ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমি মাদকাসক্ত ছিলাম-এমপি পুত্রের বক্তব্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ জুন ২০১৫

আমি মাদকাসক্ত ছিলাম-এমপি পুত্রের বক্তব্য

মশিউর রহমান খান ॥ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছেলে বখতিয়ার আলম রনির সঙ্গে সাক্ষাত করলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পিনু খান। সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটি থেকে ২টা ২৫ মিনিট সময় পর্যন্ত তিনি কারাভ্যন্তরে অবস্থান করেন। কারাবিধি অনুযায়ী বিচারাধীন কোন বন্দীর সঙ্গে মাসে একবার আধাঘণ্টা সময় কথা বলার সুযোগ পান। কারাগারে এসময় পিনু খানের ভাই, ভাইয়ের বউ, আরও এক মহিলা সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতপ্রার্থীরা একই সঙ্গে রনির সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া ড্রাইভার ইমরান ফকিরও দেখা করে। কারাসূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। কারাসূত্র জানায়, ছেলেকে দেখতে এসে মা ও ছেলে উভয়ই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছেলের প্রিয় বরফি, কেক, মিষ্টি ও শুকনা খাবারের সঙ্গে সঙ্গে ঠা-া পানি নিয়ে আসেন। এসময় ছেলের সঙ্গে গ্রেফতারকৃত তার গাড়ির ড্রাইভার ইমরান ফকিরও দেখা করেন। দীর্ঘ সময় তিনি ও তার ভাই, ভাইয়ের বউ মিলে রনি ও ড্রাইভার ইমরানের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে একান্তে অনুচ্চস্বরে আলাপ করেন। কারাসূত্র জানায়, কথা বলার মাঝে মাঝেই রনি চিৎকার করতে থাকেন। বলতে থাকেন আমি অসুস্থ, আমার চিকিৎসা করানো দরকার। মা আমার সারা শরীরজুড়ে মাদকের প্রভাব পড়েছে। আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা কর। এসময় পিনু খান তাকে বলেন, তোমার চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করছি, চিন্তা কর না। কিন্তু রনি কোন কথা না শুনে তাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা নিতে মা ও মামার কাছে বার বার অনুরোধ করেন। অঝরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, দুর্ঘটনার সময় অমি মাদকাসক্ত ছিলাম। আমি তেমন কিছুই বলতে পারব না। রনি তার শরীরে যে মাদকের কারণে অনেক প্রভাব পড়েছে তা মা ও সাক্ষাত প্রার্থীদের গায়ের টি শার্ট খুলে দেখাতে থাকেন। উচ্চৈস্বরে বলতে থাকেন আমার গায়ের সকল রগে মাদকের প্রভাব পড়েছে। উন্নত চিকিৎসা না করালে আমি মারা যাব। কারাসূত্র জানায়, পিনু খান তার ছেলেকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দিলেও ছেলে তা মানতে রাজি হয়নি। তখন উপস্থিত একজনের কাছে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কারা অধিদফতরে সম্প্রতি চিঠি এসেছে যে, কোন বন্দীকে বারডেম হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া যাবে না। এর পর পিনু খান ছেলে রনিকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল হাসপাতালের প্রিজন্স এনেক্সে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথা জানালে রনি কিছুটা আশ্বস্ত হন। অপর একটি সূত্র জানায়, রনি দেশের বিভিন্ন পত্রিকা বা মিডিয়ায় তার সম্পর্কে কি কি আলোচনা হচ্ছে বা লেখা হচ্ছে জানতে চাইলে পিনু খান বলেন, দেশের প্রায় সকল পত্রিকায় তার সম্পর্কে নানা খারাপ কথা বলা হচ্ছে। এ সময় রনি বলতে থাকে, ঘটনার সময় আমি মাদকাসক্ত ছিলাম তাই কখন কি ঘটেছে তা আমি কিছুই বলতে পারব না। এ সময় একজন সাক্ষাতপ্রার্থী বলেন যে, কয়েকটি পত্রিকায় অনেক বেশি খারাপ কথা বলছেন যা তোমার কর্মকা- বা চরিত্রের সঙ্গে কোন মিল নেই। সাক্ষাতপ্রার্থীরা রনিকে এ বিষয়ে না ভাবতে পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য, বখতিয়ার আলম রনি বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মেডিক্যাল হাসপাতাল ১ এ ভর্তি রয়েছে। আর ড্রাইভার ইমরান ফকিরকে যমুনা-৪ এ রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল রাত ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে গুলিতে এক অটোরিকশা চালক এবং এক রিকশাচালক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহত রিকশাচালক আব্দুল হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ঘটনার দুদিন পর থানায় যে মামলা করেছেন, তাতে বলা হয়, একটি মাইক্রোবাস থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হলে তার ছেলে ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী মারা যান। পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সাদা মাইক্রোবাস নয়, সেটি ছিল কালো রঙের একটি প্রাডো গাড়ি এবং ওই গাড়িতে পিনু খানের ছেলে রনিসহ কয়েকজন ছিলেন। তদন্তে রনির সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর গত ৩১ মে তাকে এবং তার গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ঘটনার দিন রনি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি থেকে গুলিবর্ষণ করেন বলে তার গাড়িচালক ইমরান আদালতে জবানবন্দীতে বলেছেন।
×