষ্কাশন ব্যবস্থায়ও ত্রুটি বিদ্যমান। ওদিকে পাহাড়ে শুরু হয়ে গেছে যেন মৃত্যুর মিছিল। শুক্রবার পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে কক্সবাজার ও বান্দরবানে পাহাড়ী ঢল-ধস ও গাছচাপায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিম্নচাপের প্রভাবে আষাঢ়ের বিরামহীন বর্ষণে গোটা দেশ বিপর্যস্ত। তলিয়ে গেছে শত শত একর ফসলি জমি। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী। এটা অনস্বীকার্য যে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই সংবাদপত্রে আমরা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে পাহাড়ধসে মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পাই। অনেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করে। এটি কেবল ঝুঁকিপূর্ণই নয়, বেআইনীও বটে। এ বছর প্রশাসন আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ। এরই মধ্যে মতিঝর্ণা ও টাইগারপাস এলাকায় কিছু বসতি উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে। বসতি স্থাপনকারীদের আগেভাগেই নোটিস দেয়া হয়েছে, সরে যাওয়ার জন্য মাইকিংও করা হয়েছে। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও বিশেষ সাড়া মেলেনি। অগত্যা প্রশাসন প্রাণহানি রোধে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। প্রশাসনের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরের ১১টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ছয় শতাধিক বসতি রয়েছে। সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেও পাহাড় ধসে প্রাণহানি অনেকটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনাটি ঘটেছিল আট বছর আগে। ঘুমন্ত অবস্থায় জীবন্ত সমাধি হয়েছিল শিশু ও নারীসহ শতাধিক মানুষের। এর পরই গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই কমিটি পাহাড়ধসের কারণসমূহ চিহ্নিত করার পাশাপাশি ৩৬ দফা সুপারিশসংবলিত একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিল। দুঃখের বিষয়, সেসব সুপারিশের সুরাহা হয়নি। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা। পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুদের অপকর্মের ফল ভোগ করছে নিরীহ মানুষ। কিন্তু এই অবস্থা চিরকাল চলতে পারে না। অবশ্যই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। সে লক্ষ্যে এখনই উদ্যোগ নেয়া দরকার। যাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে অতিবর্ষণে জীবনের ক্ষতি না হয়; পাহাড়ধসে আর কোন মৃত্যু সংবাদ শুনতে না হয়।
×