ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ বাগেরহাটের ৩ রাজাকারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ জুন ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ বাগেরহাটের ৩ রাজাকারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার (রি-কল) করেছে ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের কসাই শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরাম হোসেনের পক্ষে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন (আর্গুমেন্ট) শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের সমাপনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য ২৬ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার (রি-কল) করেছে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। জরিমানার ওপর চেম্বার আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশের নথি দাখিল করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন করেন জাফরুল্লাহ। রবিবার সকালে তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এই আবেদন জমা দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাব উজ জামান জানান, ডাঃ জাফরুল্লাহ রবিবার জরিমানা স্থগিত করে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া আদেশ ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। পরে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত করেন। ট্রাইব্যুনালের জরিমানা স্থগিত করে সুপ্রীমকোর্টের চেম্বার বিচারপতির রায়ের কপি রবিবার বেলা ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমা দেন ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা একটি অযৌক্তিক কাজ হয়েছে। স্থগিতাদেশের কাগজ পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোর্টের। কিন্তু ভুল করে এটা পৌঁছানো হয়নি বিধায় ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। আশা করি আদালত এটা প্রত্যাহার করে নেবে।’ এর আগে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, উনি চেম্বার বিচারপতির স্থগিতাদেশের কপি, আইনজীবী সনদ, অবহিতকরণপত্রসহ একটি আবেদন আমাদের দিয়ে গেছেন। আমরা সেগুলো ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়েছি। জাফরুল্লাহর আইনজীবী আখতার ইমাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, আমরা তা প্রত্যাহারের আবেদন করলে তা মঞ্জুর করা হয়। প্রসঙ্গত, জরিমানা নির্ধারিত সময়ে না দেয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ১৮ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। তবে জরিমানা জমা দেয়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালের দেয়া পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশের কার্যকারিতা ৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন আপীল বিভাগের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে জাফরুল্লাহর আবেদনটি আগামী ৫ জুলাই আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়।আপীল বিভাগের জরিমানা স্থগিতের আদেশ ট্রাইব্যুনাল জানে না তাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে ওইদিন জানিয়েছিলেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান। বাগেরহাটের তিন রাজাকার ॥ বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিচারিক কার্যক্রম মঙ্গলবার শেষ হতে পারে। আসামি পক্ষ যুক্তিতর্ক শেষ করেছেন। পাল্টা যুক্তিতর্ক ও আইনী বিষয়ে প্রসিকিউশন পক্ষ মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরবেন। এর পর নিয়মানুসারে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হবে। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। রবিবার আসামি পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন সিরাজ মাস্টারের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আবুল আহসান। ১৭ জুন খান আকরাম হোসেন ও লতিফ তালুকদারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন। অন্যদিকে গত ১৫ ও ১৭ জুন রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও প্রসিকিউটর মোশফেক কবির। অন্যদিকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত সিরাজ-লতিফ-আকরামের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনসহ ৩২ জন সাক্ষী। গত বছরের ৫ নবেম্বর রাজাকার কমান্ডার ‘বাগেরহাটের কসাই’ বলে কুখ্যাত সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে তিনটি করে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের শাঁখারীকাঠি বাজার, রনজিৎপুর, ডাকরা ও কান্দাপাড়া গণহত্যাসহ ৮ শতাধিক মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ। গত বছরের ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ১১ জুন আব্দুল লতিফ তালুকদার, ১৯ জুন আকরাম হোসেন খান ও ২১ জুলাই সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাখাওয়াতসহ ১২ রাজাকার ॥ একাত্তরের মানবাতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য আগামী ২৬ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। রবিবার এক আবেদনের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই দিন নির্ধারণের আদেশ দেন। এর আগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য সময় আবেদনের শুনানি করেন প্রসিকিউটর সুলতানা রেজিয়া চমন। পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ দাখিলের জন্য ২৬ জুলাই দিন নির্ধারণের আদেশ দেন। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাজাকার কমান্ডার সাখাওয়াত ছাড়াও অন্যান্য যে ১১ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে তাঁরা হলেন, মোঃ ইব্রাহিম হোসেন, মোঃ বিল্লাল হোসেন, শেখ মোঃ মজিবুর রহমান, মোঃ আব্দুল আজিম সরদার, মোঃ আজিম সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মোঃ লুৎফর মোড়ল, মোঃ আব্দুল খালেক মোড়ল, মোঃ আকরাম হোসেন, ওজিয়ার মোড়ল এবং মশিয়ার রহমান। এর মধ্যে ৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, মোঃ বিল্লাল হোসেন, মোঃ আকরাম হোসেন, ও ওজিয়ার মোড়ল।
×