ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডা. ভগবান ও ধর্মশালা হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৫ জুন ২০১৫

ডা. ভগবান ও ধর্মশালা হাসপাতাল

আজও সেই ভয়ার্ত মুহূর্ত মাঝে মাঝে তাড়া করে ফেরে আমাকে। হ্যাঁ, এইতো বছর তিনেক আগে মায়ের গলব্লাডার অপারেশনের পরের সময়টা আমার কেমন যাচ্ছিলÑ মনে হলে হিম হয়ে আসে আমার রক্তপ্রবাহ। পপুলার ডায়াগনস্টিক হাসপাতালের কেবিনের সামনে করিডোরে বসা আমি। সেইদিন বুঝেছিলাম মানুষ আসলেই কতটা একা! অসহায়! মনে হচ্ছিল আমার মা নন, আমিই রোগী ঐ হাসপাতালের। ভালোয় ভালোয় অপারেশন হলেও গলব্লাডারে জমে ওঠা পাথরটার ম্যালিগন্যান্সি টেস্ট করতে পাঠিয়েও নিস্তার নেই। দুই দিন অপেক্ষা করতে হলো। ৪৮ ঘণ্টা যেন আর ফুরায় না। অবশেষে ম্যালিগন্যান্সির পজেটিভ রিপোর্ট নিয়ে মার মুখোমুখি হতে পারছিলাম না। হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর যিনি অপারেশন করলেন ফাইনাল চেকআপের আগের দিন তাঁকে অনেক অনুরোধ করলাম। তিনি যেন সরাসরি মাকে ম্যালিগন্যান্টের কথাটা না বলেন। যদিও আম্মা এম.এড. পাশ করা একজন শিক্ষিত মানুষ। তাকে কিছু বুঝ দেয়া! ডাক্তার ইবনে সিনা হাসপাতালের একজন ডাক্তারের কাছে রেফার করলেন। আমি তার কাছে যাবার আগে পারিবারিক ফিজিশিয়ানের সাথে আলাপ করলাম। উনি মিরপুর ডেল্টা হাসপাতালে পাঠালেন আমাকে। এর মধ্যে আমার দৈনন্দিন কাজ কোনটাই থেমে নেই। কিন্তু আমি কেবলই তলিয়ে যাচ্ছিলাম। কেবলই মনে হচ্ছিল আমি যে কোন মুহূর্তে পড়ে যাব। ডেলটা হাসপাতালে ডাক্তার সব রিপোর্ট দেখে এক মাস পরের একটা সময় দিলেন রে দেয়ার। এই একমাসের জন্য ওরাল মেডিসিন প্রেসক্রাইব করলেন। হাসপাতাল থেকে বাসা পর্যন্ত আসতে আসতে কত কিছু যে মনে হচ্ছিলÑ আজ আর তা মনে করতে চাই না। তখন আমার মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। শুধু মনে হয়েছিল পৃথিবীর জন্মের মানে কী ? আমি তো জেনে গেছি টেস্টের পরে আর কোন আশা নেই রিপোর্ট উল্টে দেবার। খালাতো বোনের ফোন এলো, ‘আপু খালার শারিরীক অবস্থা বা হাঁটা চলা, খাওয়া-দাওয়া দেখেতো মনে হয় না অমন সিরিয়াস ক্যান্সার জাতীয় কোন রোগ!’ আমার অসহায়ত্বের কথা জানালাম। ডাক্তারের কথার উপরতো কিছু বলার নেই! ওর ডাক্তার স্বামীর সাথে কথা বলতে বললো। ডা. শাহিন যেন দেবদূতের মতো এলেন ঐ চরম দুঃসময়ে। এ কদিন এত বড় বড় ডাক্তারের সঙ্গে কনসাল্ট করলামÑ কেউ এমন সাজেশন দিলেন না! তাদের তুলনায় বয়সে কম একজন তরুণ ডাক্তার আমাকে বললেন যে পপুলারের প্যাথলজি থেকে সøাইড নিয়ে পাশেই আনোয়ারা মেডিকেল সেন্টারে আরেকবার টেস্ট করাতে। যথারীতি তাই করালাম। রেজাল্ট আনার সময় কত হাজারবার সৃস্টিকর্তাকে ডেকেছি জানি না। রিপোর্টটি নিয়ে আনোয়ারার বারান্দায় ছুটে এসে ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা’ পড়তে পড়তে রাস্তার নিয়নের আলোয় মেলে ধরলাম। একবার , দু’বার, তিনবার পড়েও কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না! পপুলারের রিপোর্টের সম্পূর্ণ উল্টো রিপোর্ট সেটা। এই দেশেই বোধ হয় এমনটা সম্ভব! আরেকটু হলে আমিই হার্টফেল করে মরে যাচ্ছিলাম। আর আমার মা? ঐ ক’দিন শুধু বলতেন ‘আমিতো একটুও খারাপ বোধ করছি না।’ ঐ ঘটনার দায়ভার কে নেবে? এদেশ না হয়ে অন্য কোনো দেশ হলে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে সু করে দিত! তবে একটা সান্ত¡না এ দেশে প্রাণহরণকারী ডাক্তার বা হাসপাতালও আছে আবার ডাক্তার ভগবানও আছেন- আছে তাঁর মৃতের মুখে জীবনের আলো ফোটাবার মতো জিয়ন কাঠিস্বরূপ (ধর্মশালা) হাসপাতাল! ধানম-ি, ঢাকা থেকে
×