ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৯ জুন ২০১৫

মাহে রমজান

মানব জাতির জন্য রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে আবারও ফিরে এলো মাহে রমজান। ইসলামের পাঁচটি রোকন বা স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। মহান আল্লাহতায়ালা প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-সবল সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ বা বাধ্যতামূলক করেছেন। পবিত্র কোরানের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : ‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার।’ পরিশুদ্ধতা, খোদাভীতি অর্জন, ত্যাগ ও কৃচ্ছ্র সাধনের মাস এই মাহে রমজান। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরান নাজিল হয়েছে এ মাসেই। তাই, সবদিক থেকে মুসলমানদের কাছে মাসটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। রোজা মানুষকে আত্মশুদ্ধি, পবিত্রতা, ধৈর্য, সহনশীলতা ও ত্যাগের শিক্ষা দেয়। সৎ, সুন্দর ও ন্যায়নিষ্ঠভাবে জীবনযাপনের জন্য রোজার মাস হচ্ছে অনুশীলনের মাস। এ মাসে মুসলমানগণ তাদের দেহ ও আত্মা পরিশুদ্ধ করার সুযোগ পান। তাই, এ মাসের শিক্ষা বছরের বাকি সময়ে কাজে লাগাতে হবে। দীর্ঘ এক মাস সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, ভোগবিলাস, অন্যায় ও অসৎ কর্ম হতে বিরত থেকে মু’মিনগণ রোজা পালন করে আত্মশুদ্ধি ও কৃচ্ছ্র সাধনে ব্রতী হন। কেবল পানাহার ও ভোগবিলাস থেকেই বিরত থাকা সিয়ামের শর্ত নয়, প্রকৃত সিয়াম সাধনা হচ্ছে সকল প্রকার পাপাচার, অন্যায়-অপকর্ম থেকে বিরত থাকা। এ শিক্ষা শুধু রোজার মাসের জন্যই নয়, বছরব্যাপী রোজার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের সমাজে অনেকের মধ্যে রোজা রাখা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন রোজা রাখলে শরীর অসুস্থ হবে, উপোস থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইত্যাদি। অথচ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য রোজা খুবই উপকারী। সিয়ামের মাধ্যমে আত্মিক ও নৈতিক উন্নতি ঘটে। লোভ-লালসা, হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে রোজার মূল চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। রোজা সংযমের বার্তা নিয়ে এলেও কিছু কিছু অসৎ ব্যবসায়ী এ সময় হয়ে ওঠে অসংযমী, বেপরোয়া। অনেকক্ষেত্রে কোন কারণ ছাড়াই তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন কোন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা যেন এই মাসের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে। এটা রমজানের পবিত্রতা ও শিক্ষার পরিপন্থী। রমজানে বিশেষ করে রাজধানীতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। এ বছর রমজান শুরুর আগেই এই সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। অবশ্য যানজট কমাতে সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে জনগণ স্বস্তি পাবে। সেই সঙ্গে তারাবির নামাজের সময়ও যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুত থাকে সেটিও নিশ্চিত করা জরুরী। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারে রোজায় দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নাগরিক জীবনের সমস্যাগুলো সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এই প্রত্যাশা সবার।
×