ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

থাই বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে ৭ হাজার বাংলাদেশী পণ্য

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৬ জুন ২০১৫

থাই বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে ৭ হাজার বাংলাদেশী পণ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থাইল্যান্ডের বাজারে বাংলাদেশের প্রায় ৭ হাজার পণ্য প্রবেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। আর মানবপাচারে জড়িত অবৈধ ট্রলার চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নেবে থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া থাইল্যান্ডে থাকা অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। আর থাইল্যান্ডের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব নরসিত সিনহাসেনি। বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় থাইল্যান্ডের বাজারে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৯৯৮টি পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ধীরে ধীরে এ শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আসবে তৈরি পোশাক, ওষুধ, কৃষিদ্রব্যসহ আরও ১৫টি পণ্য। থাই পররাষ্ট্র সচিব নরসিত সিনহাসেনি বলেন, কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করা গেলে মানবপাচার কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর বিসিআইএমের (বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার) বাইরেও সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় থাইল্যান্ড। এছাড়া বিসিআইএম যখন পুরোপুরি চালু হবে, তখন করিডরভুক্ত দেশগুলোকে আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়া হবে। তখন আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়বে। নরসিত সিনহাসেনি জানান, বাংলাদেশের যেসব পণ্য তার দেশ থাইল্যান্ডের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে, দু’বছর পরপর শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা রিভিউ করা হবে। তখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, কৃষিদ্রব্যসহ ১৫টি পণ্য এ সুবিধার আওতায় আসার সুযোগ পাবে। সাম্প্রতিক মানবপাচার সঙ্কটের বিষয়ে থাই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু। আগামী ২ জুলাই আসিয়ানের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। সে বৈঠকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড এবং জাপানও অংশ নেবে। বৈঠকটিতে অবৈধ অভিবাসন এবং মানবপাচার বন্ধে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে একে অপরকে দোষারোপ না করে এ সঙ্কটের সমাধানেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেন নরসিত সিনহাসেনি। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্মাণ ও মৎস্য ?আহরণ খাতে আমাদের লোক প্রয়োজন। সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে এখন থাইল্যান্ডে থাকা ১৬ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করার বিষয়ে ভাবছে সরকার। ওই ১৬ লাখ অভিবাসীর মধ্যে বাংলাদেশীরাও রয়েছেন। তাদের বৈধ করার প্রক্রিয়া শেষেই লোক নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। নরসিত সিনহাসেনি জানান, এ বছরের শেষ দিকে ঢাকায় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের যৌথ কমিশনের বৈঠক হবে। বৈঠকে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলসহ বেশ কিছু চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হবে। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের রেনাং থেকে বাংলাদেশের মংলা বন্দর পর্যন্ত জাহাজ চলাচলে চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মৎস্য আহরণের আড়ালে যেসব ট্রলার মানবপাচারে জড়িত সেসবের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে থাই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মানবপাচারের মতো কর্মকা-ে জড়িত অবৈধ ট্রলার চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, এই বৈঠকের ফলে দু’দেশের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের পর্যটন, স্বাস্থ্য, শক্তি ও জ্বালানি খাতে থাই বিনিয়োগ বাড়বে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে থাইল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ঢাকা সফর করেন। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিতভাবে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি সমাঝোতা স্মারক সই হয়। সে অনুযায়ী এই প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। পররাষ্ট্র মন্ত্রী-থাইল্যান্ড পররাষ্ট্র সচিব বৈঠক ॥ পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র সচিব নরসিত সিনহাসেনি এক সৌজন্য বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বৈঠক অনুুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে গত ২৯ মে থাইল্যান্ডে মানবপাচার প্রতিরোধ নিয়ে বিশেষ বৈঠক আয়োজনে থাই পররাষ্ট্র সচিবকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী। আগামী নবেম্বর মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড যৌথ কমিশন বৈঠকের বিষয়ে দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়।
×