ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাজেটে বেসরকারী শিক্ষায় ভ্যাট কমানোর চিন্তাভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৮ জুন ২০১৫

বাজেটে বেসরকারী শিক্ষায় ভ্যাট কমানোর চিন্তাভাবনা

এম শাহজাহান ॥ প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম করহারে সংশোধনীসহ বেসরকারী শিক্ষায় ভ্যাট কমানো হতে পারে। রফতানিতে উৎসে করহার না কমানোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে অর্থমন্ত্রী। এছাড়া করহারে বড় ধরনের কোন পরিবর্তন না এনে আগামী ৩০ জুন মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাজেট পাস হচ্ছে। এর আগের দিন সোমবার অর্থবিল পাস হবে জাতীয় সংসদে। যদিও বেসরকারী শিক্ষায় ভ্যাট কমানো, অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম করহার হ্রাস, রফতানিতে উৎসে কর কমানো, মোটরসাইকেলের ওপর প্রস্তাবিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার, মোবাইল সেটের ওপর কর কমানো, তামাকজাত পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি, সমবায় সমিতির ওপর কর নির্ধারণ না করা এবং অনলাইন কেনাবেচায় ভ্যাট প্রত্যাহারের মতো দাবি রয়েছে। তবে বাজেটে বড় ধরনের কোন সংশোধনী আনা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটির জন্য ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে, অন্যান্য সিটিতে ৪ হাজার ও অন্যান্য এলাকায় ৩ হাজার টাকা করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর ন্যূনতম করহার অঞ্চলভিত্তিক নির্বিশেষে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এটি পরিবর্তন করা হচ্ছে। আবারও অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম কর ৫ হাজার, ৪ হাজার ও ৩ হাজার টাকা করা হচ্ছে। সব করদাতার অঞ্চলভিত্তিক অবস্থান নির্বিশেষে ন্যূনতম করের হার ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট দেয়ার পরই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। যাদের ন্যূনতম কর ১ হাজার টাকা ছিল তাদের ক্ষেত্রে চারগুণ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে যাদের ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা ছিল তাদের করের পরিমাণ বেড়েছে সামান্য। অর্থমন্ত্রীর এ প্রস্তাব বৈষম্যমূলক এবং এটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে। এদিকে, বেসরকারী শিক্ষায় ভ্যাট কমানোর দাবি উঠেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শুধু ধনিক শ্রেণী থেকে ছেলেমেয়ে পড়তে আসে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক গরিব মেধাবী ছেলেমেয়েও এখন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। এই বাস্তবতায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীর ওপর ১০ শতাংশ হারে মূসক ধার্য করা হয়েছে। ভ্যাট কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা এখন আন্দোলন করছেন। এছাড়া শিক্ষাবিদরাও সরকারের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করছেন। এ কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষায় ভ্যাট কমানোর বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক উর্ধতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি ভেবে দেখছে সরকার। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর। সরকার চাইলে ভ্যাট কিছুটা কমাতে পারে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভেবেচিন্তে এগোচ্ছে সরকার। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বাজেট পাসের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে বেসরকারী শিক্ষা খাতে ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সমালোচনা করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতি (বেটা)। এদিকে, তৈরি পোশাক রফতানিতে উৎসে কর না বাড়িয়ে আগের হার বহাল রাখতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ। প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক খাতের রফতানির ওপর উৎসে কর শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বৃদ্ধির হার বর্তমান পরিস্থিতিতে রফতানি শিল্পের স্বাভাবিক বিকাশকে দারুণভাবে ব্যাহত করবে বলে মনে করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তবে উৎসে করহার না কমানোর ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, পোশাক রফতানি এখন শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই খাতকে অনেক সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন তাদেরও সরকারকে দেয়ার সময় হয়েছে। উৎসে কর না কমানোর আভাস দিয়ে তিনি বলেন, এটি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। এদিকে, চূড়ান্ত বাজেটে তামাকজাত পণ্যে উচ্চহারে নির্দিষ্ট পরিমাণ (স্পেসিফিক) এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করার সুপারিশ করেছে বেসরকারী সংস্থা এইচডিআরসি, এ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এ্যালায়েন্স (আত্মা) এবং প্রজ্ঞা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তামকজাত পণ্যের ওপর কর যৎসামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে আর অতীতের মতোই বহুজাতিক ও দেশীয় সিগারেট কোম্পানিগুলোকে সুবিধা প্রদান অব্যাহত থাকছে বলে অভিযোগ করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। কর নির্ধারণ সহজতর করার বিপরীতে জটিলতর হয়েছে জানিয়ে তিনি একে তামাকের অপরাজনীতির অনুষঙ্গ বলেও মন্তব্য করেছেন।
×