ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে উচ্ছেদ

সাতক্ষীরায় গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৮ জুন ২০১৫

সাতক্ষীরায় গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে আছুরা খাতুন নামে এক গৃহবধূকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে তুলে এনে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে বিবাদীপক্ষ। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে সাতক্ষীরা শহরের পলাশ পোলের চেয়ারম্যান পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েক যুবক তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এর আগে সদর থানার এক দারোগা বিবাদীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বামীহারা গৃহবধূকে রাতের মধ্যে সন্তানসহ ঘর ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। এর পর এই হামলা ও নির্যাতন চালানো হয় বলে নির্যাতিত আছুরা খাতুন অভিযোগ করেছেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছুরা খাতুন (৪৮) জানান, গত ১০ মে তার স্বামী ইমান আলী মারা যাওয়ার পর সতীন পুত্র ও তাদের স্ত্রীরা তাকে সন্তানসহ বাড়ি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল। এরই অংশ হিসেবে তারা গোয়াল ঘরের চালটি দা দিয়ে কেটে ফেলে। গত ১৫ জুন তিনি সতীনপুত্র আবু বক্কর ছিদ্দিক, আবুল হোসেন, হিদোলসহ তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশের পর সদর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মাহাবুবর রহমান বিরোধপূর্ণ জমিতে না যেয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিবাদী পক্ষকে নির্দেশ দেন। এরপরও জমি জবরদখল করে পাকাঘর নির্মাণের কাজ চালায় প্রতিপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে আছুরা খাতুন গত ২৩ জুন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি সহকারী উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমানকে ঘটনাস্থলে পাঠান। হাফিজুর রহমান মামলার বাদী আছুরা খাতুনকে রাতের মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে সন্তানসহ অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে চলে যান। এদিকে আছুরা খাতুন শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে তার ভেঙ্গে দেয়া গোয়ালঘরে কাজ করছিলেন। এ সময় মামলার বিবাদী হিদোল, আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ তাদের স্ত্রী ও ছেলেরা তার বাড়িতে এসে পুলিশের কথা মতো কেন বাড়ি ছেড়ে যায়নি তা জানতে চায়। এ সময় তিনি ভয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েন। হিদোল তাকে ধরে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে আনে। পরে হিদোলসহ অন্যরা গামছা দিয়ে তার দু’হাত পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে মাটিতে ফেলে টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে আসে। তাকে একইভাবে হিদোলের বাড়িতে নিয়ে পিলারের সঙ্গে বেঁধে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। পেটিকোট ও ব্লাউজ ছিঁড়ে যৌনাঙ্গে বিষাক্ত গাছের পাতা ঘষে দেয়া হয়। লোহার রড দিয়ে তার ডান কাঁধের হাড়ের সন্ধিস্থল ভেঙ্গে দেয়া হয়। রোজা থাকার পরও কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পানি চাইলে তার মুখে প্রস্রাব করে দেয়ার কথা বলা হয়। রাতের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে না গেলে বা থানা পুলিশ করলে জবাই করার হুমকি দেয়া হয়। তার ছেলে ইয়াছিন খবর পেয়ে মিলনসহ কয়েক স্থানীয় যুবক আছুরাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ বিশ্বজিৎ ম-ল জানান, আছুরার ডান কাঁধের অস্তিসন্ধি ভারি জিনিসের আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া তার বুকে, পিঠে, পায়ে ভারি জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে রক্তাক্ত জখমের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যপারে হিদোল ইসলাম আছুরা বেগমকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা মারা যাওয়ার আগে বাড়িসহ জমি তাদের নামে লিখে দিয়েছেন। তাই ২৫ বছর বাবার সঙ্গে সংসার করলেও আছুরা বেগমের সেখানে থাকার কোন অধিকার নেই। তাবে তার ছেলে ইয়াছিন সাবালক হলে তাকে দেড় শতক জায়গা লিখে দেয়া হবে।
×