ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় ভাস্কর নভেরা আহমেদ স্মরণসভা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ জুন ২০১৫

শিল্পকলায় ভাস্কর নভেরা আহমেদ স্মরণসভা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্যের পথিকৃৎ নভেরা আহমেদ। দেশের জাতীয় শহীদ মিনারের নকশা প্রণয়নে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে গিয়েছিলেন জীবনের বড় একটা অংশ। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সবার চোখের আড়ালে থেকেই বিদায় নিলেন জীবন থেকেও। গত ৬ মে, ৭৬ বছর বয়সে প্যারিসের শঁন পামেল গ্রামে চূড়ান্ত অন্তরালেই চলে গেলেন এ শিল্পী। উপমহাদেশের স্কাল্পচারের আধুনিকতম এ শিল্পীর বর্ণিল ও কর্মময় জীবন নিয়ে এক স্মরণসভা হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায়। একাডেমি আয়োজিত এ স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই, শিল্পসমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, স্থপতি রবিউল হুসাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় এক অনুষ্ঠান। পরে প্রয়াত নভেরার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। সভায় বক্তারা বলেন, শিল্পকলার ইতিহাসে আধুনিক ভাস্কর্য শিল্পের যাত্রা নভেরা আহমেদের হাত ধরেই। তিনি এর পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ মিনারের নকশা প্রণয়নে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁর শিল্পকর্ম ছিল প্রথাবহির্ভূত। কালের পরিক্রমায় প্রমাণিত তিনি ছিলেন আধুনিক মনস্ক শিল্পী। সমসাময়িক মানুষের যাতনা তাঁর শিল্পকর্মে বিদ্যমান। লেখাপড়া বিদেশে হলেও তাঁর শিল্প কর্মে উঠে এসেছে এ দেশের কৃষক ও সংস্কৃতির কথা। নিজের সময়ের চেয়ে অগ্রবর্তী শিল্পসাধনা ও অজ্ঞাতবাসের জীবন তাঁকে পরিণত করে রেখেছিল জীবন্ত কিংবদন্তীতে। তাঁর শিল্পের গভীরে ডুবেও তাঁর জীবনের রহস্য ভেদ করতে চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ। দেশের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখুক, তাঁর বেঁচে থাকাই আমাদের দেশের শিল্পাঙ্গনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি প্রবাসে যোগাযোগহীন থেকেও এদেশের ভাস্কর্যশিল্পে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। শুধু চিত্রকলা নয়, তাঁর প্রভাব চিত্রকলা ছাপিয়ে অন্যান্য শিল্পেও অনুভূত হয়েছে। তাঁর শিল্পকর্ম ও জীবন এখনও সাধারণ মানুষের মধ্যে সমান বিস্ময়ের। নভেরা আহমেদ দেশে ফেরেন ১৯৫৬ সালে। সে সময় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ চলছিল। ভাস্কর হামিদুর রহমানের সঙ্গে নভেরা আহমেদ শহীদ মিনারের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পরে অজ্ঞাত কারণে শহীদ মিনারের নির্মাতা হিসেবে তাঁর নামটি সরকারী কাগজে বাদ পড়ে যায়। আলোচনা শেষে ভাস্কর নভেরার শিল্পকর্মের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন হয়। শেষ হলো শিল্প সমালোচনা কর্মশালা ॥ আলোচনা ও সনদপত্র বিতরণের মধ্যদিয়ে শেষ হলো শিল্প সমালোচনা কর্মশালা। সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসারে নানা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ২৬ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত চারুকলা, ফটোগ্রাফি, নাটক, চলচ্চিত্র, আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্য, লোক সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা ও বানান রীতি, নন্দনতত্ত্ব, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়কে সন্নিবেশিত করে প্রচার মাধ্যমের সংস্কৃতি প্রতিবেদক ও সংস্কৃতি কর্মীদের অংশগ্রহণে ‘শিল্প সমালোচনা’ বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করে। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে বুধবার দুপুরে আয়োজিত এ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পসমালোচক মঈনউদ্দীন খালেদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্পের রূপ বদলায়, সেই সঙ্গে বদল ঘটে যাপিত জীবনের। তাই শিল্প সমালোচনা করতে হলে সে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত থাকতে হবে। সংস্কৃতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, দেশের পরিবর্তনশীল সংস্কৃতির সঙ্গে সংস্কৃতি সাংবাদিকদের একটা বিশেষ অবদান আছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আমরা নিজেদের কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে চেষ্টা করি। তারপরও বলছি জীবন বোধের আরও গভীরে প্রবেশ করতে হবে। এতে করে জীবন ও শিল্প উপকৃত হবে। কারণ শিল্প জীবনের বাইরের কিছু নয়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্পসমালোচক মঈনুদ্দিন খালেদ বলেন, একটি ভাল মানের রিপোর্ট শিল্প সমালোচনা থেকে কম নয়। এর এ কাজটি করতে গিয়ে ইতিহাসের গতিপথ সম্পর্কে অবগত হতে হয়। জানতে হয় কিভাবে সৌন্দর্যের রূপ বদলায়। আর সেই পতিপথ জানতে আমাদের লোক সংস্কৃতির রূপরেখার দিকে দাবিত হতে পারি। প্রাথমিক আলোচনা শেষে ১২ দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কবিতীর্থ দৌলতপুরে নার্গিস-নজরুলের ৯৪তম বিবাহবার্ষিকী উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে নার্গিস-নজরুল বিদ্যা নিকেতন মাঠে মঙ্গলবার আলোচনা সভা শেষে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নাটক পরিবেশন করা হয়। শচীন দেব বর্মণের বাড়িতে সুরের অগ্নিবীণা ॥ দীর্ঘ ৯০ বছর পর সুরের মূর্ছনায় উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব শচীনদেব বর্মণের স্মরণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার রাতে নগরীর দক্ষিণ চর্থা নবাব বাড়ি এলাকায় শচীন-কবি নজরুলের স্মৃতি বিজরিত বাড়িতে ওই আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সহধর্মিণী মেহেরুন্নেছা বাহার।
×