ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবদুল হাই

অভিমত ॥ আওয়ামী লীগার তৈরি করতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৮ জুন ২০১৫

অভিমত ॥ আওয়ামী লীগার তৈরি করতে হবে

স্বদেশ রায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন কলামিস্ট নিঃসন্দেহে। শেখ হাসিনার শাসনকে দীর্ঘমেয়াদী করতে তিনি নিবেদিতপ্রাণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে। রাজনৈতিক দলের যে সংজ্ঞা সংবিধানের ১৫২ ধারায় লিপিবদ্ধ আছে সব রাজনৈতিক দল যদি তার সীমানা মেনে রাজনীতি করে তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা না। রাজনৈতিক দল দেশ শাসন করে না, দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে জনগণকে সংগঠিত করে। জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক সাংবিধানিক এ বিধান অলঙ্ঘনীয়, অপরিবর্তনীয়। দলীয়তন্ত্র দেশ শাসন করলে সুশাসন সম্ভব নয়। সব সন্ন্যাসী হয়ে জনসেবায় জীবন বিলিয়ে দেবে এমনটি আশা করার কোন কারণ নেই। ঘটনাচক্রে ’৭০-এর আওয়ামী লীগের উদাহরণ টানা সঠিক হবে না। ’৭০-এর নির্বাচন ছিল রেফারেন্ডাম। আওয়ামী লীগ দলীয় গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় সংগঠনে রূপ নিয়েছিল। খোদ আওয়ামী লীগও তা বুঝে উঠতে পারেনি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ নিজেদের দলীয় গণ্ডিতে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে যা ছিল ইতিহাসের উল্টো যাত্রা। রাষ্ট্র পরিচালনার সাংবিধানিক কাঠামোতে রাজনৈতিক দলের নির্ধারিত কোন ভূমিকা নেই সঙ্গত কারণেই। সংসদীয় পদ্ধতিতে সংসদ হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূল কেন্দ্রবিন্দু, রাজনৈতিক দল নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি ’৯১-এর পর থেকে যে রাজনৈতিক কালচার সৃষ্টি করেছে তাতে দলই দণ্ডমুণ্ডের মালিক, সংসদ আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এ অবস্থায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে কাঠামোগত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে দলীয়তন্ত্রের কাছে গণতন্ত্র পরাজিত হতে বাধ্য। যেভাবে জামায়াতে ইসলামের লোকজন দলে দলে আওয়ামী লীগে ভিড়ছে, শেষপর্যন্ত ধর্তব্য অন্য কোন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বই হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। নির্বাচন কমিশন যেহেতু নিবন্ধকের দায়িত্বে তাই রাজনৈতিক দলের কাঠামোগত নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের জাতীয় কমিটি, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন কমিটি থেকে মহানগর-নগর কমিটি রয়েছে। পেশাজীবী কমিটি, মহিলা কমিটি সবই আছে। প্রয়োজন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন থেকে পরিচালনা নিবন্ধক কর্তৃক রেগুলেট করা। গঠনতন্ত্র মেনে চলতে বাধ্য করা। নিবন্ধিত দল নিবন্ধকের অনুশাসন মানতে বাধ্য, অন্যথায় নিবন্ধন বাতিলের সম্ভাবনা থাকে। সাংবিধানিক সংস্থা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে ক্ষমতাবান হলেই কেবল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠালাভ করতে পারে। বর্তমান ট্রেন্ড যদি বহাল থাকে, আমজনতা যদি আওয়ামী লীগের সদস্য হয়ে যায় তাহলে ক্ষমতার মালিক যে জনগণ তাদের সে অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখন সংবিধান পরিবর্তন করে লিখতে হবে জনগণ নয়, রাজনৈতিক দল সকল ক্ষমতার মালিক। যারা আওয়ামী লীগের সুহৃদ কলাম লেখেন তাদের বুঝতে হবে অপজিশনের অস্তিত্ব না থাকলে গণতন্ত্র বিপদে পড়ে। বিরোধী দল বলতে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বোঝায় না। স্বাধীনতাবিরোধী কোন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকার কথা নয় সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধান মেনেই রাজনৈতিক দল। না মানলে নিবন্ধন বাতিল। এনিয়ে হৈচৈ করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু সংবিধানের আওতায়ই বিরোধী দলের সুদৃঢ় অবস্থান গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। লেখক : প্রাবন্ধিক
×