ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিজ ভেঙ্গে রেল

ওয়াগন দুর্ঘটনা ॥ কর্ণফুলীতে ছড়িয়ে পড়েছে ৫০ টন ফার্নেস অয়েল

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ জুন ২০১৫

ওয়াগন দুর্ঘটনা ॥ কর্ণফুলীতে ছড়িয়ে পড়েছে  ৫০ টন ফার্নেস অয়েল

বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া থেকে ॥ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার খিতাপচর এলাকায় ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে যাওয়া ট্রেনের ফার্নেস অয়েল কর্ণফুলী নদীতেও ছড়িয়ে পড়েছে। জোয়ার-ভাটার প্রভাবে বোয়ালখালীর হারগেজি খাল হয়ে বিপুল পরিমাণ ফার্নেস অয়েল কর্ণফুলী নদীতে ঢুকে পড়েছে। রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন, রেলের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক। তেল যেন বিপজ্জনক মাত্রায় ছড়াতে না পারে সেজন্য কাজ করছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টিম। এদিকে, রেলমন্ত্রী মজিবুল হক জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, বেঙ্গুরা এলাকায় সেতু ভেঙ্গে তেলবাহী ওয়াগন ডুবে যাওয়ার ঘটনায় তেল যোগাযোগ আবার চালু করতে আরও তিনদিন সময় লাগতে পারে। সেতুর উপরে দুর্ঘটনায় ঘটায় এ সময় লাগছে বলে সংসদে দেয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তিনি। রেলমন্ত্রী যা বললেন ॥ রেলমন্ত্রী মজিবুল হক রবিবার জাতীয় সংসদে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, অস্থায়ী কাঠামো পুনর্নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। রেলপথ পুনর্নির্মাণের পর লাইনচ্যুত ইঞ্জিন এবং ভূমিতে থাকা ওয়াগনগুলো উদ্ধার করা হবে। তবে উদ্ধার কাজ শেষ করে ওই রুটে ট্রেন যোগাযোগ আবার চালু করতে আরও তিনদিন সময় লাগবে। দুর্ঘটনাস্থল সেতুর উপরে হওয়ায় সময় বেশি লাগছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেতুর দুটি এ্যাবটিমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশকিছু দিন ধরেই অস্থায়ী কাঠামোর উপর দিয়েই সীমিত গতিতে ট্রেন চলাচল করছিল। ফার্নেস অয়েল যেন ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য পরিবেশ অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। উদ্ধারকৃত তেল লিটার ৩০ টাকা মূল্যে কেনার ঘোষণা ॥ রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বোয়ালখালী এলাকায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে খালে ছড়িয়ে পড়া তেল ৩০ টাকা মূল্যে ক্রয় করার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর বোয়ালখালী ও পটিয়া সীমান্ত এলাকার ১৫-২০ জন যুবক ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে হারগেজি খাল থেকে ফার্নেস অয়েল সংগ্রহ শুরু করে। ফার্নেস অয়েল পানির সঙ্গে মিশে নদীর খাদ্যচক্র নষ্ট, অক্সিজেন স্বল্পতার সৃষ্টি করে বাস্তুতন্ত্র নষ্টসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতির পাশাপাশি আশপাশের ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফার্নেস অয়েলের কারণে হারগেজি খাল, চানখালী খাল ও কর্ণফুলী নদীতে বিভিন্ন মাছ মারা যাওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনার দুইদিন পর রবিবার সকালে ট্রেনের ওয়াগন উদ্ধার ও ভেঙে যাওয়া ব্রিজ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। রেলের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি মেরামতের কাজ চলছে। সেতু মেরামত হয়ে গেলেই খালে পড়ে যাওয়া ওয়াগন টেনে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতিই রয়েছে। বর্তমানে রেলের নিজস্ব জনবলের পাশাপাশি দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে সেতুর মেরামত কাজ দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে। বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ॥ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ জাফর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বন্দরের একটি টিম অকুস্থলে পরিদর্শন করেছে। তিনি জানান, তেল যা বের হবার তা শুক্রবার রাতেই বের হয়ে গেছে। প্রায় ৫০ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল বেরিয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় জোয়ার ছিল। ভাটার সঙ্গে অধিকাংশ তেলই বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। এখন কিছু ফার্নেস অয়েল লেগে আছে খালের পাড়, গাছ গাছালি এবং বদ্ধ জলাশয়ে। কর্ণফুলীতেও কিছু তেল ভেসে এসেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে নয়। বন্দরের এ কর্মকর্তা বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব বে ক্লিনার থাকলেও সেটি ওইখানে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ খালের গভীরতা খুবই কম। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে কিছু কেমিক্যাল স্প্রে করতে হয়, যা নদী, খাল বা বদ্ধ জলাশয়ে তা করা যায় না। সুন্দরবনের শ্যালা নদীতেও তা ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের দোহাজারি ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের ফার্নেস অয়েলবাহী ট্রেন শুক্রবার দুপুরে বোয়ালখালী উপজেলার বেঙ্গুরা রেলস্টেশন পার হয়ে পটিয়ার ধলঘাট সীমান্তের হারগেজি খালের সাইরারপুল ভেঙে খালে পড়ে যায়। ট্রেনের ৯টি ওয়াগনের মধ্যে দুইটি ও ইঞ্জিনের সিংহভাগ অংশ খালে কাত হয়ে পড়ে। দুটি ওয়াগনের মধ্যে থাকা ৫৩ হাজার ৯২৪ লিটার ফার্নেস অয়েল হারগেজি, চানখালী খাল ও কর্ণফুলী নদীতে বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন হারগেজি খাল হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ফার্নেস অয়েল ভাসার চিত্র দেখেছেন। বোয়ালখালী উপজেলার খিতাপচর গ্রামের কৃষক আবদুল জলিল বলেন, ফার্নেস অয়েলের কারণে তার সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জোয়ার-ভাটার প্রভাবে ফার্নেস অয়েল হারগেজি খালের দু’পাশের ফসলি ক্ষেতে ঢুকে পড়েছে। তেল সংগ্রহ কাজে থাকা বোয়ালখালীর খিতাপচর গ্রামের মোঃ ছোটন বলেন, ৩০ টাকা মূল্যে ফার্নেস অয়েল ক্রয় করার ঘোষণা দেয়ার পর হারগেজি খাল থেকে তেল সংগ্রহ কাজ শুরু করেন। এই তেল সংগ্রহ করতে গিয়ে তার হাত-পায়ে চর্ম রোগের বিভিন্ন উপস্বর্গ দেখা দিয়েছে। রেলওয়ের যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) হারুনুর রশিদ বলেন, খালে পড়ে যাওয়া ট্রেন উদ্ধার কার্যক্রম ও ভেঙে যাওয়া ব্রীজ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রীজ মেরামতের কাজ চলছে। ব্রিজ মেরামতের কাজ শেষ হলে খালে ডুবে যাওয়া ফার্নেস অয়েলবাহী ওয়াগন ও ট্রেনের ইঞ্জিন উদ্ধার করা হবে। উল্লেখ্য, দায়িত্বে অবহেলার কারণে রেলওয়ের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিম ও সিনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী আকতার আহমেদ ফেরদৌসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
×