ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যয় হবে ৪৯ কোটি টাকা

দুর্ঘটনা রোধে রেলের ৩৪৬ লেভেল ক্রসিং নিরাপদ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৩ জুন ২০১৫

দুর্ঘটনা রোধে রেলের ৩৪৬ লেভেল ক্রসিং নিরাপদ করা হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের (ঢাকা-সিলেট ইত্যাদি রুট) ৩৪৬টি লেভেল ক্রসিং নিরাপদ করা হচ্ছে। রেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়। এজন্য ৪৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পা কমিশনে। এটি বাস্তবায়িত হলে হাইওয়ে লেভেল ক্রসিং গেটসমূহে সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন, রেল ও সড়ক উভয় ধরনের ট্রাফিকের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করাসহ রেললাইন ও সড়ক পথে যানবাহন চলাচলের সময় দুর্ঘটনা রোধ করে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ কাজ শেষ হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন ট্রেন চলাচল এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদন পেলে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নে কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৪৩৪টি অনুমোদিত এবং ৮১১টি অনুমোদিত লেভেলক্রসিং গেট রয়েছে। অধিকাংশ গেটে গেটকিপার নেই। সওজ, এলজিইডি, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদ এবং অন্যান্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রাস্তা নির্মাণের সময় অধিকাংশ অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলো নির্মিত হয়েছিল। রেলওয়ে এ্যাক্ট ১৮৯০ এবং রেলওয়ে ম্যানুয়েল অনুসারে অন্য ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক রেলপথ অতিক্রমকারী সড়কসমূহের জন্য লেভেল ক্রসিংগুলো সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের নিকট হতে প্রাপ্ত অর্থে ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের কথা থাকলেও অদ্যাবধি তা করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ সমস্ত লেভেল ক্রসিং যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় এবং প্রয়োজনীয় গেটকিপার না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে ১৮৯টি অনুমোদিত লেভেলক্রসিং দ্রুত মেরামত ও আপগ্রেডেশন এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক গেটকিপার পদায়ন করা প্রয়োজন। তাছাড়া দিন দিন অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংসমূহে যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৫৭টি অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিং অনুমোদিত গেটে রূপান্তর করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সমস্ত গেট উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সড়ক দুঘর্টনা রোধ কল্পে হাইওয়ে লেভেল ক্রসিংগুলোতে সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন বা আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। এসব দিক বিবেচনা করে রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করে। প্রকল্পটির ওপর গত ১৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় যেসব সুপারিশ দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্রকল্পের আওতায় আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে গেটকিপার নিয়োগে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস নির্ধারণ করতে হবে। নতুন রাস্তা বা সড়ক নির্মাণের সময় রেলপথ ক্রসিং করার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে হতে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার ৩৮ জন গেটকিপার নিয়োগ, ৬ হাজার ৪০১ বর্গমিটার ঘুন্টিঘর নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ, লেভেল ক্রসিং গেটসংলগ্ন ২৩ হাজার ৫২০ বর্গমিটার রোড সারফেস মেরামত, ৩৪৬ সেট গেট ব্যারিয়ার স্থাপন, ৯৯৮ দশমিক ৯৬ টন চেক রেল, ৭ হাজার ৫৮০টি বিয়ারিং প্লেট, ১২ হাজার ৮৮৬টি চেক ব্লক, ৬ হাজার ৪৪৩টি চেক বোল্ট, ১৫ হাজার ১৬০টি ডগ স্পাইক, ৩ হাজার ৫৮০টি উডেন সিøপার সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় সিগন্যালিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থবছরভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের চাহিদা হচ্ছেÑ চলতি অর্থবছরে ২৮ লাখ টাকা, আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
×