ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নদী ও সাগরে দূষণ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৪ জুন ২০১৫

নদী ও সাগরে দূষণ

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে শুক্রবার রেলসেতু ভেঙ্গে ফার্নেস তেলবোঝাই ওয়াগন খালে পড়ে যাওয়ার পর তেল দ্রুত অপসারণ করা হচ্ছে না। ফলে জোয়ার-ভাটায় তেল ছড়িয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদী হয়ে সাগরে। নির্বিকার প্রায় রেলওয়ে ও পরিবেশ অধিদফতর। হাজার হাজার লিটার ফার্নেস তেল অপসারণে আধুনিক পদ্ধতি যেমন নেই তেমনি পুরনো পদ্ধতিও কার্যকর করা হচ্ছে না। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয়ের। সামুদ্রিক মাছের প্রজননের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলে তাদের শঙ্কা; খাল, বিল, নদীরও একই হাল হতে যাচ্ছে। দ্রুত অপসারণ করা না গেলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। পানির উপরে যেমন তেল ভাসছে তেমনি ছড়িয়েছে খাল-বিল-নদীতেও। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা রেল কর্তৃপক্ষকে হাঁড়ি-পাতিল দিয়ে তেল তুলে নেয়ার পাশাপাশি বাঁশের চাটাই ও খড়ের বাঁধ দিয়ে ভেসে থাকা তেল অপসারণের পরামর্শ দিয়েছেন। রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, খালে সামান্য তেল পড়েছে। অথচ পানিতে এখনও আনুমানিক ৫০ থেকে ৭০ হাজার লিটার তেল রয়েছে। এই তেল পানির অক্সিজেন ক্ষমতা কমায়। গত বছরের নবেম্বরে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে একটি ফার্নেস তেলের ট্যাঙ্কার ডুবে বিপর্যয় ঘটিয়েছিল। সে সময় বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘসহ পরিবেশবিদরা সুন্দরবন ও এর প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছিল। তখন সুন্দরবন এলাকায় মানুষজন দলবেঁধে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে তেল তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কর্ণফুলীর ক্ষেত্রে সে ধরনের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। মজুরি দিয়ে তেল অপসারণে জনগণকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত রেল কর্তৃপক্ষ নিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি, সাড়াও দেয়নি। ইতোমধ্যে খালের পানি তেলে সয়লাব হয়ে গেছে। তেলের কারণে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে জেলেরা। এমনিতে মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে সরকার দু’মাস সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে। কিন্তু যেভাবে নদী-সাগরে তেল ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে মাছের প্রজননের পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়। ২০১৩ সালে একই রুটের কালুরঘাট ব্রিজসংলগ্ন বোয়ালখালী কদুরখীল এলাকায় লাইনচ্যুত হয়েছিল তিনটি ফার্নেস অয়েল ভর্তি ওয়াগন। এতে খাল ও কর্ণফুলী নদীতে প্রায় ৫৮ হাজার লিটার তেল ছড়িয়ে পড়েছিল। এই দুর্ঘটনার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া গেলে তেল ছড়িয়ে পড়া যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যেত তেমনি ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যেত। প্রতিবারই যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখনই কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। দুর্ঘটনা যে কোন সময় ঘটতে পারে। সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশ ও জনগণ এসব ঘটনার তদন্ত ও অবহেলায় জড়িতদের শাস্তি যেমন চায় তেমনি দুর্ঘটনামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হোক সেই প্রত্যাশাও করে।
×