ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বদলে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র

চার নদীর ভাঙ্গন ॥ কাউখালীতে বাস্তুহারা শত শত পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৬ জুন ২০১৫

চার নদীর ভাঙ্গন ॥ কাউখালীতে বাস্তুহারা শত শত পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, পিরোজপুর, ২৫ জুন ॥ কাউখালীর সন্ধ্যা, গাবখান, কচা ও কালীগঙ্গা নদীর অব্যাহত ভাঙনে কাউখালী উপজেলার বিস্তীর্র্ণ এলাকা বিলীন হযে যাচ্ছে। পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র। উপজেলার গন্ধর্ব, আশোয়া, আমরাজুড়ি, সোনাকুর, সয়না, মেঘপাল, ধাবড়ী, রঘুনাথপুর এলাকায় বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে অর্ধলক্ষ মানুষ। হুমকির মুখে রয়েছে আমরাজুড়ি ফেরিঘাট। বার বার স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে দুই পাড়ের ঘাট। বর্তমান ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙনের তীব্রতার কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে যেকোন মুহূর্তে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাউখালীর চিরাপাড়া-বেকুটিয়া-পাঙ্গাসিয়া-জোলাগাতী-ভা-ারিয়ার চরখালী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সন্ধ্যা ও কঁচা নদীর দুই তীর বিরামহীনভাবে ভাঙলেও প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ আজও নেয়া হয়নি। পুনর্বাসিত করা হয়নি নদী ভাঙ্গা মানুষগুলোর। জেলার কাউখালী উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদী, পাশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিগঙ্গা ও কচা নদীর ভাঙ্গনে উপজেলার মানুষ দিশেহারা। একসময় চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বর্তমান বাংলাদেশে ও ভারতের কলকাতার সঙ্গে নৌপথে ব্যবসা বাণিজ্যের যোগাযোগে জংশন হিসেবে পরিচিত ছিল কাউখালী স্টেশন। জনসাধারণের চলাচলের জন্য স্টিমার সার্ভিসেরও মূল কেন্দ্র ছিল বিধায় উপজেলার পরিচিতি ছিল তৎকালীন পাক-ভারতের সর্বত্র। আমরাজুড়ি ছিল স্বরূপকাঠি, কাউখালী, নাজিরপুর এলাকার সরকারের রাজস্ব বিভাগের প্রধান কেন্দ্র। দত্তেরহাটই ছিল ওইসময় মহকুমার সবচেয়ে বড় ব্যবসা কেন্দ্র। সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গন ওইসব এখন কেবলই স্মৃতি। প্রায় ৫০ বছর ধরে অব্যাহতভাবে এলাকা ভাঙছে। ওই এলাকায় গাবখান নদীর মোহনায় অবস্থিত ফেরিঘাটটির অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ভাঙনের ফলে ফেরি চলাচল বার বার বন্ধ হয়ে যায়। ঘাটের পাশেই অবস্থিত পিরোজপুর জেলার এক সময়ে আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর মাস্টার সামসুল আরেফিনের স্মৃতিবিজরিত আশোয়া গ্রামটি আজ কেবলই স্মৃতি। জেলার অন্যতম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সন্ধ্যা নদীর গর্ভে বিলীন হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সন্ধ্যা তীরের ওইসব বাড়িঘর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার নেই কোন উদ্যোগ। গন্ধর্ব্য জানকি নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে বার বার স্থান পরিবর্তন করা হলেও পুনরায় তা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। তাও যেকোন মুহূর্তে বিলীন হতে পারে। আমড়াজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ লাল গুহ জানান, ওই ইউনিয়নের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ নদী ভাঙনের শিকার। নদী ভাঙ্গা মানুষের জন্য তেমন সরকারী সাহায্য পাওয়া যায় না । সামান্য কয়েকটি পরিবারকে আবাসনে স্থান দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকিরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পাবনায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা থেকে জানান, বর্ষার শুরুতেই পাবনার সুজানগরে পদ্মা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে সুজানগরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে উপজেলার সাতবাড়ীয়া, মানিকহাট ও নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের শতশত ঘরবাড়ি, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলী জমি। ইতোপূর্বে পদ্মার ভাঙনে সুজানগরের মানচিত্র থেকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ওই ৩টি ইউনিয়নের হরিরামপুর, সিংহনগর, বিলমাড়িয়া, মাহমুদপুর, রামকান্তপুর, কেশবপুর, শামিলপুর, ফকিতপুর, সিন্দুরপুর, কন্দর্পপুর, ইন্দ্রজিৎপুর, কাদিরপুর ও চররাজপুর গ্রামসহ হাজার বিঘা ফসলী জমি ও মূল্যবান গাছপালা। পাশাপাশি ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মায় হারিয়ে গেছে মানিকহাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, রাইপুর বাজার ও রাইপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো ওই সকল গ্রামের শত শত পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ বছর বর্ষার শুরুতেই ইউনিয়ন ৩টিতে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
×