ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি বিঘিœত ফতুল্লা টেস্ট ড্র, জিততে না পারায় র‌্যাঙ্কিংয়ে পতন ভারতের (তিন থেকে চার নম্বরে)

ব্যাটিং দৈন্য- ফলোঅন লজ্জা মুশফিকদের

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৫ জুন ২০১৫

ব্যাটিং দৈন্য- ফলোঅন লজ্জা মুশফিকদের

মিথুন আশরাফ ॥ অবশেষে বৃষ্টির সুবাদে ড্রই হলো বাংলাদেশ-ভারত ফতুল্লা টেস্ট। তবে এ ড্রতেই কাঁপল বাংলাদেশ। চতুর্থদিনে এক সেশনের কিছু কম সময়, পঞ্চমদিনে শেষ দুই সেশন খেলল মুশফিকবাহিনী, তাতে ফলোঅনেও পড়ল। যদি বৃষ্টির বাধা না থাকত, শেষ দুইদিন খেলা হলে যে হারের শঙ্কাই ছিল; সেই প্রমাণই মিলল। শেষ পর্যন্ত ভারত যে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৬২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করল, এর জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের একের পর এক ভুল শটে ২৫৬ রানের বেশি করতে পারল না। ইমরুল কায়েস (৭২) শুধু অর্ধশতক করতে পারলেন। ৭ রানের জন্য ফলোঅনে পড়ল বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে কোন উইকেট না হারিয়ে ২৩ রান করল মুশফিকবাহিনী। খেলাও ড্র হয়ে শেষ হয়ে গেল। বাংলাদেশের দুই ইনিংস ব্যাটিং দেখে কী মনে হলো? ম্যাচটিতে যদি বৃষ্টির বাধা না থাকত, জিতত ভারতই। তাতে ভারতের আফসোস থাকতেই পারে। আফসোস হয়েছেও। আগেরদিনই শিখর ধাওয়ান বলে দিয়েছিলেন, ‘খুবই হতাশ লাগছে।’ হতাশা এতটাই ঘিরে ধরেছিল যে ধাওয়ানকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো পঞ্চমদিনে কী চান? বলেছিলেন, ‘বৃষ্টি।’ সেই হতাশা বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়ার পর আরও বেড়ে যাওয়ার কথাই। আরেকটি দিন পেলে যে বাংলাদেশকে হারিয়েও দিতে পারত ভারত। তবে বৃষ্টির বাধায় যেটুকু খেলা হয়েছে, তাতে ভারত যে বাংলাদেশকে হারাতে পারত, সেই প্রমাণ দিতে চেয়েছে; তা দিয়েছেও। বাংলাদেশকে যে মাত্র দুই সেশনের কিছু সময়ের মধ্যেই ফলোঅনে ফেলেছে, তাতে আসলে এ টেস্ট ড্র হলেও, ভারত জয়ের দাবি করতেও পারে। প্রথম ইনিংসে তৃতীয় দিনে ভারত যে শিখর ধাওয়ানের ১৭৩, মুরলি বিজয়ের ১৫০ ও আজিঙ্কেয়া রাহানের ৯৮ রানে ৪৬২ রান করেছিল, সেখান থেকেই ইনিংস ঘোষণা করেছিল। তাতে বাংলাদেশের সামনে ফলোঅন এড়াতেই ২৬৩ রান লাগত। চতুর্থদিন বাংলাদেশ খেলতে নেমে প্রথম সেশন শেষ হওয়ার কিছু সময় আগে ৩ উইকেটে ১১১ রান করে। তামিম, মুমিনুল, মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যানকে হারিয়েই বিপাকে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। যেই ইমরুল-সাকিব মিলে খেলতে শুরু করেন, এরপর যে বৃষ্টি শুরু হয়, আর থামেনি। শেষে এ অবস্থাতেই চতুর্থদিন শেষ হয়। পঞ্চমদিন যে অবস্থা দেখা গেছে, তাতে অশ্বিন ও হরভজন মিলে যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছিলেন, খেলা হলে চতুর্থদিনেই না বাংলাদেশকে ফলোঅনে পড়ে আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামতে হতো। সেই সম্ভাবনা উড়িয়েও দেয়া যায়নি। কিন্তু প্রথম সেশনের পর বৃষ্টির জন্য আর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিংই করতে নামতে পারলেন না। তখন ফলোঅন এড়াতে বাকি ছিল আরও ১৫২ রান। চতুর্থদিনে ৫৯ রান করা ইমরুলের সঙ্গে পঞ্চমদিনে সাকিব ব্যাট হাতে নামেন। চতুর্থদিন শেষে ৩৫১ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। পঞ্চমদিনে ব্যাটসম্যানরা যেন টেস্ট নয়, ওয়ানডে খেলতে শুরু করে দেন। খালি ‘ওলট-পালট’ শট খেলতে থাকেন। আর টপাটপ আউট হতে থাকেন। মুষলধারে বৃষ্টির জন্য প্রথম সেশন খেলাই হয়নি। যখন খেলা শুরু হলো, কী যে ‘যাচ্ছেতাই’ ব্যাটিং করতে থাকেন। ফলোঅন এড়ানোই প্রধান কাজ। তা এড়াতে গিয়ে ১৫২ রানই ৭ ব্যাটসম্যান মিলে করতে পারলেন না! তাও আবার দিনের দ্বিতীয় সেশন (প্রথম সেশন খেলা হয়নি) শেষে তৃতীয় সেশনের কিছু সময় খেলতেই অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে আরও ৪ উইকেট হারিয়ে আগেরদিনের সঙ্গে আরও ১০৮ রান যোগ করে বাংলাদেশ। এ সেশনটিতে অহেতুক সব শট খেলতে গিয়ে দেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০০০ রান করা সাকিব (৯), ইমরুল (৭২), সৌম্য সরকার (৩৭) ও শুভগত হোম (৯) আউট হয়ে গেলেন। তখনও ফলোঅন এড়াতে ৪৪ রান দরকার ছিল। হাতে ছিল ৩ উইকেট এবং পুরো একটি সেশন। লিটন কুমার দাস অভিষেক টেস্টেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু ৪৪ রান করতেই দলের ২৩২ রানের সময় আউট হয়ে গেলেন। এরপর থাকলেন তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ শহীদ ও জুবায়ের হোসেন। এ বোলারদেরই এখন ফলোঅন এড়াতে হবে। যে কোন দুইটি উইকেট ফলোঅন এড়াতে যে ৩১ রান বাকি ছিল, তার আগে আউট হয়ে গেলেই আবার ব্যাটিংয়ে নামতে হবে বাংলাদেশকে। এবং হাতে থাকা সময়ে যদিও ‘অলৌকিক’ কিছু না ঘটলে ম্যাচ ড্র’ই হবে নিশ্চিতই হয়ে যায় সবাই, এরপরও ফলোঅন যদি এ কম সময়ের মধ্যেই হতে হয়; তাহলে আর হারতে কী বাকি থাকে। এমন যখন আলোচনা চতুর্দিকে, ঠিক তখনই কিছুটা রান স্কোরবোর্ডে যুক্ত হতেই তুলে মারতে গিয়ে ২৪৬ রানে শহীদ (৬) ও ২৫৬ রানে জুবায়ের (০) আউট হয়ে যান। ফলোঅনই পড়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়তেই খুশিতে বাকবাকুম হয়ে যান ভারত ক্রিকেটাররা। বৃষ্টি তাদের জয় কেড়ে নিয়েছে। তবে তারা যে বোঝাতে পেরেছেন, জয় তাদেরই হতো; এটিতেই যেন স্বস্তি পেয়েছেন কোহলিরা। তাই তো বাংলাদেশকে অলআউট করার পর মাঠ ছাড়তে ছাড়তে ভারত ক্রিকেটাররা একে অপরের সঙ্গে খুনসুটি করতে থাকেন। সবচেয়ে বেশি আনন্দ করতে দেখা যায় রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে। একাই ৫ উইকেট নিয়ে যে বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামান। হরভজন সিং’ও কম যাননি। দুই বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে ৩ উইকেট শিকার করেছেন। ধাওয়ান আগেরদিন বলেছিলেন, যেভাবেই হোক, যতটুকু সময়ই মিলবে, আমরা শেষ চেষ্টা করতে থাকব। তা ভারত করলও। বাংলাদেশকে আবারও ব্যাটিংয়ে পাঠাল। বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যেতেই জানা যায়, খেলা শেষ হতে ৩০ ওভার আছে। বোঝাই যাচ্ছিল, ভারত এ সময়ের মধ্যেও কিছু করার চেষ্টা করবে। কিন্তু যখন কোহলিবাহিনী দেখলেন ১৫ ওভার খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ, ২৩ রানও করে ফেলেছে, কিন্তু কোন উইকেট পড়েনি। তখন আর কীই বা করার থাকে। সমঝোতায় এসে খেলা শেষ করতেই হলো। খেলা শেষ হলো। ম্যাচ ড্র’ও হলো। তবে এ ড্রতে ঠিকই কাঁপল বাংলাদেশ।
×