ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পেশাদারিত্বের অভাবই মঞ্চনাটকের প্রতিবন্ধকতা ॥ আতাউর রহমান

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৮ জুন ২০১৫

পেশাদারিত্বের অভাবই মঞ্চনাটকের প্রতিবন্ধকতা ॥ আতাউর রহমান

নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক আতাউর রহমান। দেশীয় সংস্কৃতির প্রচার এবং প্রসার যার সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা। তাঁর নির্দেশিত নাটকগুলোতে রয়েছে আঙ্গিক ও প্রেক্ষাপটের বহুমাতৃক বৈচিত্র্য। নাটকে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ‘মঞ্চসারথী’ উপাধী। দেশের গুণী এই শিল্পী আজ ৭৫ এ পা রাখছেন। তাঁর ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আজ সন্ধ্যা ৭ টায় মঞ্চস্থ হবে পালাকার প্রযোজিত নাটক ‘নারীগণ’। মঞ্চ নাটক এবং সমসাময়িক প্রসঙ্গে চির সবুজ এই শিল্পীর সঙ্গে কথা হয়। আপনার জন্মদিনকে ঘিরে বিশেষ নাট্য প্রদর্শনী হচ্ছে অনুভূতি কেমন? আতাউর রহমান : আমার ছোট বেলায় জন্মদিন উদযাপন করা হতো না। নাটক নিয়ে কিছু কাজ করেছি বলেই সবাই আমার জন্মদিনকে উদযাপন করে। আমার ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে নাট্যোৎসবও হয়েছে। এবার স্বল্প পরিসরে করছে নাট্যসংগঠন পালাকার। সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘নারীগণ’ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছি আমি। আমার খুব ভাল লাগছে আমাকে নিয়ে এমন একটা আয়োজন করছে পালাকার। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনার রচনা ও নির্দেশনায় ভিন্নতা কি? আতাউর রহমান : আমি বৈচিত্র্য সন্ধানী মানুষ। কোন বিশেষ ধারায় নয়, আমি যে কোন ধারায় মানুষকে আমোদিত করার চেষ্টা করি। বিশেষ কোন ধারায় শিল্প সাহিত্য লালন করি না। আমি পুরনো নিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকার লোক নই। কিন্তু পুরনোকে নতুনরূপে উপস্থাপন করা চেষ্টা করি। বিশেষ করে নাটক বাছাইটাকে আমি খুব চিন্তা করে করি। আমি মনে করি না যে শিল্প কখনও কার্বন কপি হবে। শিল্পের মধ্যে দিয়ে জীবনের গভীরতর সত্যকে প্রকাশ করতে চাই। শিল্প যদি মানুষকে না ভাবায়, তাৎক্ষণিকভাবে ভুলে যায় তাহলে আমি সেটার মধ্যে কোন ক্রিয়েটিভিটি দেখিনা। আপনি যদি আমার নির্দেশিত ‘রুদ্র রবি ও জালিয়ানওয়ালাবাগ’,‘বাংলার মাটি বাংলার জল’,‘নারীগণ’ প্রভৃতি নাটক দেখেন তাহলে এ বিষয়টাকে অনুধাবন করতে পারবেন। প্রতিটা দেশের নাটকের একটা আলাদা ধারা তৈরি হওয়া উচিত : আপনি কী মনে করেন? আতাউর রহমান : আমি সেটা মনে করি না। এ ধরনের চিন্তার বাস্তবায়ন চিত্রশিল্পে হতে পারে কিন্তু নাট্যাঙ্গনে বিশেষ ধারা তৈরি হতে এসব চিন্তাকে আমি কখনই লালন করি না। আমি মনে করি এটা এক ধরনের মৌলবাদী ধারণা। আমি শিল্পের বিচিত্র ধারায় বিশ্বাস করি। পুরনোকে নতুনরূপে উপস্থাপন করবো কিন্তু গ-ির সীমারেখায় নয়। অন্য দেশের আলোকে বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের অবস্থান কোথায়? আতাউর রহমান : বিশ্বের প্রায় সব দেশের নাটক দেখেছি, আমাদের নাটক নিয়ে বিদেশের অনেক দেশে গিয়েছি। আমার মনে হয়েছে অবকাঠামোর দিক থেকে হয়ত আমরা মঞ্চ নাটক নির্মাণে পিছিয়ে আছি, কিন্তু আমরা অভিনয়ের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। শিল্পকলা একাডেমিতে নাটকের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুবিধা কিছুটা পেয়েছি, যা আগে ছিল না। আমরা নিষ্ঠা ও থিয়েটারের প্রতি ভালবাসা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নাটক অনেক সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি। সরকারী অনুদান পেলে আমাদের নাটক আরও এগিয়ে যাবে। মঞ্চ নাটকের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কি? আতাউর রহমান : অনেক ভালবাসা ও শ্রম দিয়ে তৈরি নাটকগুলো আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও নগরের দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষের দেখতে পারে না। মীরপুর, গুলশান, উত্তরার মানুষজন আসতে পারে সেখানে নাট্যশালা নির্মাণ হলে আমাদের দেশের নাট্যচর্চা আরও বেগবান হতে পারে। এছাড়াও ভাল নাট্যকার, নির্দেশক ও নাটকে পেশাদারিত্বের অভাবই এদেশের মঞ্চনাটকের প্রধান প্রতিবন্ধক। সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত। অভিনয় জীবনে আপনার প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির কথা বলুন আতাউর রহমান : আমার কোন অপ্রাপ্তি নেই। আমার প্রত্যাশার চেয়ে পেয়েছি অনেক বেশি। জীবনে হিংসা আছে, দ্বন্দ্ব আছে, ঝগড়া-ফ্যাসাদ এসব থাকে। এসব না হলে জীবনে পরিপূর্ণতা আসে না। আমি একুশে পদকসহ নানা সম্মাননা পেয়েছি আর কী পাওয়ার থাকতে পারে আমার জীবনে। আমি নোবেল পাওয়ার জন্য কাজ করিনি যে তার জন্য অতৃপ্ততা প্রকাশ করব। তবে আরও বেশি লিখতে পারতাম কিন্তু সময়ের স্বল্পতায় পারিনি। বয়সের ভারে অভিনয় হয়ত বেশি করতে পারব না। বাকি জীবনটা লেখা লেখিতেই সময় ব্যয় করতে চাই। নতুন নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতাদের প্রতি আপনার বক্তব্য কি? আতাউর রহমান : চোখ দেখার জন্য, কান শোনার জন্য কিন্তু মনটা আলাদা এক বিষয়। আমার মনে হয় নতুন যারা আসছে তাদের মনকে আরও শানিত করা উচিত। জানার কোন শেষ নেই। সেই জানাটা যদি আনন্দের হয় তাহলে জীবন সুন্দর হয়। এখন ইন্টারনেট এসেছে, এটা আমাদের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। নতুনরা যেন এর থেকে প্রযোজনীয় জিনিসটা নিতে শেখে।-গৌতম পা-ে
×