ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপ বিভক্তি হবে বিপজ্জনক

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৬ জুন ২০১৫

ইউরোপ বিভক্তি হবে বিপজ্জনক

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপের বিভক্তি হবে ‘বিপজ্জনক’। ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার আগ্রহের আভাস দিতে গিয়ে রানী ঐ মন্তব্য করেন। তিনি একটি শান্তিপূর্ণ মহাদেশকে অনায়াসলব্ধ বলে মেনে না নেয়ার জন্য ব্রিটিশ ও জার্মানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের শীর্ষ বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি এ কথা বলেন। সেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় ইইউর ভবিষ্যত নির্ধারণ হতে পারে। বুধবার বার্লিনে একটি রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় রানী মহাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণে ব্রিটেনের প্রধান ভূমিকার ওপর জোর দেন। ব্রিটেন গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে ভোটদান এড়িয়ে যাকÑ তাঁর এ ইচ্ছা তিনি এবারই সবচেয়ে প্রকাশ্যে ব্যক্ত করলেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল ভোজসভায় যোগ দেন। খবর টেলিগ্রাফ ও গার্ডিয়ানের। রানীর বক্তৃতা বর্তমান সময়ের সঙ্কটের সঙ্গে ঐতিহাসিক ঘটনার উপাদান দিয়ে সাজানো ছিল। তাঁর মন্তব্যকে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ অব্যাহত রাখার পক্ষে একটি সনির্বন্ধ অনুরোধ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মানির সঙ্গে ব্রিটেনের ‘অপরিবর্তনীয়’ বন্ধুত্বের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের এক ভোজসভায় ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্কের সংস্কারবিষয়ক তাঁর পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্তভাবে উপস্থাপনের জন্য আজ ব্রাসেলস যাবেন। রানীর মধ্যস্থতার পর জার্মান প্রেসিডেন্ট জোয়াচিম গাউক থাকা না থাকার গণভোটে ‘হ্যাঁ’ রায় নিশ্চিত করতে সম্ভব সবকিছু করার জন্য ক্যামেরনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ব্রিটেনকে ইউরোপের প্রয়োজন।’ রানী মিসেস মেরকেলের সঙ্গে দিনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করেন। তিনি সরকারীভাবে রাজনীতি নিরপেক্ষ এবং বাকিংহাম প্রাসাদ জোর দিয়েছে যে, ইউরোপকে একটি মহাদেশ বিবেচনা করে তিনি ভাষণ দিয়েছেনÑ একটি রাজনৈতিক সত্তা মনে করে নয়। অবশ্য, ইইউর অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান সঙ্কটের মধ্যে সতর্ক শব্দচয়ন করে তিনি এ ভাষণ দিলেন। এ সপ্তাহের ব্যাসেলস শীর্ষ বৈঠকে ইউরোজোনে গ্রীসের সদস্যপদ অব্যাহত রাখার প্রশ্নটিও প্রাধান্য পাবে। গ্রীক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস আভাস দিয়েছেন যে, জার্মানি গ্রীসকে খেলাপী হওয়ার দিকেও ইউরোজোনের বাইরে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে। তিনি গ্রীসের প্রধান ঋণদাতা ইউরোপীয় কমিশন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলকে তাঁর দেশের কিছু ব্যয় সঙ্কোচ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের জন্য দোষারোপ করেন। জার্মান প্রেসিডেন্টের সরকারী বাসভবন বেলেভু প্রাসাদের ভোজসভায় রানী বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সবসময় তার মহাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল। এমনকি আমাদের প্রধান মনোযোগ বিশ্বের অন্যত্র থাকলেও আমাদের জনগণ ইউরোপে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।’ ‘আমরা আমাদের জীবনে মহাদেশের সবচেয়ে খারাপ সময় যেমন দেখেছি তেমনি শ্রেষ্ঠ সময়টাও দেখেছি। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি কত দ্রুত ভালর দিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। তবে আমরা জানি যুদ্ধোত্তর বিশ্বের সুফল ধরে রাখতে আমাদের অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি ইউরোপের বিভক্তি বিপজ্জনক এবং আমাদের অবশ্যই পশ্চিমের দিকে যেমন, তেমনি পূর্বের দিকেও বিভক্তি ঠেকিয়ে রাখতে হবে।’ ইইউর সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য জার্মানির সঙ্গে ব্রিটেনের বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) পর থেকে যুক্তরাজ্য ‘জার্মানিকে ইউরোপের অত্যন্ত বলিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে গণ্য করতে দৃঢ়সঙ্কল্প... ব্রিটেন ও জার্মানি একত্রে কাজ করে অনেক কিছু অর্জন করেছে। আমি খুবই আস্থাশীল যে, আগামী বছরগুলোতেও আমরা তা অব্যাহত রাখব।’ ইইউর সমর্থনে রাখা রানীর মন্তব্যে স্কটিশ গণভোটের আগে রানীর অনুরূপ হস্তক্ষেপের বিষয়টি ‘প্রতিধ্বনিত হয়েছে’ যখন তিনি স্কটদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভেবে দেখুন।’
×