ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গির্জায় নৃশংস হত্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৩ জুন ২০১৫

গির্জায় নৃশংস হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনা রাজ্যের চার্লসটনের একটি গির্জায় ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ যুবক। নিহতদের মধ্যে গির্জার যাজক রেভারেন্ড ক্লিমেন্ডা পিঙ্কনে ও রাজ্য সিনেটের একজন সদস্য রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গির্জায় স্মরণকালের মধ্যে এটাই বড় ধরনের হামলা। এটি ঐতিহাসিক আফ্রিকান-আমেরিকান গির্জা হিসেবে পরিচিত। ১৮৯১ সালে নির্মিত এই গির্জাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। যখন চার্চে প্রার্থনাবিষয়ক সভা চলছিল তখনই হামলা হয়। তাই কেউ পালিয়ে আসার কোন সুযোগ পায়নি। উল্লেখ্য, স্থানীয়ভাবে চার্লসটন পবিত্র নগরী হিসেবে পরিচিত। এখানে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গির্জা। আটলান্টিকের উপকূলীয় এ নগরে এসে মিশেছে অভিবাসী নানা জাতি। তাই এখানে গড়ে উঠেছে নানা ধর্মবিশ্বাস। এ হামলা ও হত্যাকে ‘ন্যক্কারজনক বর্ণবাদী অপরাধ’ বলছে তদন্তে নামা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের নায়ক হিসেবে এফবিআই ডিলান রুফ নামের একজনকে শনাক্ত করেছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রচেষ্টায় কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদবিরোধী মনোভাবের আনুষ্ঠানিক অবসান হলেও তা একেবারে মুছে যায়নি। বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গদের বিভিন্ন আচরণ ও কার্যকলাপে তা এখনও দেখা যায়। এমন এক সময়ে এই হামলা চালানো হলো যখন আমেরিকায় বর্ণবাদী উত্তেজনা চরমে উঠেছে। মাত্র ক’দিন আগে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর ঘটনায় দাঙ্গা ও জাতিগত বিতর্ক তীব্র হয়ে ওঠেছিল। এতে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম দিচ্ছে ক্ষোভ ও হতাশা। বাল্টিমোরের সাম্প্রতিক দাঙ্গার পেছনে এগুলোই কার্যকারণ হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৪৮ সালে সাদা-কালো বৈষম্যের মানবতাবিরোধী নীতি পাস হয়। ওই আইনের মাধ্যমেও কালো মানুষকে চরম বৈষম্যের শিকারে পরিণত হতে হয়। ষাটের দশকে নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ২৭ বছর কারা ভোগ করেন। ১৯৬০ সালের ২১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিলে বর্ণবাদবিরোধী শান্তি মিছিলে পুলিশের বর্বর হামলা ও নির্বিচার গুলিবর্ষণে ৭০ জন নিহত হয়। এই ঘটনাকে প্রতীকী হিসেবে স্মরণ করে ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২১৪২ ধারা অনুযায়ী ২১ মার্চকে বিশ্ব বর্ণবৈষম্য অবসান দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সারা বিশ্বের সকল মানবপ্রেমী ও মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। চার্লসটনের গির্জায় যে হামলা হয়েছে তা জঘন্য ও নিন্দনীয়। এই ধরনের ঘটনা কোন শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রত্যাশিত নয়, হতে পারে না। হামলার ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগই রোধ করতে পারে এই ধরনের নির্মম ঘটনার সূত্রপাত। তাহলেই বিশ্ব হবে সব মানুষের শান্তির ও সম্প্রীতির।
×