ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দীর্ঘ ৪ মাসেও উন্মোচিত হয়নি অভিজিত ও বাবু হত্যা রহস্য

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ জুন ২০১৫

দীর্ঘ ৪ মাসেও উন্মোচিত হয়নি অভিজিত ও বাবু হত্যা রহস্য

শংকর কুমার দে ॥ বিগত চার মাসেও ব্লগার ও প্রগতিশীল লেখক অভিজিত ও ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা রহস্য উন্মোচিত হলো না। অভিজিত হত্যাকা-ের পর ৭০টি সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকা-ের সময়ে হাতেনাতে দু’জন ধরা পড়ে। তারপরও দীর্ঘ চার মাসেও ধরা পড়ল না হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত খুনীরা। অন্যরা রয়ে গেছে ধরা- ছোঁয়ার বাইরে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, অভিজিত ও বাবুÑ এই দুই ব্লগার খুনের জন্য জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত বলে দাবি করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। খুনের পর বিগত চার মাস ধরে খুনীরা ধরা না পড়ায় তদন্তও যেন কৃষ্ণগহ্বরে চলে গেছে দীর্ঘসূত্রতায়। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, একের পর এক হত্যাকা-কে জঙ্গীদের সিøপার সেলের জঙ্গীরা জড়িত বলেই তারা ঘন ঘন স্থান বদল করে। যেসব জঙ্গী ধরা পড়ছে তারা খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। জঙ্গীবাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য তারা দিলেও হত্যাকা-গুলোর সঙ্গে কে জড়িত, সেই তথ্য তারা কৌশলেই এড়িয়ে যাচ্ছে। হত্যাকা-গুলো সুপরিকল্পিত হওয়ায় রহস্য উন্মোচনে কিছুটা সময় নিচ্ছে। অভিজিত হত্যা ঘটনার তিনদিন পর ইন্ধনদাতা হিসেবে শফিউর রহমান ফারাবী নামে এক জঙ্গীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাকে অভিজিত হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তাকে রিমান্ডে নিয়ে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা। এরপর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনের বিষয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত ব্লগার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেন গোয়েন্দারা কিন্তু কারা অভিজিত হত্যা মিশনে অংশ নিয়েছিল, সেই তথ্য তার কাছ থেকে পাননি তদন্তকারীরা। তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিজিত হত্যাকা-ে উস্কানি ও জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে চিহ্নিত করেন তারা। এছাড়া বই মেলার ৭০টি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বেশ ক’জন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা গেলেও এখনও কারও হদিস মেলেনি। এ হত্যাকা-ের তদন্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। খুনীদের গ্রেফতারে তাদের কাছ থেকেও প্রযুক্তিগত সহায়তা নেয়া হয়। কিন্তু খুনীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হত্যার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৩ জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীসহ সাতজন রয়েছেন কারাগারে। অন্য ১৬ জনই জামিনে মুক্তির পর গা ঢাকা দিয়েছেন। ব্লগার অভিজিত ও ওয়াশিকুর হত্যাকা-ের পর গ্রেফতারকৃত সকলকেই এর আগেও গ্রেফতার করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তারা জামিনে মুক্তি নিয়ে দুই ব্লগারকে হত্যা করে বলে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। ব্লগার অভিজিত ও ওয়াশিকুর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া শফিউর রহমান ফারাবী ও আরিফুর রহমানকে এর আগেও গ্রেফতার করেছিলেন তারা। গ্রেফতারের আগে তারা হিযবুত তাহরীর ও জেএমবির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে তারা প্রত্যেকেই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটার সময় সময় ব্লগার ও লেখক অভিজিত রায়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মোড় এলাকায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গীরা।
×