ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গবেষণা খাতে বরাদ্দ কম

ঢাবির সাড়ে ৪২৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৮ জুন ২০১৫

ঢাবির সাড়ে ৪২৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ গবেষণাখাতে মাত্র এক শতাংশ বরাদ্দ রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সালের জন্য ৪২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার বাজেট পাস হয়েছে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে সিনেট সদস্যবৃন্দের সম্মতিক্রমে প্রস্তাবিত এই বাজেটের অনুমোদন হয়। গত বছরের তুলায় বরাদ্দ কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও প্রস্তাবিত এই বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা অনুন্নয়ন বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ৭২ লাখ টাকা। উন্নয়ন বাজেট বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করলে গবেষণা খাতের বরাদ্দ আরও কম হবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বাড়ানোর নির্দেশনা থাকায় চলতি অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক ব্যয়ভার মেটানো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হতে পারে। সিনেট অধিবেশনে উপাচার্যের বক্তব্যের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দীন প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন। এতে দেখা যায়, বাজেটের ৮৭.২৩ শতাংশ অর্থই আসবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বরাদ্দ থেকে অর্থাৎ সরাসরি সরকারী কোষাগার থেকে আসবে ৩৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে আসবে ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট খরচের ৯ শতাংশ। এরপরও ঘাটতি থেকে যাবে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অথচ পুরো বছরের গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র সাড়ে চার কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ১.০৬ শতাংশ। প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত অর্থবছরে মোট বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে প্রশাসনের আন্তরিক চেষ্টায় বছর শেষে তা কমে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। এ বছর ঘাটতি থাকছে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বরাদ্দকৃত এই অর্থের ৫৮.৮৮ শতাংশ বা ২৫০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে বেতন-ভাতা খাতে। এছাড়া বই পুস্তক, জার্নাল ক্রয়, কেমিক্যাল ও ইকুইপমেন্ট, শিক্ষা সফর সংক্রান্ত, ছাত্রদের পরিবহন প্রভৃতি শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে ১২.৯৯ শতাংশ, পেনশনে ১৬.৪৫ শতাংশ ও সাধারণ কার্যক্রমে ৯.৬৩ শতাংশ ব্যয় হবে। বাজেট অধিবেশনের আলোচনা পর্বে সিনেট সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা ও প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় তারা শিক্ষকদের বেতন কাঠামো প্রয়োজনীয় সংশোধন করে পুনর্নির্ধারণ করার দাবি জানান। এরপর প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সিনেট সদস্যরা অধিবেশন বর্জন করেনি। অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রায় সবাই বক্তব্য প্রদান করেন। সিনেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সম্প্রতি ড. ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্য বিশিষ্ট বেতন ও চাকরি কমিশন-২০১৩-এর সুপারিশের ওপর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সচিব কমিটি অর্থমন্ত্রীর নিকট যে সুপারিশপত্র জমা দিয়েছেন তাতে শিক্ষকদের চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে। সচিব কমিটির সুপারিশপত্রে একদিকে যেমন শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণœ করার মতো প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে অন্যদিকে সচিব কমিটি আরও একধাপ এগিয়ে নিজেদের সুবিধাদি নিশ্চিতের মাধ্যমে অন্যদের বৈষম্য করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের কর্মকা-ে যেখানে সারাদেশ প্রশংসিত সেখানে কিছুসংখ্যক উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা নিজের ভাগ্য নিজেই নির্মাণের উদ্দেশ্য হাসিলে চেষ্টার কারণে বেতন স্কেলের বিষয়টি বিতর্কিত হয়েছে। তারা এ ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজকে সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে তিনি কয়েকটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
×