ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের সঙ্গে আজ দ্বিতীয় ওয়ানডে

আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ জুন ২০১৫

আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ তাহলে কি ‘কালো পাথরেই’ সব সাফল্যের রহস্য লুকিয়ে আছে? যে পাথর (গ্রানাইটের টুকরা) উইকেটে বিছিয়ে দেয়া হয়, সেই পাথরে বল পড়ে দ্রুতগতিতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সামনে ধেয়ে আসে। অনুশীলনে সেই বলগুলো খেলে প্রতিপক্ষ বোলারদের দ্রুতগতির বলকেও পাত্তা দেন না তামিম, সৌম্য, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, নাসিররা। ঠিক যেমনটি ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও হয়েছে। উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহিত শর্মাদের বলকে কিছুই মনে করেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। আজ বেলা ৩টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও কি এমনই ঘটবে? বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেন না। তা তার কথাবার্তাতেই বোঝা যাচ্ছে। বলেছেন, ‘আমরা সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’ যখন কোচ সিরিজ জয়ের কথা বলছেন, তখন খবর এসে পড়লÑ আবারও তিন ফরমেটেই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের জান-বাংলাদেশের প্রাণ, সাকিব আল হাসান। প্রথম ওয়ানডেতে ভারত যে ৭৯ রানে হারল, বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকা বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন সাকিবই। করেছেন ৫২ রান। এরপর বল হাতেও ২ উইকেট নিয়েছেন। সেখানেই ওয়ানডেতে হারানো আসন আবারও ফিরে পেতে যাচ্ছেন সাকিব। এ বিষয়টি সাকিবকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে। তাতে আরও ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে প্রথম বোলার হিসেবে ২০০ উইকেটও শিকার করে নিতে পারেন। আসলে এখন দলের যে অবস্থা প্রত্যেক ক্রিকেটারই আত্মবিশ্বাসী হয়ে আছেন। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে সিরিজ জয়ের সামনে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতে নিতে চান দলের ক্রিকেটাররাও। স্বপ্নে এখন সিরিজ জয়। সেই সিরিজ জয় আবার আজই হয়ে গেলে একটি রেকর্ডও গড়বে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পর টানা ১০ ম্যাচে জয় তুলে নেবে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৫টি, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩টি ও ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জয়ে দেশের মাটিতে টানা ৯ ম্যাচে জয় হয়ে গেছে বাংলাদেশের। এখন আরেকটি জয় মিললে ২০০০-২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ২০১৫ সালে যে নিউজিল্যান্ড দেশের মাটিতে টানা ১০ ম্যাচে জিতেছে, সেই রেকর্ডে ভাগ বসাবে বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশের সামনে সেই রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানি থাকবে। শুধু কী বাংলাদেশ এই রেকর্ডই গড়বে, আজ জিতলে সিরিজ জয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও খেলা নিশ্চিত করে নেবে। এ বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮ নম্বরের মধ্যে থাকলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা যাবে। বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডেতে জেতায় এখন র‌্যাঙ্কিংয়ের ৭ নম্বরে উঠে গেছে। সিরিজের বাকি থাকা আর ২ ওয়ানডের মধ্যে যে কোন একটি জিতলে ৭ নম্বরে থাকা নিশ্চিত হয়ে যাবে এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলাও নিশ্চিত হয়ে থাকবে। যদি ভারতের বিপক্ষে আর কোন ম্যাচে জয় নাও হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডে রয়েছে, তার মধ্যে ১টি ওয়ানডেতে জিতলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশ আজকের ম্যাচটি জিতেই ২০০০, ২০০২, ২০০৪ ও ২০০৬ সালের পর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সম্ভাবনা নিশ্চিত করে নিতে চায়। বাংলাদেশ যখন জয়ের চিন্তায় বিভোর, তখন ভারতও জিতে সিরিজে সমতায় ফিরতে চায়। এজন্য দুপুরে অনুশীলন করতে এসে সবার আগে পিচ দেখতে লেগে পড়েন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভালভাবে উইকেটকে বুঝতে চান। কিন্তু সঠিকভাবে কী বুঝতে পারলেন ধোনি? চার পেসার তকমায় যে প্রথম ওয়ানডেতে হিমশিম খেয়েছে ভারত ব্যাটসম্যানরা, আজও কি সেইরকম কিছু ঘটতে পারে না? বাংলাদেশ এর আগে ৫৮টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। জিতেছে ১৭টি সিরিজে। আজ যদি ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে জেতা হয়, তাহলে ১৮তম ওয়ানডে সিরিজ জেতা হবে। রোহিত শর্মা অবশ্য বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, তাদের যে শক্তি, প্রথম ওয়ানডেতে যে ভুলগুলো হয়েছে তা শুধরে নিয়ে সিরিজে ফিরবেন এবং সিরিজটিও শেষপর্যন্ত জিতে নেবেন। তবে একটি বিষয় কিন্তু কোনভাবেই বাংলাদেশ-ভারত সিরিজে দূর হচ্ছে না। সেটি কী? বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তগুলোর ম্যাচটি বারবারই ফিরে আসছে। শনিবার যেমন রোহিতকে জিজ্ঞেসই করা হলো রুবেলের সেই ‘নো’ বলটি নিয়ে। যেটিতে রোহিত আউট হয়েও আম্পায়ারদের সুবাদে বেঁচে যান। এরপর শতকও করে ফেলেন। কিন্তু রোহিত এমন ভাব করলেন, যেন কিছুই মনে নেই। বলে দিয়েছেন, ‘কিসের নো বল? কোন নো বল?’ অবশ্য বাংলাদেশ জেতায় মহাআনন্দে আছেন দেশের মানুষ, ক্রিকেটপ্রেমীরা; কিন্তু মুস্তাফিজকে ধোনির ধাক্কা মারার বিষয়টি যেন কোনভাবেই কেউই ভুলতে পারছেন না। আবার যখন বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে, ধোনি ও ভারত দলের ম্যানেজমেন্টের চাপেই মুস্তাফিজকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, তখন এ নিয়ে আরও উত্তেজনা যেন কাজ করছে। সৌরভ গাঙ্গুলির মতো কিংবদন্তিও শেষ পর্যন্ত ধোনির সমর্থন করেছেন। এখন এমন একটা অবস্থা হয়েছে, প্রথম ওয়ানডেতে ধোনিকে দ্রুত সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়েও যেন মন ভরছে না। প্রথম ওয়ানডে হারানোতে বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নেয়া গেছে। এখন দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ওয়ানডের যে কোন একটিতে ভারতকে হারিয়ে সিরিজ জিতে ধোনির এমন আচরণের জবাবও যেন দিয়ে দিতে চায় বাংলাদেশ। এর সঙ্গে ভারতের যে ক্রিকেট শাসনের ধরন, ধোনি দোষ করেও মুস্তাফিজের শাস্তি হওয়া, এসব অহমিকারও জবাব দিতে চায় বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই জবাব পেয়েও যেতে পারে ভারত। আর বাংলাদেশের সিরিজ জয়ও হয়ে যেতে পারে।
×