ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মজুদ পর্যাপ্ত

ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়ালেও প্রভাব পড়বে না দেশে

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৯ জুন ২০১৫

ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়ালেও প্রভাব পড়বে না দেশে

এম শাহজাহান ॥ ভারত রফতানি মূল্য বাড়ালেও দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। দাম বাড়ার কোন কারণও নেই। এ মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। রোজার শুরুতে পণ্যটির এলসি (ঋণপত্র) ওপেন ও নিষ্পত্তি সন্তোষজনক ছিল। তাই রোজা ও ঈদে পেঁয়াজ বিক্রি হবে স্বাভাবিক দামে। পেঁয়াজের বর্তমান বাজার দর এবং ভারতের রফতানি মূল্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রবিবার সচিবালয়ের নিজ দফতরে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে এভাবেই বলছিলেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশে ১৮-১৯ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। সারাবছরে প্রয়োজন হয় ২২ লাখ টন। আর শুধু রোজায় চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টনের মতো। এ কারণে ভারত সরকার রফতানি মূল্য বাড়ালেও এর তেমন কোন প্রভাব দেশে পড়বে না। শুধু তাই নয়, পেঁয়াজের দাম নিয়ে যাতে কোন রকম পেনিক (অস্থিরতা) সৃষ্টি না হতে পারে সেজন্য মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শ্যামবাজার, মৌলভী বাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে তাই দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না। চাহিদার বড় অংশ ভারত থেকে আমদানি করে পূরণ করা হয়। এবার ভারত রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করেছে এই বাস্তবতায় দেশে দাম বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, বর্তমান রফতানি মূল্যে টনপ্রতি পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ হাজার ২৭ রুপি। ওই হিসেবে প্রতিকেজি পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ২৭-২৮ টাকা। খুচরা পর্যায়ে দেশে এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই দাম বাড়া নিয়ে ভোক্তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। জানা গেছে, রবি মৌসুমে পেঁয়াজের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর প্রভাব অভ্যন্তরীণ বাজারে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় ভারত সরকার রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিটনে ১৭৫ ডলার রফতানি মূল্য বাড়ানো হয়েছে। ন্যূনতম রফতানি মূল্য (এমইপি) আগে ছিল ২৫০ ডলার বা ১৫ হাজার রুপি এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪২৫ ডলার বা ২৭ হাজার ২৭ রুপি। দেশের চাহিদা মেটাতে বরাবরই পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে ও পেঁয়াজ আনা হয়। তবে ভারতে রফতানি মূল্য বাড়লে দেশেও চাপের মুখে পড়ে পেঁয়াজের বাজার। বাণিজ্য সচিব এই সত্য মেনে নিয়ে বলেন, এটা ঠিক ভারতের রফতানি মূল্য বাড়ানোর ফলে পেঁয়াজের বাজার কিছুটা চাপের মুখে পড়বে। তবে অতীতে এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে সরকার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, আশার কথা হলো, পেঁয়াজ বেশি দিন মজুদ রাখা যায় না। আর্দ্র আবহাওয়া এবং বৃষ্টিপাতের সময় পেঁয়াজ পচে যায়। এবার রোজা ও ঈদ বর্ষাকালে হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা মজুদ না করে পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসছেন। এর ফলেও বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে, খুচরা পর্যায়ে এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। ঈদ সামনে রেখে এই পণ্যটির দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোপূর্বে গত বছরের জুন মাসের মাঝামাঝিতে ভারত পেঁয়াজের টনপ্রতি সর্বনিম্ন রফতানি মূল্য ১৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩০০ মার্কিন ডলার করে। এরপর গত বছরের জুলাই মাসে রফতানি মূল্য বাড়িয়ে আবার ৫০০ ডলার নির্ধারণ করে দেশটি। দুই দফা দর বাড়ানোয় ওই সময় বাংলাদেশেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতি ॥ পেঁয়াজের উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে সারাবছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এ বছর এখন পর্যন্ত মজুদ রয়েছে ১৮-১৯ লাখ টন। এছাড়া সারাবছরে আমদানি করা হবে সাড়ে ৮ লাখ টন। শুধু রমজানে চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টন। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে শুধু ভারত থেকে ২০০ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকছে দেশে। ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। আর আমদানির সিংহভাগ আসে ভারত থেকে।
×