ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনেক তোড়জোড়ের মধ্যে আদালতে খালেদা, নানা হাস্যরস

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ জুন ২০১৫

অনেক তোড়জোড়ের মধ্যে আদালতে খালেদা, নানা হাস্যরস

আরাফাত মুন্না ॥ খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন। তাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তোড়জোড় ঢাকার পলাশী মোড় থেকে বকশীবাজার এলাকায়। খালেদা জিয়ার বাসা থেকে আদালত পর্যন্ত পুরো রাস্তাজুড়েও তোড়জোড়ের কমতি ছিল না। কোথাও কোথাও খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়ার আদালতে আসাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার অনেক নাটকীয় ঘটনাও ঘটেছে। সকাল ১০টা বেজে ২৫ মিনিট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াকিটকিতে শোনা যাচ্ছে খালেদা জিয়ার অবস্থান। ওয়াকিটকিতে বলা হলো ঢাকা মেডিক্যাল পার হয়েছেন খালেদা জিয়া। মুহূর্তেই বেড়ে গেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। ১০টা বেজে ২৭ মিনিট। থমকে গেল পলাশী মোড় (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাই ওভারের প্রবেশ মুখ)। খালেদা জিয়ার আসার পথ ছাড়া বাকি সব পথ বন্ধ করে দেয়া হলো। পলাশী মোড় থেকে বকশীবাজার গাড়ি রাস্তায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না কাউকেই। ১০টা বেজে ৩৩ মিনিট ডজন খানেক গাড়ির বহর নিয়ে খালেদা জিয়া পৌঁছলেন পলাশী মোড়ে। সঙ্গে গাড়িবহর ঘিরে ছিল ২ থেকে তিন শ’ নেতাকর্মী। তাদের মুখে সেøাগান শুধু একটাই খালেদা...জিয়া...। খালেদার গাড়িবহর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে প্রবেশ করতে পারলেও আটকে দেয়া হয় নেতাকর্মীদের। ১০টা বেজে ৩৫ মিনিট। আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকলেন খালেদা জিয়া। আগে থেকেই অবস্থান নেয়া বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতাকর্র্মীরা স্বাগত জানালেন খালেদা জিয়াকে। ক্রিম রংয়ের শাড়ি পরে সেই চির চেনা মেকআপ নিয়েই গাড়ি থেকে নামলেন তিনি। তাকে স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাহসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়াসহ অনেক বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতা। গাড়ি থেকে নেমে খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং আদালতে প্রবেশ করেন। আদালতে শুনানিতে খালেদার আইনজীবীদের অনেক কথাই জন্ম দিয়েছে হাস্যরসের। ১০টা ৩৭ মিনিটে শুনানি শুরু হলে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দাঁড়ান। তিনি প্রথমেই পূর্বে থেকে জমা দেয়া সময় আবেদনের ওপর বক্তব্য রাখেন। পরে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল এ সময় আবেদনের জোরালো বিরোধিতা করেন। এরপর শুনানি করতে আসেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। খন্দকার মাহবুব হোসেনকে আদালত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদকে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জেরা করতে বলেন। বার বার জেরা এড়িয়ে যেতে নানাভাবে যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকেন খন্দকার মাহবুব। এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ঠিক আছে আপনারা তাহলে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জেরা করুন। এ মামলায়ও জেরার জন্য সময় চান খন্দকার মাহবুব। তবে আদালত কোনভাবেই তার এই আবদার রাখতে পারছিলেন না। আদালতেরও একই কথা জেরা করুন। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী বলেন, ইউরঅনার আমার মক্কেল তো এ মামলায় কোন টাকা পয়সা বা ফিস দেননি। আমাকে এ মামলায় এঙ্গেজ করেননি। আমি কি করে জেরা করি। এ সময় পাশে আসামির কাঠগড়ার সামনে বসা খালেদা জিয়া মুচকি হাসেন। এজলাসে থাকা আইনজীবী, সাংবাদিক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও হেসে উঠেন। এ সময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল দাঁড়িয়ে বলেন, ইউরঅনার খন্দকার মাহবুব হোসেন অনেক অভিজ্ঞ। উনি আমার স্যার। আমরা স্যারের বক্তব্য শুনতে চাই। স্যারের কাছ থেকে শিখতে চাই। পরে আদালতের নির্দেশে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বাদী হারুন অর রশিদকে আংশিক জেরা করেন খন্দকার মাহবুব। আংশিক জেরা শেষ হলে আসে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের পালা। তারিখ দীর্ঘ করতেও খালেদার আইনজীবীরা নানা যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকেন। তারা ঈদ-উল-ফিতরের পরে তারিখ নেয়ার জন্য বার বার আর্জি জানাতে থাকেন। আদালত রোজার মধ্যেই তারিখ রাখতে চান। এ সময় খালেদার আইনজীবীরা রোজার মধ্যে খালেদা জিয়ার অনেক ইফতার পার্টি ও ওমরা পালনের বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন। এবার আদালত আবারও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য জানতে চান। এ সময় মোশারফ হোসেন কাজল দাঁড়িয়ে রোজার মধ্যেই সময় রাখার জন্য বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকেন। এ সময় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ইউরঅনার কাজল সাহেব অনেক সিনিয়র পিপি। সেই ’৯৬তে উনি পিপি হয়েছেন। আমি বলছি, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে কাজল সাহেবকেই পিপি রাখার জন্য সুপারিশ করব। এ সময় আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারও বলেন, আমাকেও বিচারক রাখার জন্য বইলেন। জবাবে খোকন বলেন, সময়ে অনেক কিছুই তো বদলে যায়, এমনও তো হতে পারে ওই সময় হয়ত আপনি হাইকোর্টের বিচারক থাকতে পারেন। এ সময় আবারও পুরো এজলাসজুড়ে হাস্যরস সৃষ্টি হয়। খালেদা জিয়াও মুচকি হাসেন। পরে আগামী ২৩ জুলাই এ দুই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে বৃহস্পতিবারের মতো আদালত মুলতবি করেন।
×