ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট আলোচনায় ১৪ দলের সিনিয়র মন্ত্রী ও নেতৃবৃন্দ

’১৯ সালের নির্বাচনেও হোয়াইটওয়াশ হবেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৯ জুন ২০১৫

’১৯ সালের নির্বাচনেও হোয়াইটওয়াশ  হবেন খালেদা জিয়া

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ১৪ দলের সিনিয়র মন্ত্রী ও নেতারা বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, আন্দোলন, নির্বাচন ও রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন। তবুও আমরা চাই খালেদা জিয়া রাজনীতির মাঠে থাকুক। আগামী ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে মাঠেই তাঁর সঙ্গে খেলা হবে। ওই নির্বাচনেও খালেদা জিয়া ‘হোয়াইটওয়াশ’ হবেন। আর সমঝোতা অবশ্যই হবে, তা হবে গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে। কোন ঘাতক-ষড়যন্ত্রকারী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে সমঝোতা হবে না। ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচনও হবে না। রবিবার জাতীয় সংসদে প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় শেষ পর্যায়ে অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমাপনি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রায় এক মাস ধরে চলা প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষ হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পাস হবে প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট। বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, অধ্যাপক ডাঃ রুহুল হক, সাবের হোসেন চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম, একেএম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, এম আবদুল লতিফ, মোতাহার হোসেন, কামরুল আশরাফ খান, আবদুল মালেক, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, সাধন চন্দ্র মজুমদার, আখতার জাহান, মনজুরুল আলম লিটন, নজরুল ইসলাম নাহিদ, দিলারা বেগম, ওয়াশিকা আয়শা খান, রেজাউল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান, জেবুন্নেসা আফরোজ, সেলিনা জাহান রিটা, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, আবুল কালাম আজাদ, কাজী নাবিল আহমেদ, বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ ও জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আন্দোলন, নির্বাচন ও রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন। সবকিছু হারিয়ে উনি এখন ইফতার মাহফিলে মোনাজাত করতে গিয়ে বলেছেন, এই সরকারের ওপর গজব নাজিল হোক! কী নীচ উনি, ভাবতেও অবাক লাগে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত উনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু দেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল- উনি পরাজিত হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে শূন্য হাতে ঘরে ফিরে গেলেন। খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করি, এখন কোথায় আমার মায়েরা, বোন, ট্রাক ড্রাইভারেরা। কেন তাদের পুড়িয়ে হত্যা করলেন? এর জবাব উনি কি দেবেন? খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছেন, একদিন তাঁকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সর্বক্ষেত্রে বিস্ময়কর উত্থান ও উন্নয়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ এখন নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অধিকাংশ দেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত রফতানি করে যাচ্ছি। চীন, ভারতসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে কোটামুক্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে তা ভবিষ্যতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। তৃতীয় দেশে পণ্য রফতানিতে উভয় দেশই ভূমি ব্যবহারের সুযোগ পাবে। বিএনপি-জামায়াতের ৯২ দিনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম, বাস-গাড়ি পোড়ানোর মধ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০২১ সালে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব, তখন আমাদের টার্গেট তৈরি পোশাক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় করবে। তিনি তৈরি পোশাকের রফতানি মূল্যের ওপর আরোপিত উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে ‘সহনীয় হারে’ নির্ধারণের অনুরোধ জানান। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রতি পদে পদে ভুল করছেন, আর আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই আপনি রাজনীতির মাঠে থাকুন, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে আপনার সঙ্গে ফাইনাল খেলা হবে। আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না, আপনার সঙ্গে মাঠে খেলেই জিততে চাই। ওই নির্বাচনে আপনাকে হোয়াইটওয়াশ করা হবে। তাই আমরা চাই আপনি সুস্থ থাকুন।” সমঝোতা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সমঝোতা হবে, তবে কোন খুনী, ঘাতকের সঙ্গে নয়। সমঝোতা হবে গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেভাবে কথা বলছেন, তা গণতন্ত্রের ভাষা নয়। উনি বর্তমান সরকারকে জালেম বলেন, কিন্তু খালেদা জিয়ার মতো বড় জালেম এদেশে আর কেউ নেই। আপনার স্বামী জেনারেল জিয়া, এরশাদ সরকার ও আপনি খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, কেউ বিচার করেননি। ২১ বছর আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আমাদের সেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করেছেন, খুনীদের বিচার করেছেন, রায়ও কার্যকর করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্ব নেতারাও স্বীকার করছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গী কী ভাবে দমন করতে হয়, তা শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখতে হবে। তিনি স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দের দাবি জানান। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে বলেন, শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য দরকার ১৬ হাজার কোটি টাকা অথচ দেয়া হয়েছে মাত্র ৪ হাজার কোটি। এ দিয়ে বেতন দিব নাকি অবকাঠামো উন্নয়ন করব? এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ৬ ভাগ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা দরকার। অথচ এবার বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৩ ভাগ। যা সর্বোচ্চ বরাদ্দকৃত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ৮ম। যেখানে ঘানা, কেনিয়ার মতো গরিব দেশে শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয় ৩১ ভাগ, সেখানে আমাদের ব্যয় মাত্র মাত্র ৪ দশমিক ৩ ভাগ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেড়েছে বিগত সময়ের তুলনায প্রায় আড়াই গুণ। বর্তমানে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ কোটি ৫২ লাখ। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলের চেয়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ইসলামের ধ্বজাধারী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার একটি মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণ করেনি, আমরা ১৩শ’ মাদ্রাসায় নতুন বিল্ডিং করে দিয়েছি। বর্তমানে প্রাথমিকে ৯৯ শতাংশ শিশু স্কুলে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল অবরোধ উপেক্ষা করে আমরা পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। তারা গত দুই বছর হরতাল অবরোধসহ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। তাতেও আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে একদিনের জন্যও পিছিয়ে থাকতে হয়নি। সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী তামাকের ওপর কর বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে শুধু তামাকের কারণে এক বছরে আড়াই লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটছে। আমরা পাহাড় ধস, রানা প্লাজা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলি, কিন্তু তামাকের কারণে এত বিশাল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু নিয়ে কিছুৃ বলি না। পুরো বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের দাম সস্তা। তাই তামাকের ওপর অধিক করারোপের মাধ্যমে ব্যবহার কমাতে পারলে অকালমৃত্যু হ্রাস, তামাকজনিত অসুস্থতা-রোগমুক্ত, চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস এবং সরকারের আয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সারাবিশ্বে যেখানেই সন্ত্রাস-জঙ্গী দমন এবং নারীর ক্ষমতায়নের কথা উঠে, সেখানেই বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার নাম আসে। পুরো বিশ্বে সন্ত্রাস দমন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ নেতৃত্বের অবস্থানে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মিথ্যাচার ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরাও তাঁর সঙ্গে নেই। আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সকল মিথ্যাচারের জবাব দেব।
×